Just In
এসি হইতে সাবধান... এর থেকেও ছড়াতে পারে করোনা, দাবি বিশেষজ্ঞদের
একেই এপ্রিল,মে মাসের তীব্র গরম, তার উপরে আবার করোনার আতঙ্ক। এই দুইয়ের কবলে পড়ে মানুষের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। করোনা থেকে বাঁচার জন্য গৃহবন্দী জীবন অতিবাহিত করছেন দেশের সকল মানুষ। এর মাঝে গরমের থাবা থেকে স্বস্তি পেতে বেশিরভাগ মানুষের সহায় ছিল এয়ারকন্ডিশনের ঠান্ডা হাওয়া, কিন্তু এটাও সইলনা কপালে। করোনার চক্রান্তে এবার ভিলেনের খাতায় নাম লেখালো ঘর ঠান্ডা রাখার এয়ারকন্ডিশন বা এসি মেশিন।
সম্প্রতি আমেরিকার 'সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন ' (CDC) এর জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র থেকে জানা যায় যে, এয়ার কন্ডিশন মেশিন এর মাধ্যমেও ছড়াতে পারে এই মারণ ভাইরাস।
আমরা সকলেই জানি COVID-19 ড্রপলেটস্ এর মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, হাঁচি বা কাশি থেকে নির্গত ড্রপলেটের আয়তন প্রায় পাঁচ মাইক্রোমিটার বা তারও বেশি। সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে নির্গত এই ভারী আয়তনের ড্রপলেট এক মিটারের বেশি ব্যবধানে দাঁড়ানো ব্যক্তির শরীরে পৌঁছতে পারে না, তার আগেই তা থিতিয়ে যায়। কিন্তু এয়ারকন্ডিশনের বাতাসের প্রবাহ এতটাই শক্তিশালী যে ড্রপলেটগুলোকে অনেক দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে সাহয্য করে, যার ফলে অনায়াসে ছড়াতে পারে ভাইরাস। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের এক সংস্থা সূত্রেও জানা গেছে, হাঁচি বা কাশি ছাড়াও এসি'র মাধ্যমে ছড়াতে পারে COVID-19।
CDC-এর গবেষণা অনুযায়ী, তিন করোনা আক্রান্ত রোগীকে একটি এয়ারকন্ডিশন ঘরে রাখা হয়েছিল। সেই ঘরের এয়ার ডাক্ট এর মধ্যে পাওয়া গেছে করোনা জীবাণু।
জানা গিয়েছে, চীনের এক রেস্তোরাঁয় উহান থেকে এক ব্যক্তি সপরিবারে খেতে যান। এই ব্যক্তির পরিবারের থেকে এক মিটারেরও বেশি দূরত্বে অন্য দুই পরিবার খেতে বসেন। সামনে ছিল একটি এসি। পরবর্তীতে দেখা যায় এই তিন পরিবারের মধ্যে মোট ১০ জন করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। এই ঘটনায় আতঙ্ক বেড়েছে সাধারণ মানুষের মনে।
আরও পড়ুন : মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে করোনা! রইল এর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
পারভিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষায় জানা যায়, ক্যালিফোর্নিয়ায় ডায়মন্ড প্রিন্সেস ক্রুজ জাহাজটিতে করোনা সংক্রমণ এসি থেকেই হয়েছে। গবেষকদের মতে, এসি গুলি এমনভাবে ডিজাইন করা নয় যা ভাইরাসকে ছড়িয়ে পড়া থেকে আটকাতে পারে। এক জায়গায় জানালা, দরজা বন্ধ থাকার ফলে এসির মাধ্যমে ভাইরাসটি অবিচ্ছিন্নভাবে বাতাসে নিয়মিত সঞ্চালিত হয় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি-কে বাড়িয়ে তোলে। কারণ, COVID-19 ছড়িয়ে পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ হল আর্দ্র জায়গাগুলি।
এইসব কারণের জন্যই এসি থেকে দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। নিজেরা সুরক্ষিত থাকলে তবেই সুরক্ষিত রাখা যাবে অন্যকে।
কী ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করবেন?
১) বাড়ির এসি চালানো বন্ধ করে দিন, পরিবর্তে ফ্যান ব্যবহার করুন।
২) হসপিটাল বা ক্লিনিকে গেলে এসি-র থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।
৩) এসি স্টোরগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সময় মাস্ক ব্যবহার করুন।
৪) দিনের কোনও একটা সময়ে সমস্ত দরজা, জানালা খুলে দিয়ে ঘরের ভেতরে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে দিন।
আরও পড়ুন : করোনা ভাইরাস : দেখে নিন ভাইরাস থেকে বাঁচার কিছু সেফটি টিপস্
৫) দীর্ঘদিন যদি এসি বন্ধ থাকে, তবে এসি চালানোর আগে তা পরিষ্কার করে নিন।
৬) প্রতিদিন ঘরের এসি পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করুন। প্রতিদিন না হলেও দু'দিন অন্তর করুন।
৭) পরিষ্কার করার সময় মাস্ক ব্যবহার করুন এবং চশমা ব্যবহার করুন পাশাপাশি হাতে গ্লাপস পরুন।
৮) এসি পরিষ্কার করার পর সাবান দিয়ে হাত, পা, মুখ ভালো করে ধুয়ে নেবেন। হাত না ধুয়ে মুখে-চোখে এবং নাকে স্পর্শ করবেন না।