Just In
নিয়মিত প্রার্থনা করলে শরীরের উপর কি প্রভাব পরে জানেন?
জীবন মানে কখনও সুখের নরম স্পর্শ পাওয়া, তো কখনও দুঃখের জোয়ারে ভেসে যাওয়া। এই নিয়েই তো আমাদের রোজের জীবন।
জীবন মানে কখনও সুখের নরম স্পর্শ পাওয়া, তো কখনও দুঃখের জোয়ারে ভেসে যাওয়া। এই নিয়েই তো আমাদের রোজের জীবন। কিন্তু এসবের মাঝেও আমরা শান্ত থাকি, আনন্দে থাকি, কারণ এক অদৃশ্য শক্তি আমাদের মনের জোরকে বাড়িয়ে চলে, যে শক্তির নাম কারও কাছে ভগবান, কারও কাছে আল্লা, নয়তো জিজাস ক্রাইস্ট। এই বিশ্বাসের দুনিয়ায় পৌঁছানোর পথ তো অনেক, কিন্তু সবারই গন্তব্য এক! তাই তো প্রতিদিন সন্ধ্যা আরতির ধোঁয়ায় মিলেমিশে যায় আজানের সুর এবং গির্জার ঘন্টার ধ্বনি।
এতদূর পড়ার পর নিশ্চয় ভাবছেন হঠাৎ করে সকাল সকাল এইসব নিয়ে আলোচনা করছি কেন, তাই তো? আসলে আজ এই প্রবন্ধে প্রার্থনা করার এমন কিছু উপকার সম্পর্কে আলোচনা করবো, যা পড়তে পড়তে একজন নাস্তিকও ভাবতে বাধ্য হবেন।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে প্রার্থনা করার সময় আমাদের মস্তিষ্ক এবং শরীরের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে থাকে যে ধীরে ধীরে ব্রেন এবং দেহের শক্তি বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকারও। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু বছর আগে ক্লিনিকাল ফিজিওলজির বিখ্যাত প্রফেসর ডাঃ লিসা মিলার একটি গবেষণা চলাকালীন লক্ষ করেছিলেন, এক যোগে ভগবানের কাছে নিয়মিত প্রর্থনা করলে ব্রেনের অন্দরে থাকা কর্টিসেস শক্তিশালী হতে থাকে। ফলে ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে এখানেই শেষ নয়, প্রার্থনার করলে আরও অনেক ফল পাওয়া যায়। যেমন...
১. স্ট্রেস কমতে শুরু করে:
প্রতিযোগিতার যুগে টিকে থাকতে আজকের যুব সমাজকে এত মাত্রায় লড়াই চালাতে হচ্ছে যে বেশিরভাগই ক্রনিক স্ট্রেসের শিকার হয়ে পরছেন। আর যেমনটা সবারই জানা আছে যে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস হল অনেকটা বিষের মতো, যা ধীরে ধীরে আমেদের শেষ করে দেয়। সেই সঙ্গে ডেকে আনে হাজারো জটিল রোগকে। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে রক্ষা করতে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কোনও উপায় আছে বলে তো মনে হয় না। কারণ একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে প্রেয়ার করার সময় ব্রেনের অন্দরে বেশ কিছু উপকারি হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে স্ট্রেস লেভেল কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বডি স্ট্রেসও কমে যায়। ফলে শরীর এবং মন চাঙ্গা হয়ে উঠতে সময় লাগে না।
২. মানসিক অবসাদ এবং অ্যাংজাইটি দূরে থাকে:
কখনও কোনও ইচ্ছা পূরণ না হওয়া, তো কখনও ভালবাসার মানুষটির দূরে চলে যাওয়া। নানা কারণে মন খারাপ, আর তা থেকে মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেকের মধ্যে আজকাল দেখা যায়। আর একথা সরকারি পরিসংখ্যানও প্রমাণ করেছে যে গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে মানসিক আবসাদে আক্রান্তের সংখ্যাটা ক্রমাগত বাড়ছে। শুধু তাই নয়, মন খারাপের কারণে আত্মহত্যা করার প্রবণতাও বাড়ছে। এমন অবস্থায় প্রার্থনার প্রয়োজন বেড়েছে অনেক। কারণ এক মনে ভগবানের নাম করলে মনের জোর বেড়ে যায়। ফলে ডিপ্রেশন কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে অ্যাংজাইটিও কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মানসিক অবসাদের ফাঁদে পরার আশঙ্কা হ্রাস পায়। আর প্রার্থনার সঙ্গে মনের ভাল-মন্দের যে একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে সেকথা ব্রিটিশ জার্নাল অব হেল্থ সাইকোলজিতে প্রকাশিত একাধিক গবেষণা পত্রেও উল্লেখ পাওয়া গেছে।
৩. একাধিক মারণ রোগকে দূরে রাখে:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে প্রার্থনা করার সময় আমাদের শরীরে রক্তের প্রবাহের পাশাপাশি আরও এমন কিছু পরিবর্তন হয় যে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে শুরু করে। ফলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি কোনও ধরনের করনোরি আর্টারি ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। শুধু তাই নয়, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, আলসার এবং মাইগ্রেনের মতো সমস্যা ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
৪. আনন্দের গ্রাফ উপরে উঠতে থাকে:
খুশি থাকতে কে না চায়! কিন্তু কিভাবে এমনটা থাকা যায়, তা কি জানেন? যদি উত্তরটা জানা না থাকে, তাহলে আজ থেকেই দিনের যে কোনও সময়ে এক মনে প্রার্থনা শুরু করুন। দেখবেন যতদিনই বাঁচুন না কেন, খুশির গ্রাফ কখনও নিম্নমুখি হবে না। কেন জানেন? আসলে প্রার্থনা করার সময় আমাদের মস্তিষ্কের অন্দরে "ডোপেমাইন" নামক এক ধরনের ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে নিমেষে মন খুশি হয়ে যায়। সেই সঙ্গে মানসিক শান্তিও ফিরে আসে।
৫. অপারেশন হওয়ার রোগীরা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন:
যে কোনও অপারেশনের পর যদি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে চান, তাহলে নিয়মিত প্রার্থনা করা মাস্ট! কারণ বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে প্রাথর্না করলে শরীরের ক্ষত সারানোর প্রক্রিয়াটি জোর কদমে হতে থাকে। ফলে যে কোনও ধরনের ক্ষত সারতে সময় লাগে না।
৬. ছোট-বড় সব রোগ দূরে থাকে:
শুনতে একটু আজব লাগলেও একথা বিশেষজ্ঞরাও মেনে নিয়েছেন যে প্রেয়ার করার সময় কোনও এক অজানা কারণে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। আর একবার ইমিউনিটি বেড়ে গেলে কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।