Just In
রোগমুক্ত জীবন পেতে রক্তদান জরুরি!
রক্তদান জারি থাকলে শরীরে প্রয়োজন অতিরিক্ত আয়রন জমতে পারে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্যান্সার রোগ শরীরে বাসা বাঁধার কোনও সুযোগ পায় না।
বর্ষা শেষে যখন তাপমাত্রা বাড়বে, তখন আবার কমতে থাকবে রক্তের পরিমাণ। প্রতি বছরই এমনটা হয়ে থাকে। যখন হয়, তখন সরকারি একটু নড়েচড়ে বসে মাত্র। তারপর যে কে সেই! এদিকে চাহিদা বাড়তে থাকে, আর ওদিকে যোগান কমতে থাকে রকেটের গতিতে! পরিসংখ্য়ান বলছে আমাদের দেশে গত কয়েক বছরে শিক্ষাহার বেড়ে ৬০ শতাংশেরও উপরে পৌঁছে গেছে। তবু যেন মানসিকতায় কোনও পরিবর্তন হয়নি। তাই না এমন অবস্থা।
প্রতি বছর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতর রক্তের ঘাটতি বিষয়ক একটি ডেটা প্রকাশ করে থাকেন। সেই তথ্য অনুসারে ২০১৩-১৪ সালে আমাদের দেশে যেখানে রক্তের ঘাটতি প্রায় ১৭ শতাংশ ছিল, তা ২০১৫-২০১৬ সালে ১০ শাতাংশে নেমে এসেছে। খাতায় কলমে রক্ত দানের গ্রাফ উর্দ্ধমুখী হলেও বাস্তব চিত্রটা কিন্তু এখনও বদলায়নি। পরিসংখ্যান বলছে ভারতের ১৬ টি রাজ্যে যেখানে রক্তের চাহিদা এবং যোগানের মধ্যে ফারাক কিছুটা হলেও ঘুচেছে, সেখানে এমনও অনেক রাজ্য আছে যখানে রক্তের ঘাটতি প্রায় ৮০ শতাংশে এসে পৌঁছেছে।
এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে বাঁচার কি কোনও উপায় নেই? এক্ষেত্রে রক্তদান ছাড়া আর কোনও বিকল্প রাস্তা নেই। কারণ গবেষণাগারে এখনও পর্যন্ত রক্ত বানানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাই ব্লাড ডোনেশানই একমাত্র পথ। সমস্যাটা ঠিক এই জায়গাতেই। পরিস্থিতি যতই হাতের বাইরে চলে য়াক এই নিয়ে এদেশের আপাত শিক্ষিত জনগণের কোনও হেলদোল নেই। তাই তো এই প্রবন্ধটি লেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া।
একাদিক গবেষণায় দেখা গেছে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর রক্তদান করলে শরীরের অন্দরে শক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলে একাধিক মারণ রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়। প্রসঙ্গত, রক্তদান করলে সাধারণত যে যে শারীরিক উপকারগুলি পাওয়া যায়, সেগুলি হল...
১. ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে:
রক্তদান জারি থাকলে শরীরে প্রয়োজন অতিরিক্ত আয়রন জমতে পারে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্যান্সার রোগ শরীরে বাসা বাঁধার কোনও সুযোগ পায় না। প্রসঙ্গত, ক্যান্সার রোগের সঙ্গে আয়রনের সরাসরি যোগ রয়েছে। তাই ভুলেও যাতে দেহে এই খনিজটির মাত্রা বৃদ্ধি না পায়, সেদিকে খেয়াল রাখা সকলেরই একান্ত প্রয়োজন।
২. হেমোক্রোমেটোসিস:
শরীরে আয়রনের পরিমাণ মাত্রা ছাড়ালে যে শুধু ক্যান্সারের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়, তা নয়। সেই সঙ্গে হেমোক্রোমেটোসিস নামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে। তাই অন্যের কথা নয়, কেবল নিজের কথা ভেবেই বছরে দুবার ব্লাড ডোনেট করা উচিত। এমনটা করলে শরীরে আয়রণের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ফলে স্বাভাবিভাবেই নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
৩.হার্ট এবং লিভারের উন্নতি ঘটে:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে রক্তদান করলে শরীরে একাধিক খনিজ এবং ভিটামিনের মাত্রা স্বাভাভিক লেভেলে চলে আসে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্ট এবং লিভারের উপর কু প্রভাব পরার আশঙ্কা হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, রক্তে আয়রনের মাত্রা বেড়ে গেলে সেই অতিরিক্ত আয়রন হার্ট,প্যানক্রিয়াসস এবং লিভারে গিয়ে জমতে শুরু করে। ফলে সিরোসিস অব লিভার, লিভার ফেলিওর সহ প্যানক্রিয়াসের নানাবিধ রোগ এবং হার্ট ফেলিওরের মতো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
৪. ওজন হ্রাস পায়:
যারা অতিরিক্ত ওজনের কারণে চিন্তায় রয়েছেন, তারা যত শীঘ্র সম্ভব ব্লাড ডোনেট করা শুরু করে দিন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ রক্ত দান করলে শরীরে উপস্থিত অতিরিক্ত ক্যালরি ঝরে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তবে তাই বলে ঘন ঘন রক্তদান করবেন না যেন। তাতে হীতে বিপরীত হতে পারে। সাধারণত এক ইউনিট বা ৩৫০ এম এল রক্তদানের পর ৫৬ দিন অথবা ৮ সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় ব্লাড ডোনেট করতে মানা করেন চিকিৎসকেরা।
৫. ব্লাড সেলের জন্মহার বেড়ে যায়:
রক্তদানের পর শরীর রক্তের ঘাটতি দেখা দেয়। সে সময় শরীর এই ঘাটতি মেটাতে প্রচুর মাত্রায় নতুন ব্লাড সেলের জন্ম দিতে শুরু করে। ফলে তরতাজা রক্তে ভরে যায় সারা শরীর। এমনটা হওয়া মাত্র অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে নানাবিধ রোগ-ভোগের আশঙ্কাও কমে।