Just In
বায়ু দূষণের কারণে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে ব্রেনের!
ইউনাইটেড নেশানের তত্ত্বাবধানে হওয়া এক সমীক্ষায় দেখা গেছে দূষিত বাতাসের মধ্যে থাকা একাধিক ক্ষতিকর উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর ধীরে ধীরে ব্রেন সেলেদের মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলে।
এতদিন পর্যন্ত জানা ছিল বায়ু দূষণের কারণে ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হয়। কিন্তু সম্প্রতি ইউনিসেফের প্রকাশ করা এক রিপোর্টে দেখে ধরণাটাই বদলে গেল!
কী এমন লেখা ছিল রিপোর্টে? ইউনাইটেড নেশানের তত্ত্বাবধানে হওয়া এক সমীক্ষায় দেখা গেছে দূষিত বাতাসের মধ্যে থাকা একাধিক ক্ষতিকর উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর ধীরে ধীরে ব্রেন সেলেদের মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলে। ফলে ব্রেন পাওয়ার তো কমেই, সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের অন্দরে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই কারণেই তো ইউনিসেফের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা এই রিপোর্টের নাম দিয়েছেন "ডেঞ্জার ইন দা এয়ার"। প্রসঙ্গত, বাতাসে উপস্থিত ক্ষতিকর পার্টিকেলসরা ব্রেনের অন্দরে প্রবেশ করার পর মারাত্মক প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে ধীরে ধীরে উপকারি মেমব্রেনেরা এত মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় যে মস্তিষ্কে টক্সিক উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। ধীরে ধীরে ব্রেনের ক্ষমতা একেবারে কমে যায়। তাই তো সাবধান হওয়ার সময় এসে গেছে বন্ধুরা। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশ করা "আর্বান এয়ার কোয়ালিটি ডেটাবেস" রিপোর্টে আমাদের দেশের দূষণের যে ছবি উঠে এসেছে তা বেজায় ভয়ঙ্কার। "হু" প্রকাশিত এই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে সারা বিশ্বের ২০ টি সবথেকে দূষিত দেশের মধ্যে আমাদের দেশের স্থান ১৩ নম্বরে, যা মোটেও ভাল খবর নয়। কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে দূষণের মাত্রা যত বাড়বে, তত পরিবেশে ১০ মাইক্রোনের বেশি ব্যাসার্ধযুক্ত পার্টিকালের সংখ্যা বাড়তে থাকবে, ফলে মারাত্মক ক্ষতি হবে ব্রেনের। ফলে মৃত্যু ছোবল থেকেও বাঁচা কোনও মতেই সম্ভব হবে না।
এমন পরিস্থিতিতে তাহলে কি বাঁচার কোনও উপায় নেই? চিকিৎসকেদের মতে বায়ু দূষণের হাত থেকে বাঁচতে প্রথমেই যে কাজটি করতে হবে, তা হল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্য়বস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে। একবার ইমিউনিটি বেড়ে গেলে ক্ষতিকর টক্সিক পলিউটেন্টদের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতি করা আর সম্ভব হবে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অসুস্থ হয়ে পরার আশঙ্কাও কমবে।
এখন প্রশ্ন হল কিভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটানো সম্ভব? এই প্রশ্নেরই উত্তর দেওয়া হবে এই প্রবন্ধে। এই লেখায় এমন কিছু সহজ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে, যা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চললে বায়ু দূষণের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে অনেকাংশেই বেঁচে থাকা সম্ভব হবে।
সাধারণত যে যে ঘরোয়া পদ্ধতিতে এয়ার পলিউশের সঙ্গে লড়াইয়ে জেতা সম্ভব, সেগুলি হল...
১. নাভিতে সরষের তেল লাগান:
মনে পরে ছোট বেলায় ঠাকুমা-দাদু স্নান করিয়ে দেওয়ার সময় নাভিতে গরম তেল লাগিয়ে দিতেন। এমনটা তারা কেন করতেন জানেন? আসলে নাভিতে সরষের তেল ভাল করে লাগালে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে একদিকে যেমন নানাবিধ পেটের রোগ সেরে যেতে শুরু করে, তেমনি পাকস্থলিতে উপস্থিত উপকারি ব্যাকটেরিয়ারা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাও জোরদার হয়ে যায়।
২. খালি পায়ে হাঁটুন:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস করলে আমাদের আশেপাশে উপস্থিত উপকারি ব্যাকটেরিয়ারা শরীরের অন্দরে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। আর যেমনটা আপনারা আগেই জেনে গেছেন যে একবার ইমিউনিটি পাওয়ার বেড়ে গেলে বায়ু দূষণের খারাপ প্রভাব আমাদের শরীরের উপর পরতেই পারে না।
৩. মাটির কুঁজোয় জল খাওয়া শুরু করুন:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে মাটির পাত্রে জল রাখলে তাতে "পি এইচ" লেভেল ঠিক থাকে। ফলে এমন জল নিয়মিত পান করলে বদ-হজম এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর হয়, সেই সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার এতটাই উন্নতি ঘটে যে বায়ু দূষণের কোনও খারাপ প্রভাব শরীরে পরতেই পারে না।
৪. বেশি করে খেতে হবে সাইট্রাস ফল:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে বায়ু দূষণের পক্ষে কোনও ক্ষতি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সেই কারণেই তো এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকেরা বেশি করে সাইট্রাস ফল, যেমন পাতি লেবু, কমলা লেবু এবং মৌসম্বি লেবুর খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। কারণ এই ফলগুলিতে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. হলুদ খাওয়ার পরিমাণ বাড়ান:
এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে পরিবেশে উপস্থিত খারাপ উপাদানগুলি সেভাবে শরীরের ক্ষতি করার সুযোগই পায় না। এক্ষেত্রে নিয়মিত এক গ্লাস করে হলুদ মিশ্রিত দুধ খেলে দারুন উপকার মেলে কিন্তু!
৬. নিমের দাতন দিয়ে দাঁত মাজুন:
এমনটা করলে দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি তো হবেই, সেই সঙ্গে শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণে নিমের রস পৌঁছে যাওয়ার কারণে শরীরের সার্বিক কর্মক্ষমতা চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পাবে। শুধু তাই নয়, গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিও ঠিক মতো কাজ করা শুরু করে দেওয়ার কারণ বিষ বাষ্প শরীরে ছোবল মারতে সক্ষম হবে না।