Just In
- 12 hrs ago রোদে বের হলেই মাথা যন্ত্রণা কাবু করে? মাইগ্রেন নয় তো!
- 13 hrs ago শুধু ফ্যাশন নয়, প্রখর রোদ থেকে বাঁচতে পরুন সানগ্লাস!
- 15 hrs ago অসহ্য গরমে সর্দি-কাশিতে ভুগছেন? এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি ট্রাই করুন
- 19 hrs ago কর্মক্ষেত্রে সমস্যা মকরের, ব্যাবসায় আর্থিক লাভ মীনের, কেমন যাবে আজকের দিন? দেখুন রাশিফল
পতিতালয়ের মৃত্তিকাতেই সম্পন্ন হয় দেবীর মূর্তি, জানেন কি এর আসল কারণ?
পতিতালয়, এই শব্দটির সঙ্গে আমরা সকলেই পরিচিত। অনেকেই একে বেশ্যা পাড়া হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন। সামাজিক রীতিনীতি ও ধ্যান ধারণার দৌলতে এই পতিতালয় বহু মানুষের কাছে অপবিত্র একটি স্থান। কিন্তু জানেন কি, তথাকথিত অশুচি ও অপবিত্র এই এলাকার মাটি ছাড়া মা দুর্গার মূর্তি তৈরি সম্পন্ন হয় না? হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। সমাজ যাদের দূরে ঠেলে দিয়েছে, সমাজের চোখে যারা নগণ্য, তাদেরকেই আদিশক্তি কাছে টেনে নিয়েছেন। কারণ মায়ের কাছে যে তাঁর সব সন্তানই সমান।
হিন্দুশাস্ত্র মতে, অকালবোধনের সময় মহিষাসুরমর্দিনীকে গড়তে হয় পতিতালয়ের মাটি দিয়েই। সম্পূর্ণ না হলেও আংশিকভাবে এই মাটির প্রলেপ দিতে হয় মৃন্ময়ীর কাঠামোয়। আবার মাটির প্রতিমার বদলে পাথর বা ধাতু দিয়ে মূর্তি বানালে, নবকন্যার উঠোনের মাটি মঙ্গলঘটের গোড়ায় দিতে হয়।
শরৎ কালের পুজোয় দেবী দুর্গা মোট নয়টি রূপে পূজিত হন। এই নবম কন্যাই হলেন পতিতালয়ের প্রতিনিধি। অষ্টকন্যার পর শেষ পুজোটি তাই তারাই পায়। দুর্গাপুজোয় অষ্টকন্যার ঘরের মাটি নেওয়ার পর নবম কন্যা হিসেবে পতিতালয়ের মাটি সংগ্রহ করা হয়। এই নব কন্যা হলেন নর্তকী বা অভিনেত্রী, কাপালিনি, ধোপানি, নাপিতানি, ব্রাহ্মণী, শূদ্রাণী, গোয়ালিনী, মালিনী ও পতিতা।
এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন, যে মানুষদের এত হেও করা হয়, যে স্থান বিদ্বজনদের কাছে ঘৃণ্যতম, সেই বেশ্যাবাড়ির মাটি কেন দুর্গা প্রতিমা গড়তে ব্যবহার করা হয়? চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক এর প্রকৃত কারণ।
কেন এখানকার মাটি নেওয়া হয়, এই প্রথার পিছনে রয়েছে নানা মুনির নানা মত। এর মধ্যে একটি কারণ হল - পুরুষ পতিতার বাড়ি গিয়ে যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে তাঁর জীবনের সমস্ত সঞ্চিত পুণ্য সেখানেই ফেলে আসেন। বদলে সংগ্রহ করেন ঘড়া ভর্তি পাপ৷ মানুষের মধ্যে থাকা সেই কাম ও লালসা নিজেদের মধ্যে নিয়ে পতিতারা সমাজকে শুদ্ধ রাখেন। ফলে বহু পুরুষের পুণ্যে বেশ্যালয়ের মাটি হয়ে ওঠে পবিত্র৷ সেই কারণেই এখানকার মাটি দিয়ে মা দুর্গার মূর্তি গড়ার প্রথা রয়েছে৷
আরও পড়ুন : দুর্গা পূজা : যে যে সঙ্কেতগুলি বয়ে আনে মা দুর্গার আগমনী বার্তা
আবার পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, পতিতাদের ক্ষমতা নাকি দেবতাদের থেকেও বেশি। কারণ, ঋষি বিশ্বামিত্র যখন ইন্দ্রত্ব লাভের জন্য কঠোর তপস্যা করছিলেন, তখন তাঁর ধ্যান ভঙ্গ করার চেষ্টা করছিলেন দেবরাজ ইন্দ্র। নিজে না পেরে পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঋষির ধ্যানভঙ্গের জন্য স্বর্গের সবচেয়ে সুন্দরী নর্তকী মেনকাকে পাঠান। যদিও ইন্দ্র জানতেন, ঋষির ধ্যান ভঙ্গ করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। কিন্তু পরে ভগবান ইন্দ্র অবাক হলেন। কারণ দেবরাজ ইন্দ্র সর্বশক্তিমান হয়েও যা পারলেন না, সামান্য নর্তকী হয়ে মেনকা তা অনায়াসেই করে ফেললেন। মেনকার নাচে ধ্যান ভঙ্গ হয় বিশ্বামিত্রের। সেই কারণেই জগৎজননী মা দুর্গার মূর্তি তৈরিতে পতিতালয়ের মাটি ব্যবহার করা হয়।
সমাজতাত্ত্বিকদের মতে, প্রত্যেক নারীই মায়ের সমান। নারীর থেকেই জন্ম হয় প্রতিটি পুরুষের। কিন্তু নারীকে পতিতা বানায় এই পুরুষেরাই। তাই যে সকল নারী এই পরিস্থিতির শিকার হন তাঁদের সন্মান করতে অকালবোধনের দুর্গা প্রতিমা বানানোর জন্য নবকন্যার প্রাঙ্গণ-মৃত্তিকা প্রয়োজন। নারী কখনই অপবিত্র হতে পারে না, এই ধারণাটি লুকিয়ে থাকে এই রীতির মধ্যে৷
তবে কারণ যাইহোক না কেন পরিশেষে বলা যায়, সমাজের যে সকল মানুষেরা আজও এই সমস্ত নারীদের অশুদ্ধ বলে দূরে সরিয়ে রাখেন, তাদের দেওয়া মাটি থেকে তৈরি মা দুর্গার মূর্তির সামনেই মাথা নত করতে হয় সেই সকল পুরুষদের। তাই, মায়ের আশীর্বাদে জয়ী কিন্তু এই অবহেলিত পতিতারাই।