Just In
প্রতি শনিবার অশ্বত্থ গাছের সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে জল দান করলে কী কী উপকার মিলতে পারে জানা আছে?
শনিবার অশ্বত্থ গাছের সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে, ধূপ-ধুনো সহকারে যদি পুজো করা যায়, তাহলে শনি দেবের বক্র দৃষ্টির হাত থেকে যেমন রক্ষা মেলে, তেমনি সাড়ে সাতির খপ্পরে পরার আশঙ্কাও কমে।
হিন্দু শাস্ত্রে অশ্বত্থ গাছের বেশ কদর। আর কেন থাকবে নাই বা বলুন! শাস্ত্র মতে এই বিশেষ গাছটির পুজো শুরু করলে নাকি একাধির উপকার মিলতে শুরু করে, বিশেষত শনিবার অশ্বত্থ গাছের সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে, ধূপ-ধুনো সহকারে যদি পুজো করা যায়, তাহলে শনি দেবের বক্র দৃষ্টির হাত থেকে যেমন রক্ষা মেলে, তেমনি সাড়ে সাতির খপ্পরে পরার আশঙ্কাও কমে। এই কারণেই তো প্রতি শনিবার অশ্বত্থ গাছের পুজো করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
এখন প্রশ্ন হল সবাই শনি দেবকে এত ভয় পায় কেন? আসলে বন্ধু কোনও কারণে যদি শনি ঠাকুর ক্ষেপে যান, তাহলে সাড়ে সাতির প্রকোপ শুরু হয়। আর এমন হলে একের পর এক খারাপ ঘটনা ঘটার আশঙ্কা যেমন বেড়ে যায়, তেমনি সামাজিক জীবন থেকে কর্মজীবন সব ক্ষেত্রেই সম্মানহানীর সম্ভাবনাও থাকে। শুধু তাই নয়, আরও নানাবিধ খারাপ ঘটনাও ঘটতে শুরু করে। যেমন ধরুন- হাজারো পরিশ্রম করার পরেও পদন্নতি মেলে না, হঠাৎ করে কোনও দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে এবং মারাত্মক ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতিও হয়। আর শনির এমন খারাপ প্রভাব টানা সাড়ে সাত বছর ধরে চলে। তাই তো শনি দেব যাতে কোনওভাবে রুষ্ট না হন, তা সুনিশ্চিত করতে প্রতি শনিবার সরষের তেস এবং কালো তিল নিবেদন করে দেবের অরাধনা করতে ভুলবেন না যেন! সেই সঙ্গে অশ্বত্থ গাছের পুজো করা তো মাস্ট!
কিন্তু শনি দেবের সঙ্গে অশ্বত্থ গাছের সম্পর্কটা ঠিক কোথায়? পুরান কালে লেখা বেশ কিছু পুঁথি অনুসারে এক সময় কথভ নামে এক রাক্ষস ছিল, যে মুনি-ঋষিদের উপর কারণে-অকারণে ব্যাপক অত্যাচার চালাতো। বিশেষত অশ্বত্থ গাছের পুজো করলে তো আর কোনও রক্ষা নেই। এমন পরিস্থিতিতে একদিন কয়েকজন ঋষি মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন যে তাঁরা শনি দেবের আরাধনা শুরু করেন এবং প্রার্থনা করবেন যাতে শনি দেব এসে কথবের হাত থেকে তাঁদের রক্ষা করে। একসময় মুনি-ঋষিদের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে শনি দেব রাজি হয়ে যান এই ধরাধমে আসার জন্য এবং সেই মতো তিনি ঋষির অবতারে এসে অশ্বত্থ গাছের পুজোর আয়োজন শুরু করে দেন। আর যেই না সে খবর কথবের কাছে পৌঁছায়, আমনি রাক্ষস রাজ সেখানে পৌঁছে যান। এমন সুযোগ পেয়ে কথবের উপর আক্রমণ চালান ঋষির বেশধারী শনি দেব এবং তাকে হত্যা করেন। সেই থেকেই এমন বিশ্বাস মানুষের মনে গেঁছে যায় যে অশ্বত্থ গাছের পুজো করলে শনি দেব নাকি এতটাই প্রসন্ন হন যে ভক্তের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না। এবার নিশ্চয় বুঝেছেন বন্ধু, প্রতি শনিবার অশ্বত্থ গাছের পুজো করার প্রয়োজন কতটা...!
প্রসঙ্গত, প্রতি শনিবার অস্বত্থ গাছের পুজো করলে যে শুধু শনির সাড়ে সাতির খপ্পর থেকে বেঁচে থাকা যায়, এমন নয়, সেই সঙ্গে আরও বেশ কিছু উপকার মেলে। যেমন ধরুন...
১. অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে:
বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন এক মনে অশ্বত্থ গাছের পুজো করলে টাকা-পয়সা সংক্রান্ত নানাবিধ ঝামেলা মিটে যেতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নতিও ঘটে চোখে পরার মতো। ফলে বড়লোক হয়ে ওঠার স্বপ্ন পূরণ হয় চোখের পলকে। আসলে এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে অশ্বত্থ গাছের পুজো করলে মা লক্ষ্মী এবং কুবের দেবের প্রবেশ ঘটে বাড়িতে। ফলে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি পরিবারে সুখের ঝাঁপি খালি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
২. বৈবাহিক জীবনে সুখ-শান্তি বজায় থাকে:
বেশ কিছু সমীক্ষার দিকে যদি নজর ফেরালে দেখতে পাবেন আজকের দিনে কম বয়সিদের মধ্যে ডিভোর্সের হার বাড়ছে চোখে পরার মতো। এমন পরিস্থিতিতে বৈবাহিক জীবনে সুখ-শান্তি বাজায় রাখতে অশ্বত্থ গাছের পুজো করার প্রয়োজন যে বেড়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই! আসলে অ্যাস্ট্রোলজির উপর লেখা একাধিক বই অনুসারে জন্ম কুষ্টির বিবাহ ঘরে যাদের শনি, রাহু, মঙ্গল, কেতু এবং সূর্যের প্রভাব বেশি রয়েছে, তারা যদি নিয়মিত অশ্বত্থ গাছের পুজো শুরু করেন, তাহলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে পরিবারে সুখ এবং সমৃদ্ধির ছোঁয়াও লাগে।
৩. ব্রেন পাওয়া বাড়ে:
বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও শাস্ত্রে এমনটা দাবী করা হয়েছে যে অশ্বত্থ গাছের পুজো করা শুরু করলে ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না। ফলে মনোযোগ ক্ষমতার বিকাশ তো ঘেটেই, সেই সঙ্গে বুদ্ধির ধার বারে চোখে পরার মতো। প্রসঙ্গত, এমনটাও বিশ্বাস করা হয় যে এই বিশেষ গাছটির পুজো করা শুরু করলে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। আর জীবন পথে চলতে চলতে নেওয়া বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই যখন ঠিক হয়, তখন নানা কষ্ট কমে যেতে যে সময় লাগে না, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে!
৪. দেবাদিদেব মহাদেব বেজায় প্রসন্ন হন:
যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে অশ্বত্থ গাছের পুজো করলে মহাদেব বেজায় প্রসন্ন হন। ফলে দেবের আশীর্বাদে কোনও ধরনের বিপদ ঘটার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি কর্মক্ষেত্র থেকে সামাজিক জীবন, সব ক্ষেত্রেই সম্মান বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে কালো যাদুর প্রভাব কমে যেতেও সময় লাগে না।
৫. বাবা-মা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে যাদের জন্মকুষ্টির পঞ্চম ঘরে শনি, মঙ্গল, সূর্য এবং কেতুর প্রভাব বেশি রয়েছে, তাদের বাচ্চা হওয়ার ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এমনকী মিসক্যারেজের সম্ভাবনাও থাকে। এমন পরিস্থিতিতে যদি অশ্বত্থ গাছের পুজো শুরু করা যায়, তাহলে এই সব গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব কমতে শুরু করে। ফলে বাবা-মা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতে সময় লাগে না। তাই তো বলি বন্ধু, যারা হাজারে চেষ্টার পরেও ছেলে-মেয়ের সুখ পাচ্ছেন না, তারা একবার কোনও জ্যোতিষ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে এই বিশেষ গাছটির পুজো শুরু করা শুরু করুন। এতে উপকার যে মিলবে, সে কথা হলফ করে বলা যেতে পারে।
৬. কর্মজীবনে সফলতা স্বাদ মেলে:
শাস্ত্র মতে অশ্বত্থ গাছের পুজো করা শুরু করলে জন্ম কুষ্টিতে বৃহস্পতি গ্রহের অবস্থান জোরালো হতে শুরু করে। ফলে দেব গুরু বৃহস্পতির প্রভাবে কর্মজীবনে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা নানা সমস্যা যেমন মিটে যায়, তেমনি প্রতিপক্ষদের নিকেশ ঘটতেও সময় লাগে না। সেই সঙ্গে পদন্নতির একের পর এক দরজা খুলে যায় চোখের পলকে।
৭. রোগ-ব্যাধি দূরে পালায়:
নানাবিধ রোগের খপ্পরে পরে কি জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে? তাহলে বন্ধু অশ্বত্থ গাছে জল দান করতে ভুলবেন না যেন! কারণ এই গাছটির পুজো শুরু করলে পরিবারের প্রতিটি কোণায় পজেটিভ শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে শরীর যেমন রোগমুক্ত হয়, তেমনি গুড লাক রোজের সঙ্গী হয়ে ওঠে। ফলে মনের চোট থেকে ছোটতর ইচ্ছা পূরণ হতেও সময় লাগে না। তবে অশ্বস্থ গাছের পুজো করার সময় কতগুলি নিয়ম মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন, না হলে কিন্তু কোনও উপকারই পাওয়া যায় না। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে যে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে, সেগুলি হল...
১. পাক খেতে হবে ক্লকওয়াইজ:
অশ্বত্থ গাথের পুজো করার পর যখন পাক খাবেন, তখন খেয়াল করে ক্লকওয়াইজ ঘুরবেন। না হলে কিন্তু কোনও উপকারই মিলবে না।
২. অশ্বত্থ গাছের ক্ষতি করা চলবে না:
বাকি জীবনটা যদি সুখে-শান্তিতে কাটাতে হয়, তাহলে অস্বত্থ গাছের পুজো করতে ভুলবেন না যেন! শুধু তাই নয়, ভুলেও কখনও অশ্বত্থ গাছের চাড়া উপড়ে ফেলবেন না। কারণ এমনটা করলে নাকি নানাবিধ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে।