Just In
বাড়িতে কুকুর পোষা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক নয় তো?
বাড়িতে কেউ কুকুর রাখেন পাহারা দেওয়ার কারণে আবার কেউ রাখেন শুধুই পোষ্য হিসাবে। অন্যদিকে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা শুধু নিজের বাড়ির কুকুর নন, যত্ন নেন পাড়া বা রাস্তার যে কোনও কুকুরের।
বাড়িতে কেউ কুকুর রাখেন পাহারা দেওয়ার কারণে আবার কেউ রাখেন শুধুই পোষ্য হিসাবে। অন্যদিকে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা শুধু নিজের বাড়ির কুকুর নন, যত্ন নেন পাড়া বা রাস্তার যে কোনও কুকুরের। কিন্তু এমনটা করা কি আদৌ উচিত?
সাম্প্রতিক কালে হওয়া বহু গবেষণায় দেখা গেছে কুকুর বা পছন্দের কোনও প্রাণী পুষলে তাঁর উপস্থিতি আমাদের মনকে চাঙ্গা করে তোলে। সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক শারীরিক উপকার। যেমন...
হার্টকে ভাল রাখে
ভাবছেন, কুকুর পুষলে হার্ট কি করে ভাল থাকবে? আসলে কুকুর পুষলে আমাদের মন ভাল থাকে। শুধু তাই নয়, গবেষণায় দেখা গেছে কুকুর পুষলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়, কমে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণও। ফলে ভাল থাকে হার্ট। সেই সঙ্গে সহজে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। এছাড়াও দেখা গেছে যারা কুকুর পোষেন, তাদের হার্ট অ্যাটাক হলেও খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে।
সুস্থ এবং পরিশ্রমী হতে সাহায্য করে
সমীক্ষায় জানা যায়, যারা পূর্ণবয়স্ক, তাদের ক্ষেত্রে সপ্তাহে শারীরিক চর্চা করার মোট সময় হল, ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। তাও এই লক্ষ্যমাত্রা অনেকেই পূরণ করতে পারে না। অন্যদিকে, যারা কুকুর পোষেন, তারা এই লক্ষ্যমাত্রা খুব সহজেই পূরণ করতে পারেন। এর কারণ কি হতে পারে? কারণ হল, যারা কুকুর পোষেন, তারা কুকুর নিয়ে সকাল- সন্ধ্যা রাস্তায় বেরোন। অনেকে কুকুরের সঙ্গে সময় কাটাতেও অনেক সময় রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। ফলে কুকুরের সঙ্গে খেলা, তাদের সঙ্গে দৌড়ানো সবকিছু মিলিয়ে শরীরের কসরত অনেকটাই বেড়ে যায়। এতে শরীরও অনেক বেশি পরিশ্রমী হয়ে ওঠে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
কুকুর পোষা মানেই তাকে নিয়ম করে রাস্তায় বা পার্কে নিয়ে যাওয়া। আবার তার যতক্ষণ না ঘরে ঢুকতে ইচ্ছা হয়, ততক্ষণ তাকে নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে বা দৌড়াতে থাকা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমীক্ষাতে দেখা গেছে যে, কুকুরের সঙ্গে বেরোনোর অভ্যাস শারীরিক কসরত টানা ১০ থেকে ৩০ মিনিট অবধি বৃদ্ধি পায়। ফলে, অতিরিক্ত ওজনও কমে যায় বেশ তাড়াতাড়ি।
সামাজিক জীবন উন্নততর হয়
কুকুর যারা পোষেন, তারা বেশ সামাজিক হন। এদের বন্ধু জোটে খুব তাড়াতাড়ি। এর কারণ হল, যারা কুকুরের সঙ্গে থাকেন, তারা যে কোনও লোকের সঙ্গে এই চারপেয়ে বন্ধুকে নিয়ে গল্প করতে বেশ পছন্দ করেন। এতে ছোট শিশু থেকে অনেক বয়স্ক লোক এই ধরণের লোকের সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারেন। একটি সমীক্ষায় জানা যায় যে, অন্যান্যদের তুলনায় কুকুর যারা পোষেন, তারা ৪০ শতাংশ বেশি হারে লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলেন।
চাপ থেকে মুক্তি দেয়
কুকুরের সঙ্গে কয়েক মিনিট কাটান। পরিবর্তন নিজেই বুঝতে পারবেন। আসলে কুকুরের সঙ্গে নানা খেলা বা কথা বলে তাদের সঙ্গে যে মুহূর্তগুলো আমরা কাটাই, তার প্রভাব আমাদের মনের ওপর সবথেকে বেশিভাবে পরে। এরফলে, আমাদের মনের থেকে খারাপ চিন্তা, অতিরিক্ত চাপ-এগুলো বিদায় নেয় এবং আমাদের মানসিক দিক থেকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। এছাড়াও, রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে, সেরোটোনিন এবং ডোপেমাইনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এই দুই উপাদান হল, দুই ধরণের নিউরোকেমিক্যাল, যা আমাদের শান্ত করে এবং মনকে ভাল রাখতে সাহায্য করে।
জীবনের মুল্য বাড়ে
চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করে নিজেকে বড় অসহায় লাগে, তাই না? এটা কিন্তু খুব স্বাভাবিক ঘটনা। আসলে অবসর নেওয়ার পর ঠিক কিভাবে যে সময় কাটানো যেতে পারে, এটাই চিন্তা করা মুশকিল হয়ে ওঠে। এই সময়টার মুল্য সবথেকে ভাল বোঝাতে পারে একটি কুকুর। আসলে, অবসরকালীন জীবনে কুকুরের সঙ্গে সমস্য কাটালে, তাদের খেতে দেওয়া, খেলা করা, ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজগুলো খুব জরুরি। আর তাতেই আনন্দ খুঁজে পান চাকরি থেকে ছুটি নেওয়া মানুষেরা। এতে শরীর এবং মন দুই-ই ভালো থাকে।
শিশুদের অ্যালার্জি দূর করতে সাহায্য করে
আগে খুব বেশি পরিবারে কুকুর পোষা হতো না। মনে করা হতো যে, কুকুর পুষলেই শিশুদের অ্যালার্জির প্রকোপ বাড়বে। আসলে তা নয়। কুকুর পুষলে যে এমন কোনও কিছুর সম্ভাবনা নেই, তা বেশ কিছু গবেষণাতে প্রমাণিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, কুকুর এবং বিড়াল শিশুদের অ্যালার্জি ৩৩ শতাংশ হারে কোমাতে পারে। তাই কুকুর এবং বিড়াল শিশুদের ক্ষেত্রে বা কোনও মানুষের ক্ষেত্রে মোটেই ক্ষতিকারক নয়।
অসুখ এবং আঘাতের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে
মনে করা হয় যে, কুকুরের এমন ক্ষমতা রয়েছে, যার মাধ্যমে তারা মানুষের রোগ সম্বন্ধে জানতে পারে। যেমন- এমন কিছু কুকুর রয়েছে যারা মানুষের ত্বক, কিডনি, ব্ল্যাডার, প্রোস্টেটের সমস্যা, এমনকি ক্যান্সারের মতো রোগকে চিহ্নিত করতে পারে শুধু গন্ধ শুঁকে। এছাড়াও, কুকুরের সঙ্গে সময় কাটালে বা পুষলে মস্তিষ্কের আঘাত, অটিজম, রিউমাটয়েড আর্থাইটিসের মতো সমস্যাও নিবারণ করা যায়। এখানেই শেষ নয়, বিভিন্ন মানসিক সমস্যা, যেমন, কোনও আলজাইমার রোগী কুকুর পুষলে অনেক বেশি মানসিক দিক থেকে সুস্থ এবং স্বাভাবিক থাকতে পারেন।