"ইন্ডিয়া স্টেট লেভেল ডিজিজ বার্ডেন রিপোর্ট" অনুসারে ভারতের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ নানা কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিসের মতো নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের কারণে মারা যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, কম বয়সিদের মধ্যেও এইসব রোগের প্রকোপ হু হু করছে বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের কিভাবে সুস্থ রাখবেন, সে সম্পর্কে কোনও ধারণা আছে কি?
সম্প্রতি ল্যান্সেট পত্রিকায় প্রকাশিত "গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ" নামক রিপোর্ট থেকে জানতে পারা গেছে যে আমাদের দেশের প্রতিটি রাজ্যে নন-কমিউনিকেবল ডিজিজে আক্রান্তের সংখ্যাটা ক্রমাগত বাড়ছে। শুধু তাই নয়, ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই সম্পর্কিত নানাবিধ ডেটা বিশ্লেষণ করে একটা বিষয়ে এক মত হয়েছেন বিশেষজ্ঞরা যে গত কয়েক দশকে যেহারে এই সব মারণ রোগের প্রকোপ বেড়েছে, তেমনই যদি চলতে থাকে তাহলে খুব শীঘ্রই প্রতিটি পরিবারে ১-২ জন করে সদস্য এমনসব রোগে আক্রান্ত হবেন। তখন পরিস্থিতি যে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে সে বিষয়ে ভেবে শিউরে উঠছেন চিকিৎসকেরা।
প্রশ্ন হল ভারতের মতো দেশে যেখানে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা অগুণতি, সেখানে ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল এবং হার্ট অ্যাটাকের মতে লাইফস্টাইল ডিজিজে আক্রান্তের সংখ্যাটা এত মাত্রায় বাড়ছে কেন? বিশেষজ্ঞদের মতে অনিয়ন্ত্রত জীবনযাত্রা, মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে ধূমপান এবং মদ্যপান, বায়ু দূষণ সহ জীবনযাত্রা সম্পর্কিত নানা বিশৃঙ্খলতার কারণে এইসব রোগ ঘারে চেপে বসছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জীবন হয়ে উঠছে দুর্বিসহ, সেই সঙ্গে কমছে আয়ুও।
এখন প্রশ্ন হল এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার উপায় কী? উপায় তো আছে, তবে তার জন্য কতগুলি নিয়ম মেনে চলতে হবে। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু কেস স্টাডিতে দেখা গেছে এই প্রবন্ধে আলোচিত নিয়মগুলি মেনে চললে নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের প্রকোপ থেকে অনেকাংশেই বেঁচে থাকা সম্ভব হয়। তাই সুস্থভাবে যদি বাঁচতে চান, তাহলে একবার এই প্রবন্ধে চোখ রাখা মাস্ট!
এক্ষেত্রে যে যে নিয়মগুলি সুস্থ-সুন্দর জীবনের পথকে প্রশস্ত করে, সেগুলি হল...
১. প্রতিদিন শরীরচর্চা করা মাস্ট!
একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, হার্টের রোগ এবং উচ্চ রক্তচাপকে যদি দূরে রাখতে হয়, তাহলে প্রতিদিন কম করে আধ ঘন্টা এক্সারসাইজ করতেই হবে। কারণ নিয়ম মেনে শরীরচর্চা করলে ঘামের সঙ্গে শরীরের অন্দরে জমে থাকা টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যায়। সেই সঙ্গে বশ কিছু উপকারি হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ওজন কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীর একেবারে চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
২. ডায়াটের দিকে নজর ফেরাতে হবে:
কাজের চাপে রোজের ডায়েটে বার্গার-চিপসের দাপাদাপি চললে কিন্তু বেজায় বিপদ! কারণ বেশি মাত্রায় জাঙ্ক ফুড খেলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ওজন বৃদ্ধি এবং সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। আর এমনটা যদি একবার ঘটে যায়, তাহলেই কিন্তু বিপদ! কারণে সেক্ষেত্রে রক্ত চাপ বেড়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস এবং হার্ট দুর্বল হয়ে পরার মতো রোগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। সেই কারণই ভাজাভুজি ছেড়ে বেশি করে খেতে হবে ডাল, সয়াবিন, দানা শস্য এবং বাদাম জাতীয় খাবার। কারণ এই খাবারগুলির শরীরে ল্যাকটিন নামক একটি উপাদান থাকে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে।
৩. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি যেন না হয়:
এই উপাদানটির শরীরের অন্দরে প্রবেশ কার পর রক্তে মিশে থাকা টক্সিক উপাদানদের শরীর থেকে বের করে দেয়। সেই সঙ্গে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রাও কমাতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্রেন থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়ে শরীরের সচলতাও। আর এমনটা হলে শুধু নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ নয়, কোনও ধরনের রোগই ধারে কাছে ঘেঁষার সাহস পায় না। প্রসঙ্গত, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মধ্যে থাকা ফ্লেবোনয়েড নামক একটি উপাদান ব্রেনের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি যদি বুদ্ধি এবং মনোযোগের বিকাশ ঘটাতে চান, তাহলে নিয়মিত জাম, বিনস, ব্রকলি এবং গ্রিন টি-এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া শুরু করতেই হবে।
৪. মস্তিষ্কের খেয়াল রাখতে হবে:
নন-কমিউনিকেবল ডিজিজকে প্রতিরোধ করার সঙ্গে সঙ্গে ব্রেন এবং হার্টের খেয়াল রাখাও জরুরি। কারণ এই দুটি অঙ্গ যদি ঠিক মতো কাজ না করে তাহলে ভাল-মন্দ খেয়েও কোনও লাভ হবে না। তাই মস্তিষ্ককে সুস্থ এবং চনমনে রাখতে বিট, জাম, ডার্ক চকোলেট, নারকেল তেল, অ্যাভোকাডো প্রভৃতি খেতে হবে বেশি করে। কারণ এই খাবারগুলি ব্রেনকে অ্যাকটিভ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। অন্যদিকে হার্টকে সুস্থ রাখতে ডায়াটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে মাছ, বাদাম, জাম, ওটস, বিনস, সবুজ শাক-সবজি এবং ফলের মতো খাবারকে।
৫.নিয়ম করে করতে হবে যোগাসন:
শরীর এবং মনকে চনমনে এবং সুস্থ রাখতে যোগাসনের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই সুস্থ জীবন পেতে এবং সেই সঙ্গে নন-কমিউনিকেবল ডিজিজদের দূরে রাখতে প্রতিদিন কম করে ৩০ মিনিট যোগাসন করা মাস্ট!
এই নিয়মগুলি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চললে দেখবেন আমাদের দেশ যতই ডায়াবেটিস ক্যাপিটাল এবং নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠুক না কেন, আপনার এবং আপনার পরিবারের বাকি সদস্যদের স্বাস্থ্যের কোনও ক্ষতিই হবে না।
সাবস্ক্রাইব করুন বোল্ডস্কাই বাংলা | Subscribe to Bengali Boldsky.
Related Articles
হলুদ দাঁতকে ঝকঝকে সাদা করার ইচ্ছা আছে নাকি? তাহলে কাজে লাগাতে ভুলবেন না এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলিকে!
বয়স ৩০ পেরিয়েছে নাকি? তাহলে সুস্থ থাকতে রোজের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতেই হবে এই খাবারগুলিকে!
নিয়মিত মুখে এবং হাতে পায়ে ঘি লাগিয়ে মাসাজ করলে কী কী উপকার মেলে জানা আছে?
চিকিৎসকেরা প্রতিদিন ব্রাহ্মী শাক খেতে কেন বলছেন জানেন?
টানা ৪ ঘন্টা বসে কাজ করেন নাকি? তাহলে খুব শীঘ্র মরতে চলেছেন আপনি!
নিয়মিত লেবুর খোসা খেলে কত উপকার পাওয়া যায় জানা আছে?
চটজলদি ওজন কমাতে চান? তাহলে প্রতিদিন খাওয়া শুরু করুন এই খাবারগুলি!
সাদা চুলকে নিমেষে কালো করতে কাজে লাগাতে ভুলবেন না এই প্রকৃতিক উপাদনগুলিকে!
ওয়ার্ল্ড লিভার ডে: এই খাবার এবং পানীয়গুলি খেলে দেখবেন কোনও দিন লিভার খারাপ হবে না!
হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের কারণে মরতে না চাইলে প্রতিদিন সামদ্রিক মাছ খেতে ভুলবেন না যেন!
চিকিৎসকেরা এই গরমে নিয়মিত মধু এবং দারচিনি খেতে বলেছেন কেন জানেন?
সাবধান: গরমকালে এই খাবারগুলি খেলে গা থেকে মারাত্মক দুর্গন্ধ বেরবে কিন্তু!
রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে মেকআপ ধুয়ে না নিলে ত্বকের কী কী ক্ষতি হতে পারে জানেন?