Just In
Don't Miss
করোনা ভাইরাস : কোয়ারান্টিনের সময় যে খাবারগুলি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে
দৈনন্দিন জীবনে আপনার মত ব্যস্ত মানুষ হয়তো আর কেউ ছিলেন না। সকালে উঠে বাজার করতে যাওয়া। বাজার থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়ার পর পাবলিক ট্রান্সপোর্টে কষ্ট করে অফিস পৌঁছানো। তারপর অফিসের হাজার একটা কাজ। সব মিলিয়ে পুরো দিনেই নিঃশ্বাস ফেলার সময়টুকু থাকতো না আপনার। কিন্তু এখন, অডেল সময়। কোভিড-১৯ এর দৌলতে সকলের মতোই আপনিও এখন গৃহবন্দী। ফলতঃ সারাদিন খেয়ে, ঘুমিয়েই কেটে যায় আপনার। মাঝেমধ্যে আবার ভাবছেন, আর কী করা যায়? কারণ, খেয়ে, বসে, শুয়ে আপনার যে বেড়েছে ওজন। আর ওজন বাড়া মানেই রোগের উৎপত্তি। তাই এখন চিন্তায় মাথায় হাত আপনার।
চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। কোভিড-১৯ এর এই সময়টি বিভিন্ন অনিশ্চয়তায়পূর্ণ থাকলেও আপনি কীভাবে আপনার স্বাস্থ্য এবং ওজনকে ঠিক রাখবেন, তার জন্য রইল কিছু খাবারের টিপস্, যা মেনে চললে আপনিও বজায় রাখতে পারবেন আপনার ওজনকে।
১) মধু-লেবুর জল
ঘুম থেকে উঠেই এক গ্লাস গরম জলের সঙ্গে মধু ও লেবু মিশিয়ে পান করুন। খালিপেটে এই পানীয়টি খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। এটি আপনার শরীরের ওজন কমানোর পাশাপাশি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন) বের করতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
করোনা ভাইরাস : রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান, সুস্থ থাকুন
২) ওটস্
শরীরকে ফিট রাখতে এবং অতিরিক্ত ওজন কমাতে সকাল-সন্ধ্যের টিফিনে খেতে পারেন ওটস্। এটি ফাইবার, আয়রন, প্রোটিন ও ভিটামিন যুক্ত একটি খাবার। দুধ, মধু, কলা মিশিয়ে এই খাবারটি খেতে পারেন অথবা ওটসের খিচুড়ি করেও খেতে পারেন। ওটসে থাকা ভিটামিন-বি ও কার্বোহাইড্রেট হজমে সাহায্য করে। এছাড়াও কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, হার্টকে ভালো রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৩) কর্নফ্লেক্স
দ্রুত ওজন কমাতে ডায়েট চার্টে সকাল বা সন্ধ্যের নাস্তা হিসেবে রাখতে পারেন কর্নফ্লেক্স। কর্নফ্লেক্স লো-ক্যালোরি হওয়ার জন্য ওজন কমাতে সাহায্য করে। গরম দুধ ও ফল মিশিয়ে এটি খান। তবে ডায়েটিশিয়ানদের মতে, কর্নফ্লেক্স রোজ খাওয়া উচিত নয়। এটি সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনবার খান।
৪) বাদাম ও বীজ
বাদাম এবং স্বাস্থ্যকর বীজ আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ থাকে, যা শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। বাদাম, কুমড়োর বীজ, ফ্লেক্সসিড, আখরোট ইত্যাদি।
৫) সবুজ শাকসবজি
সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলস ইত্যাদি থাকে। এসমস্ত শাকসবজি শরীরের গঠন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই রোজ দুপুরের খাবারে এক বাটি করে মিক্স সবজি খান। বিশেষ করে যেসব খাবারে প্রোটিন ও ফাইবার দুই রয়েছে সেগুলি শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই দুপুর এবং রাতের খাবারে নিয়মিত রাখতে পারেন ব্রকলি, বাঁধাকপি বা ফুলকপি।
৬) মাছ
মাছের তেলে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং মাছে থাকে প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল, যা শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট জমতে দেয় না এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। মাছ শরীরে আয়োডিনের মাত্রা বাড়ায়, যার কারণে শরীরে মেটাবলিজম রেটও বাড়ে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
করোনা ভাইরাস : লকডাউনের সময় যেসমস্ত খাদ্যগুলি মজুত রাখবেন
৭) মুরগির মাংস
ডায়েটিশিয়ানের মতে, ওজন কমাতে গেলে প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই কোয়ারান্টিন ডায়েট লিস্টে মুরগির মাংস রাখতে পারেন। মুরগির মাংস শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়। এতে থাকা ভিটামিন বি-৬ শরীরে বিপাকের মাত্রা উন্নত করে, খাবার হজম করতে সাহায্য করে। তবে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে রেড মিট না খেলেই ভাল হয়।
৮) ডিম
এই কোয়ারান্টিন পিরিয়ডের মধ্যে নিজের ওজন কমাতে চাইলে রোজ ব্রেকফাস্টে সেদ্ধ ডিম খান। ডিমে থাকা প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও আয়রন বহুক্ষণ আপনার পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরির প্রয়োজন পড়ে না। আর এই ক্যালোরি প্রবেশ না করার ফলে শরীরের ওজন অল্প সময়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ডিমের কুসুমটি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সাদা অংশটি খেলে আরও বেশি উপকার পাবেন।
৯) আপেল ও কলা
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আপেল যে একটি কার্যকরী খাবার তা হয়তো অনেকেরই বোধগম্য নয়। আপেলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা খিদের মাত্রাকে কমায় এবং জমে থাকা ফ্যাট দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও আপেল ভিটামিন এবং মিনারেল যুক্ত হওয়ায় ওজন কমানোর পাশাপাশি শরীরকে রোগ মুক্ত করতেও সহায়তা করে। তাই রোজ একটি করে আপেল খান।
রোজ সকালে দুই থেকে তিনটি করে পাকা কলা খান। কারণ, এতে থাকা পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম হজমে সহায়তা করে। পাশাপাশি কলা খেলে শরীরের মেটাবলিজম রেট বেড়ে যায়, যা শরীরের মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।
১০) টক দই
শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে ডায়েট লিস্টে অবশ্যই রাখুন দই। এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রো-বায়োটিক, প্রোটিন, ফসফরাস ও জিঙ্কের মতো উপাদান, যা হজম ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। তাই রোজ লাঞ্চের পরে এক বাটি করে টক দই খান।
১১) ভুট্টা
ডায়েটিশিয়ানদের মতে, ওজন কমাতে খেতে পারেন ভুট্টা। কারণ, ভুট্টাতে থাকা ডায়েটরি ফাইবার ও প্রোটিন শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।
১২) অলিভ অয়েল
দাম বেশি হলেও এর উপকারিতা কিন্তু প্রচুর। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তেলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আপনার পেটকে অনেকক্ষণ ভরিয়ে রাখে এবং শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরির প্রবেশকে আটকে দেয়। যার ফলে অনায়াসেই শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ হয়। সকালের ব্রেকফাস্ট বা বিকেলের টিফিন তৈরির সময় এই তেল ব্যবহার করুন।
এই সকল খাবার গ্রহণের জন্য কিছু নিয়ম আপনাকে মেনে চলতে হবে। দেখে নিন কী করবেন এবং কী করবেন না।
যা করবেন
১) শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী আপনাকে জল পান করতে হবে। জল গ্রহণ করা খাদ্যকে হজম করতে সাহায্য করে এবং ত্বক ভালো রাখে।
২) খাবারের পাশাপাশি অল্প বিস্তর শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে। সুস্থ থাকতে ও হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে শরীরচর্চা প্রয়োজন।
৩) খাবার গ্রহণের সঠিক সময়টি নির্ধারণ করুন এবং নির্ধারিত সময় অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করুন।
৪) সবজি, মাছ, মাংস ও ডিম ভাল করে রান্না করে খান।
৫) যদি ভাত না খেয়ে থাকতে পারেন, তবে অল্প ভাত এবং দু'পিস রুটি খেতে পারেন।
যা করবেন না
১) এই সময় বাইরের জাঙ্ক ফুড বা ফাস্টফুড খাওয়া থেকে দূরে থাকুন।
২) তেলে ভাজা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
৩) কোল্ডড্রিঙ্কস, সাদা পাউরুটি এবং মিষ্টি খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
৪) তরকারি বা খাবারে চিনি খাওয়া এড়াতে হবে।