Just In
ফ্রেন্ডশিপ ডে ২০১৭: হাত ছেড়ো না বন্ধু!
২০১০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্র অনুসারে যে মানুষের বন্ধুর সংখ্যা যত বেশি, সে তত বেশি দিন বাঁচে।
বন্ধুরা শুধু সুখের সময় উপহার দেয় না। সেই সঙ্গে আমাদের সুস্থ থাকার পথকে প্রশস্ত করে। তাই তো ফ্রেন্ডশিপ ডে-এর প্রকাল্লে বন্ধুত্বের কিছু অজানা দিকের উপর আলোকপাত করার চেষ্টা করল বোল্ডস্কাই বাংলা। লেখা পড়ার পর চোখের কোনা যদি জলে ভিজে যায়, অথবা প্রিয় বন্ধুটার কথা খুব মনে পরে, তাহলে একটা হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ তো সেই বন্ধুর কাছে পৌঁছে যেতেই পারে, তাই না!
সেই ৫ বছর বয়সে স্কুল জীবন শুরু থেকে আমৃত্যু পরিবারের পাশাপাশি যে শক্তির বলয় আমাদের প্রতিনিয়ত নানা কিছু থেকে বাঁচিয়ে আসে,তা হল বন্ধুরা। সুখ হোক কী দুঃখ, এই সুরক্ষা কবজ যেন কোনও সময় আমাদের সামনে থেকে নরে না। তাই তো এত হতাশা, এত কষ্টের মাঝেও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারি। এত দুঃখের মাঝেও হাসিটা হারিয়ে যায় না। বারে বারে সেই বন্ধুরা কোনও এক ট্যালিপ্যাথিক কমিউনিকেশনের জোরে আমার দুখি মনটার খোঁজ রেখে যায়। কালের নিয়মে বর্ষার ছাতা ছিঁড়ে যাওয়ার পরেও যেমন সঙ্গ ছাড়ে না, তেমনি চাকরি জীবন দুরত্বের প্রচীর গাঁথার চেষ্টা করলেও সেই বন্ধুরা যেন প্রথম বৃষ্টির মতো সারা জীবন মনটাকে ভিজিয়ে যেতে থাকে। তাই তো আজ বন্ধুত্বের এক অন্য দিকের উপর আলোক পাত করা হবে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যার যত বেশি বন্ধু, সে তত বেশি রোগ মুক্ত! একেবারে ঠিক শুনেছেন। আসলে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নানাভাবে আমাদের শরীর এবং মনের উপর প্রভাব ফেলে থাকে। যেমন ধরুন...
১. আয়ু বৃদ্ধি পায়:
২০১০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্র অনুসারে যে মানুষের বন্ধুর সংখ্যা যত বেশি, সে তত বেশি দিন বাঁচে। আর যাদের সোসাল লাইফ বলতে কিছুই নেই, তাদের সময়ের আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। আসলে বন্ধু মানে তো শুধু একটা মানুষ নয়, বৃহত সমাজের একটা শক্তিশালী অংশ। তাই তো বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় আমাদের সঙ্গে সমাজের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। ফলে স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদের মতো রোগের প্রকোপ কমতে শুরু করে। আর একবার এমনটা হলে স্বাভাবিক ভাবেই আয়ু বৃদ্ধি পায়। কারণ গত এক দশকে যে যে রোগ বেশি সংখ্যক অল্প বয়সিদের প্রাণ কেরেছে, তার প্রায় সবকটির সঙ্গেই স্ট্রেসের সরাসরি য়োগ রয়েছে।
২. শরীর আরও বেশি কর্মক্ষম হয়ে ওঠে:
গত দু দশকে সারা বিশ্বজুড়ে হওয়া চারটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা বন্ধুদের সঙ্গে প্রায়শই আড্ডা দিয়ে থাকে তাদের ব্লাড প্রেসার, অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা এবং হার্ট ডিজিজের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা চোখে পরার কমে যায়। অন্যদিকে বন্ধুহীন মানুষদের অবস্থা কী হয়, তা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে একদল গবেষক ন্যাশনাল আকাডেমি অব সাইন্সে বলেছিলেন, বন্ধুত্বের পরশ যাদের গায়ে লাগে না তারা তাদের সাধারণ মানুষদের তুলনায় ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এবার বুঝেছেন তো জীবনে বন্ধুর গুরুত্ব কতটা!
৩. মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়:
জার্নাল অব নিউরোলজি, নিউরোসার্জারি অ্যান্ড সাইকিয়াট্রি-তে প্রকাশিত বেশ কিছু গবেষণা অনুসারে একাকিত্বের সঙ্গে ডিমেনশিয়ার মতো রোগের সরাসরি যোগ রয়েছে। দেখা গেছে যেসব মানুষদের সঙ্গে বন্ধুদের সেভাবে যোগাযোগ হয় না, তারা এতটাই একা অনুভব করতে থাকেন যে ব্রেন সেলগুলি শুকতে শুরু করে। ফলে প্রথমে মনোযোগ হ্রাস দিয়ে শুরু হয়ে শেষে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার মতো গঠনা ঘটে থাকে। আর যারা প্রতিনিয়ত বন্ধুদের মাঝে থাকে, তাদের কী হয়? তাদের ক্ষেত্রে একেবারে উল্টো ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে ব্রেন সেলেগুলির কর্মক্ষমতা বাড়ার কারণে শুধু স্মৃতিশক্তির উন্নতি হয়, তা নয়। সেই সঙ্গে বুদ্ধি এবং মনোযোগেরও উন্নতি ঘটে।
৪. ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা কম থাকে:
২০০৭ সালে হওয়া একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল বন্ধুদের দলে কোনও একজন যদি মোটা হয়ে পরে, তাহলে কোনও এক অজানা কারণে বাকিদের উপরও তার প্রবাব পরে। একই ঘটনা ঘটে যখন কোনও বন্ধু জিম জয়েন করে, তখন তার দেখাদেখি বাকি বন্ধুরাও তার লেজুড় হয়। এমনটা কেন হয় জানেন? একে বলে "পিয়ার প্রেসার"। সহজ কথায় বন্ধুত্বের সম্পর্ক যেমন আমাদের ভাল কাজ করতে প্রভাবিত করে, তেমনি খারাপ কাজেও ইন্ধন যোগায়। তাই তো চিকিৎসকেরা এমন মানুষদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে বলেন যারা স্বাস্থ্য সচেতন। এবার নিশ্চয় বুঝেছেন বন্ধুত্বের সঙ্গে ওজন কমার কী সম্পর্ক আছে।
৫.খারাপ সময় সহজে কেটে যায়:
ব্রেকআপ হোক কি অন্য কোনও কারণে মন খারাপ। বন্ধু পাশে থাকলে নো চিন্তা! কারণ বন্ধুদের বোঝানোর মধ্যে অজব এক শক্তি থাকে, যা মন খারাপের মেঘকে নিমেষে সরিয়ে দিয়ে আশার আলো নিয়ে আসে। কি তাই না!