Just In
ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক ডে: আপনার মস্তিষ্কের ভিতরে অনবরত বোমা ফাটছে না তো?
বারুদের ঢিপির উপর বসে দেশলাই নিয়ে খেলা করাটা বেজায় বেকামি, এটা মানেন তো? তাহলে সাবধান হচ্ছেন না কেন বলুন তো? আপনি কি পরিবার-পরিজনদের ফেলে রেখে কম বয়সেই স্বর্গলাভ করতে চাইছেন?
বারুদের ঢিপির উপর বসে দেশলাই নিয়ে খেলা করাটা বেজায় বেকামি, এটা মানেন তো? তাহলে সাবধান হচ্ছেন না কেন বলুন তো? আপনি কি পরিবার-পরিজনদের ফেলে রেখে কম বয়সেই স্বর্গলাভ করতে চাইছেন?
কেন এমন কথা বলছি তাই ভাবছেন তো? দাঁড়ান খোলসা করে বলি তাহলে। সম্প্রতি প্রকাশিত বেশ কয়েকটি রিপোর্ট অনুসারে আমাদের দেশের প্রায় ২০০ মিলিয়ান নাগরিক উচ্চ রক্তচাপের শিকার, যাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই বয়স ৪০-এর নিচে। আর এমনটা হওয়ার পিছনে একদিকে যেমন অনিয়ন্ত্রিত জীবন অনেকাংশে দায়ি থাকে, তেমনি প্রয়োজনীয় সাবধনতা অবলম্বন করতে অনিহাকেও এক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ি করা যেতে পারে। প্রসঙ্গত, এত কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে বাড়ছে স্ট্রোকের আশঙ্কাও। আসলে শিরা এবং ধমনীতে যখন রক্তের চাপ বাড়তে শুরু করে, তখন তাতে ছোট ছোট ব্লাস্ট হতে থাকে। এমনটা যদি ব্রেনের অন্দরে হয়, তাহলে মারাত্মক ভয়ের বিষয় কিন্তু। কারণ সেক্ষেত্রে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, স্ট্রোকের কারণে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা যেমন থাকে, তেমনি মৃত্যু ভয়ও কিছু কম থাকে না। তাই সময় থাকতে সাবধান হতে হবে বন্ধুরা। না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ! এবার বুঝেছেন তো কেন বলেছিলাম যে আমরা বারুদের উপর বসে দেশলাই নিয়ে খেলা করছি।
এখন প্রশ্ন হল সাবধান হবেন কিভাবে, তাই তো? বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে বেশ কিছু সহজ নিয়ম মেনে চলতে খুব সহজেই স্ট্রোকের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই কম বয়সেই যদি যম রাজের সঙ্গে দেখা করতে না চান, তাহলে দয়া করে বাকি প্রবন্ধে একবার চোখ রাখুন, তাহলেই দেখবেন ব্রেন স্ট্রোকের মার থেকে বাঁচতে কোনও সমস্যাই হবে না।
সাধারণত যে যে নিয়মগুলি মেনে চললে স্ট্রোকের আশঙ্কা কমে, সেগুলি হল...
১. দিনে কম করে ২০ মিনিট হাঁটুন:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ২০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করলে স্ট্রোকের আশঙ্কা প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়। আর যদি জোড়ে হাঁটতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই। কারণ সেক্ষেত্রে মস্তিষ্কের অন্দরে কোনও অঘটন ঘটার সম্ভাবনা প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আসলে হাঁটার সময় আমাদের সারা শরীরে রক্তের প্রবাহে উন্নতি ঘটে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি স্ট্রোকের আশঙ্কাও কমে।
২. মানসিক অবসাদ থেকে সাবধান:
সম্প্রতি প্রায় ৮০ হাজার মানুষের উপর হওয়া একটা গবেষণায় দেখা গেছে মানসিক অবসাদের সঙ্গে স্ট্রোকের সরাসরি যোগ রয়েছে। আসলে এমনটা দেখা গেছে যারা ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হন, তাদের নানা কারণে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগে হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর এই দুটি রোগ কোনও না কোনও সময় স্ট্রেককে ডেকে আনে। তাই যখনই বুঝবেন মনটা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখনই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। প্রয়োজনে সাইকিয়াট্রিস্টের সাহায্য নিতে ভুলবেন না যেন!
৩. সাত ঘন্টার ঘুম বেজায় জরুরি:
হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা সাত ঘন্টার কম সময় ঘুমতে অভ্যস্ত তাদের স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা সাধারণ মানুষদের তুলনায় প্রায় ৬৩ শতাংশ বেশি থাকে। আসলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে ব্রেন আরাম করার সুযোগ পায় না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মস্তিষ্কের অন্দরে গোলযোগ হতে শুরু করে, যা ব্রেন স্ট্রোকের পথকে প্রশস্ত করে।
৪. মাইগ্রেন থেকে সাবধান:
একেবারে ঠিক শুনেছেন! মাইগ্রেনের মতো মাথা যন্ত্রণার সঙ্গেও স্ট্রোকের যোগ রয়েছে। কেমন সেই যোগ? বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে মাইগ্রেন পেনের সময় যদি চোখের সামনে আলোর বিচ্ছুরণ বা কালো কালো স্পটের মতো দেখা যায়, তাহলে বেশি সাবধান হতে হবে। কারণ এমন ধরণের লক্ষণ দেখা গেলে স্ট্রোকের আশঙ্কা থাকে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
৫. রাঙা আলু খাওয়া শুরু করুন:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেলে স্ট্রোকের আশঙ্কা প্রায় ২০ শতাংশ কমে যায়। সেই কারণেই তো প্রতিদিনের ডায়েটে রাঙা আলুর পাশাপাশি কলা খাওয়ারও পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। কারণ এই দুটি খাবারেই প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম মজুত থাকে, যা মস্তিষ্ককে নানাবিধ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৬. রাগ কমান:
কথায় কথায় যারা কুব রেগে যান, তাদের ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই আপনি যদি গরম মস্তিষ্কের হন, তাহলে সাবধান হওয়ার সময় এসে গেছে বন্ধু। কারণ এখনই যদি নিজের রাগের উপর লাগাম পরাতে না পারেন, তাহলে কিন্তু বেজায় বিপদ!