Just In
ফলটি স্বাদে তেঁতো কিন্তু প্রাণ বাঁচাতে অদ্বিতীয়!
পরিবারে ডায়াবেটিস রোগের ইতিহাস রয়েছে? তাহলে তো করলার রস খাওয়া মাস্ট!
পুজোর কদিন নিশ্চয় তেড়ে পেটপুজো চলেছে। সঙ্গে অনিয়ম হয়েছে লেজুড়! তাহলে তো এবার মশাই শরীরের দিকে একটু তাকাতেই হবে, না হলে যে বেজায় বিপদ! আসলে অনিয়ম যে শুধু আমাদের পেটের দফারফা করে, তা তো নয়, সঙ্গে শরীরের অন্দরে এমন সব ক্ষতি করে থাকে, যা সামলানো অনেক সময়ই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই তো আগামী কদিন নো মোর তেলে-ঝালে তরকারি। পরিবর্তে হলকা খাবার। সঙ্গে একটি বিশেষ ফল রোজের ডায়েটে থাকা মাস্ট! তাহলেই কেল্লাফতে!
কোন ফলের কথা বলছেন মশাই? সে উত্তর তো আমি দেব, তবে তার আগে আপনি অনুমান করতে পারেন কিনা দেখা যাক! ফলটিকে সবাই সবজি ভেবে ভুল করে। আকারে ছোট। সারা গা এবরো-খেবরো। আর খেতেও বেজায় বিদকুটে! বলুন তো কোন ফলের কথা বলছি? না মশাই, ঠিক ধরতে পারছি না। ফিকার নয়, আমিই উত্তর দিয়ে দিচ্ছি। যে ফলটির কথা এখানে আলোচনা করা হচ্ছে, সেটি হল করলা!
বলেন কী মশাই। করলা ফল! একেবারেই। অমরা অনেকেই করলাকে সবজি ভেবে থাকি। কিন্তু আসলে এটি সবর্গুণে সমৃদ্ধ একটি অতি উপকারি ফল, যা নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরের প্রতিটি ভাইটাল অর্গানের কর্মক্ষমতা তো বাড়েই। সেই সঙ্গে আরও কত যে উপকার পাওয়া যায়, তা বলার নয়। আসলে করলার অন্দরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি। সেই সঙ্গে মজুত রয়েছে ডায়াটারি ফাইবার, ক্যালসিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, পটাশিয়াম আবও আরও কত কী! আর এই সবকটি উপাদান যে নানাভাবে আমাদের কাজে লেগে থাকে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেমন...
১. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে:
পরিবারে ডায়াবেটিস রোগের ইতিহাস রয়েছে? তাহলে তো করলার রস খাওয়া মাস্ট! আসলে এই পানীয়টি খেলে শরীরের ভিতরে পলিপেপটাইড-পি নামে একটি উপাদানের মাত্রা বেড়ে যেতে শুরু করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে প্রকাশিত একটি স্টাডি অনুসারে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তরা যদি নিয়মিত এই ঘরোয়া ওষুধটি গ্রহন করেন, তাহলে ব্লাড সুগার একেবারে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ফলে ডায়াবেটিস সম্পর্কিত নানাবিধ রোগ হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
২. কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্টকে ভাল রাখে:
একথা নিশ্চয় কারও অজানা নেই যে হার্টের ক্ষতি করতে কোলেস্টেরল কোনও খামতিই বাকি রাখে না। তাই তো রক্তে যাতে কোনওভাবে এল ডি এল বা খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন। আর এই কাজটি করবেন কিভাবে? খুব সহজ। প্রতিদিন করলার রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার মিলবে। আসলে করলায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড। এই দুটি উপাদান কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি শরীরে নুনের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার মধ্যে দিয়ে ব্লাড প্রেসারকে কন্ট্রোলে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে শরীরে যখন কোলেস্টরলের মাত্রা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে তখন হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ে আর কোনও চিন্তাই থাকে না।
৩. ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়:
করলায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রপাটিজ, যা রক্তে মিশে থাকা টক্সিক উপাদানদের বার করে দেয়। ফলে অসময়ে ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে। শুধু তাই নয়, এই ফলটিতে উপস্থিত ভিটামিন এ,সি এবং জিঙ্ক বলিরেখা কমাতে এবং ত্বককে টানটান রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্কিনের জেল্লা ক্রমশ বাড়তেই থাকে। তাই বয়সের কাঁটাকে থামিয়ে যদি অপরূপ সুন্দরি হয়ে উঠতে চান, তাহলে ভুলেও রোজের ডায়েট থেকে করলার রসকে বাদ দেবেন না যেন!
৪. লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ায়:
পুজোর সময় অতিরিক্ত পরিমাণে মদ্যপান কম-বেশি অনেকেই করে থাকেন। ফলে লিভারের অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে করলা খাওয়া শুরু করলে বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে লিভারের কর্মক্ষমতাও বাড়তে শুরু করে। ফলে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ কমার পাশাপাশি লিভারের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
৫. ওজন কমায়:
শত চেষ্টা করেও ওজন কমাতে পারছেন না? চিন্তা নেই! করলার রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন হাতে-নাতে ফল পাবেন। আসলে এতে উপস্থিত ডায়াটারি ফাইবার অনেকক্ষণ পেট ভার রাখে। ফলে খিদে কমে যাওয়ার কারণে খাওয়াও কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমতে শুরু করে। এখানেই শেষ নয়, ওজন কমাতে আরও একভাবে করলা উপকারে লেগে থাকে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে করলায় উপস্থিত নানাবিধ খনিজ এবং অন্যান্য উপকারি উপাদান শরীরে জমে থাকা চর্বিকে ঝরিয়ে দিতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। ফলে ওজন কমতে সময়ই লাগে না।
৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়:
করলায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রপাটিজ শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বার করে দিয়ে নানাবিধ রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষণতার উন্নতি ঘটিয়ে অ্যালার্জি এবং সংক্রমণের প্রকোপ কমাতেও সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে ফার্মাসিউটিকাল রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুসারে করলায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক এবং অ্যান্টি-টিউমার প্রপাটিজ, যা প্রস্টেট, ব্রেস্ট এবং সার্ভিকাল ক্যান্সারকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।