Just In
ওয়ার্ল্ড ব্রেস্ট ফিডিং উইক: নিচে নামতে নামতে আর কত নামবো আমরা!
ওয়াল্ড ব্যাংকের ডেটার দিকে নজর ফেরালেই দেখতে পাবেন আমাদের দেশে প্রতি ১০০০ শিশু জন্মালে ৪৮-৫০ জন মারা যায়।
এই সপ্তাহটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময়ই হয়তো ব্রেস্ট ফিডিং নিয়ে কিছুটা হলেও সরকার সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করবেন, যা আমাদের দেশে বরাবরই একটা উপেক্ষিত বিষয়। তাই বলেই না এই হারে বাচ্চাদের মৃত্যু বাড়ছে, বেড়েই চলেছে। তবু সরকার যেন চোখে ঠুলি পরে বসে আছে। তাদের যেন এদিকে নজর ফেরানোর কোনও তাগিদই নেই। কিন্তু এমনটা চলতে পারে না। কারণ বিশ্ব মানচিত্রে আমাদের দেশকে যদি বাস্তবিকই "সুপার পাওয়ার" হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্টিত করতে হয়, তাহলে অর্থনৈতিক এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উন্নতির পাশাপাশি সামাজিক দিকেও নাজর দিতে হবে, না হলে বিপদ, খুব বিপদ!
ওয়াল্ড ব্যাংকের ডেটার দিকে নজর ফেরালেই দেখতে পাবেন আমাদের দেশে প্রতি ১০০০ শিশু জন্মালে ৪৮-৫০ জন মারা যায়। আর এক্ষেত্রে ভারতের স্থান আফগানিস্থান এবং পাকিস্থানের পরেই। জানেন কি এত সংখ্যক বাচ্চা প্রতি বছর মারা যাওয়ার পিছনে কী কারণ দায়ি? অনেক কারণ এক্ষেত্রে দায়ি, যার মধ্যে অন্যতম হল পর্যাপ্ত পরিমাণ মায়ের দুধ না খাওয়ানো। আসলে মায়ের দুধ হল বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করা প্রথম ভ্যাকসিন, যা মস্তিষ্কের গঠনের পাশাপাশি নবজাতককে একাধিক রোগের হাত থেকে বাঁচাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, নানা কারণে এখন মায়েরা তাদের বাচ্চাদের সেই অমৃত খাওয়ানোর সময়ই পাচ্ছেন না। ফলে অকালে ঝরে যাচ্ছে কোচি প্রাণগুলি।
মৃত্যু এবং অর্থনীতি:
আমাদের দেশে গত কয়েক বছরে অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশ অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু জানা আছে কি এই উন্নতির মাঝেও প্রতি বছর প্রায় ১৪ বিলিয়ান ডলারের করে ক্ষতি হচ্ছে ভারতের। এত পরিমাণ টাকার ক্ষতি কীভাবে হচ্ছে জানেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বছর এত সংখ্যক বাচ্চা মারা যাওয়ার সরাসরি প্রভাব পরছে দেশের অর্থনীতির উপর। একবার ভাবুন এই বাচ্চারা যদি বড় হয়ে উঠত, তাহলে যে অর্থনৈতিক গ্রোথ হত, তা কতটা সম-দ্ধ করত আমাদের দেশকে। তবু সবাই চুপ! কতদিন চুপ থাকে সরকার সেটাই দেখার। কারণ খাতায় কলমে আমরা এগোচ্ছি ঠিকই, কিন্তু অজান্তে পিছিয়েও যাচ্ছি অনেকটা। তাই না!
প্রথম ঘন্টাতেই হেরে যাচ্ছি আমরা:
একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে বাচ্চার জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে তাকে যদি মায়ের দুধ খাওয়া হয়, তাহলে তাদের শারীরিক জটিলতা হওয়ার এবং কালক্রমে মৃত্যু মুখে ঢলে পরার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, রিপোর্ট বলছে এদেশে প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রেই বাচ্চারা জন্ম নেওয়া ১ ঘন্টার মধ্যে সেই মহৌষধির সন্ধান পাচ্ছে না। ফলে জীবন যুদ্ধে হার মানতে হচ্ছে তাদের। প্রসঙ্গত, আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিটি নবজাতককে জন্মের প্রথম ঘন্টায় এবং তার পর থেকে টানা ৬ মাস যদি মায়ের দুধ খাওয়ানো যেত, তাহলে ডায়ারিয়া এবং নিউমোনিয়ার কারণে মারা যাওয়া বাচ্চাদের মধ্যে প্রায় ৯৯,৪৯৯ জনের প্রাণ হয়তো বাঁচনো সম্ভব হত।
কিন্তু কেন এমন পরিস্থিত:
আমাদের দেশটা কিন্তু একেবারেই শহর কেন্দ্রিক নয়। যে পরিমাণ মানুষ আর্বান এরিয়ায় থাকেন, তার থেকে অনেক বেশি মানুষ রুরাল এরিয়ার ধুলো মাখা পথে হেঁটে থাকেন। আর ঠিক এখানেই ভারত নামক উন্নয়নশীল দেশটা পিছিয়ে পরছে। কারণ শহরের মায়েরা তো ব্রেস্টফিডিং নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই তথ্য পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আজও গ্রামের মায়েরা জানেনই না মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে। তবে বিষয়টা এখানেই শেষ হয়ে যায় না। একাধিক কেস স্টাডি অনুসারে শহুরে মায়েরাও বাচ্চা প্রসবের পর সময়ের অভাবে নিজ নিজ কাজে ফিরতে বাধ্য হন, ফলে টানা ৬ মাস বাচ্চাকে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানো বেশিরভাগের পক্ষেই সম্ভব হয় না। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। দিনের পর দিন মৃত্যুহার বাড়ছে আর আমরা সবাই তা থেকে মুখ ফিরিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে চলেছি।
দ্বিতীয় স্থান তবু লজ্জা নেই:
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফের প্রকাশ করা একটি রিপোর্ট অনুসারে সারা বিশ্বের মধ্যে চিন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো এবং নাইজেরিয়াতে প্রতি বছর সবথেকে বেশি সংখ্যক বাচ্চা মারা যাচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাতৃদুগ্ধ না পাওয়ার কারণে। আর এত সংখ্যক মৃত্যুর কারণে বছর পিছু অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১১৯ বিলিয়ান ডলার।
অন্ধকার থেকে আলোর দিকে:
এমন ভযঙ্কর পরিস্থিতি থেকে সহজেই বেরিয়ে আসা কিন্তু সম্ভব। শুধু চাই পর্যাপ্ত সচেতনতা এবং সরকারি উদ্যোগ। এক্ষেত্রে দুটি বিষয মাথা রাখবেন, তাহলেই দেখবেন একটাও বাচ্চা মারা যাচ্ছে না আমাদের দেশে। কী সেই দুটি বিষয়? এক, জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে বাচ্চাকে ব্রেস্ট ফিড করাবেন এবং তার পর থেকে টানা ৬ মাস মায়ের দুধ খাওয়াতে ভুলবেন না। এই দুটি নিয়ম মানলেই দেখবেন অন্ধকার কাটবে। আলোর উদয় হবেই হবে!