Just In
দূর্গা পুজোর সময় মা দুগ্গার আশীর্বাদ লাভ করতে কী কী করা উচিত সে সম্পর্কে জানা আছে কি?
হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে এই লেখায় যে নিয়মগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলি মানলে দেবী বেজায় প্রসন্ন হন, ফলে নানাবিধ আলোচিত সুফলগুলি মিলতে সময় লাগে না।
বেশিরভাগ দুগ্গা ভক্তের এমন ধারণা যে ষষ্ঠীর সন্ধ্যা পুজো আর অষ্টমীর অঞ্জলি দিলেই মা এমন "ইমপ্রেস" হয়ে যান যে মনের সব ইচ্ছা জেট স্পিডে পূরণ হতে শুরু করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল বাস্তবে কিন্তু এমনটা হয় না। একথা ঠিক যে মা দুর্গা অল্পতেই খুব খুশি হয়ে যান। কিন্তু তাই বলে শুধু ১-২ দিন পুজো করলেই মায়ের আশীর্বাদ মিলবে, এমনটা ভেবে নিলে কিন্তু ভুল করবেন।
তাহলে উপায়! সত্যিই যদি মায়ের মন জয় করে মনের সব ইচ্ছা পূরণের পাশাপাশি আরও নানা সুফল পেতে চান, যেমন ধরুন- অনেক অনেক টাকার মালিক হয়ে ওঠার স্বপ্ন পূরণ হবে, খারাপ শক্তি দূরে পালাবে, কোনও ধরনের বিপদ ঘটার আশঙ্কা কমবে, সামাজিক সম্মান বৃদ্ধি পাবে, পরিবারের সুখ-শান্তি বজায় থাকবে, কোনও ধরনের বিপদ ঘটার আশঙ্কা যাবে কমে প্রভৃতি, তাহলে এই প্রবন্ধে আলোচনা করা নিয়মগুলি মেনে চলতে ভুলবেন না যেন!
আসলে হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে এই লেখায় যে নিয়মগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলি মানলে দেবী বেজায় প্রসন্ন হন, ফলে উপরে আলোচিত সুফলগুলি মিলতে সময় লাগে না। তাই তো বলি বন্ধু, দুর্গা পুজোর সময় মায়ের মন জয় করে যদি জীবনের প্রতিটি দিনকে আনন্দে ভরিয়ে তুলতে চান, তাহলে যে যে নিমগুলি মানতেই হবে, সেগুলি হল...
১. দুর্গা মন্ত্র পাঠ করা জরুরি:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে পুজোর চারদিন সকাল সকাল স্নান সেরে পরিষ্কার জামা-কাপড় পরে যদি এক মনে ১০৮ বার নানা দুর্গা মন্ত্র জপ করা যায়, তাহলে মা এতটাই খুশি হন যে নানাবিধ সুফল মিলতে সময় লাগে না। এখন প্রশ্ন হল, কী কী দুর্গা মন্ত্র জপ করতে হবে এই চারদিন?
ক. দুর্গা ধ্যান মন্ত্র:
"ওম জাটা জাট সমায়ুক্তমার্ধেনডু ক্রিট লক্ষনাম লোচানেয়াত্রা সনযুক্তাম পাদমেন্দু সদা শন নাম", এই মন্ত্রটি এক মনে ১০৮ বার জপ করলে কর্মক্ষেত্রে চরম সফলতা লাভের পথ প্রশস্ত হয়। সেই সঙ্গে মনোযোগ ক্ষমতারও বিকাশ ঘটে।
খ. দুর্গা শান্তি মন্ত্র:
"রিপভ শঙ্কশাম ইয়ান্তি কল্যাণাম চপ পদ্যাত নান্দতে চ কুলাম পুনসামমহাত্মাম মাম শ্রিনু ইয়ানমাম"। শাস্ত্র মতে দুর্গা পুজোর সময় প্রতিদিন এই মন্ত্রটি পাঠ করলে চারিপাশে উপস্থিত খারাপ শক্তির মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে কোনও ধরনের বিপদ ঘটার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি কুদৃষ্টির কারণে কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও আর থাকে না।
গ. দুর্গা মুক্তি মন্ত্র:
"সর্ব বাঁধা বিনির্মুক্ত ধন ধান্যে সুতানভিতা মনুষ্য মাতপ্রাসাদেন ভবিষ্যতি নম শনশায়াহ"। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে এই মন্ত্রটি নিয়মিত জপ করলে যে কোনও সমস্যা মিটে যেতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে নানাবিধ দুঃখও দূর হয়। শুধু তাই নয়, এই মন্ত্রটি এতটাই শক্তিশালী যে পাঠ করা শুরু করলে মা-বাবা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়।
ঘ. দুর্গা গায়েত্রী মন্ত্র:
"ওম গিরিজায় ভিদমাহে শিব প্রিয়ে ধিমাহে তানো দুর্গা প্রাচোদায়াত", এই মন্ত্রটিকেই দুর্গা গায়েত্রী মন্ত্র বলা হয়ে থাকে। শাস্ত্র মতে এই মন্ত্রটি এতটাই শক্তিশালী যে পাঠ করা মাত্র দেবী এতটাই খুশি হন যে গৃহস্থে মা দুর্গার প্রবেশ ঘটে। আর যে বাড়িতে স্বয়ং মা দুর্গা নিজ আসন পাতেন, সেই পারিবারের ধারে কাছে যে কোনও দুঃখ ঘেঁষতে পারে না, তা তো বলাই বাহুল্য!
২. দুর্গা নাম নিতে হবে:
জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে এক এক রাশির জাতক-জাতিকাদের দুর্গা মায়ের এক একটি রুপের অরাধনা করা উচিত। কারণ এমনটা করলেই নাকি বেশি মাত্রায় সুফল পাওয়া যায়। তাই আপনার রাশির ক্ষেত্রে দেবীর কোন রূপের অরাধনা করলে নানাবিধ উপকার মিলতে পারে, সে সম্পর্কে জেনে নিতে ভুলবেন না যেন! আর সেই মতো দুর্গা পুজোর সময় দেবীর সেই বিশেষ রূপের অরাধনা করলেই দেখবেন কেল্লা ফতে!
৩. জবা ফুলের শক্তি:
হিন্দু শাস্ত্র মতে জবা ফুল মায়ের ভিষণ পছন্দের। তাই তো পুজোর চারদিন যে কোনও পুজো মন্ডপে গিয়ে অথবা বাড়িতে প্রতিষ্টা করা দেবীর ছবি বা মূর্তির সামনে জবা ফুল নিবেদন করে যদি এক মনে মায়ের নাম নিতে পারেন, তাহলে দেখবেন দেবীর আশীর্বাদে জীবন অনন্দে ভরে উঠতে সময় লাগবে না।
৪. চন্ডী পাঠ করতে ভুলবেন না যেন!
দুর্গা মায়ের মন জয় করতে চান, এদিকে কীভাবে তা করবেন সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না? তাহলে বন্ধু নবরাত্রির সময় প্রতিদিন সকাল সকাল স্নান সেরে মায়ের মূর্তি বা ছবির সামনে বসে এক মনে চন্ডী পাঠ করতে ভুলবেন না যেন! কারণ এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে দুর্গা পুজোর সময় চন্ডী পাঠ করলে মা এতটাই প্রসন্ন হন যে ভক্তের মনের সব ইচ্ছা পূরণ হতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, চন্ডী পাঠের পাশাপাশি ইচ্ছা হলে দুর্গা সপ্তশান্তিও পাঠ করতে পারেন। কারণ এমনটা করলেও নাকি সমান উপকার পাওয়া যায়।
৫. মায়েদের সম্মান করবেন:
মা দুর্গা হলেন মাতৃ শক্তির প্রতীক। তাই তো এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে মহিলাদের, বিশেষত মায়েদের যথাযথ সম্মান করলে দেবী এতটাই খুশি হন যে নানাবিধ সুফল মিলতে সময় লাগে না। তাই তো বলি বন্ধু, সারা জীবন মা দুর্গা আপনার উপর আশীর্বাদের হাত রাখুক,এমনটা যদি চান, তাহলে ভুলেও কোনও সময় মহিলাদের অসম্মান করতে যাবেন না যেন!
৬. গরীব মানুষদের সাহায্য করুন:
যারা ক্ষুদার্থ, তাদের প্রাণ খুলে সাহায্য় করুন। আর যদি সামর্থ থাকে, তাহলে পুজোর সময় গরীব মানুষদের নতুন জামা-কাপড় দান করতে ভুলবেন না যেন! আসলে এমনটা করলে মায়ের আশীর্বাদে আপনার জীবনের প্রতিটি দিন এত অনন্দে ভরে উঠবে যে দুঃখ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারবে না।
৭. উপোস করা মাস্ট:
পুজোর যে কোনও চারদিন, তবে অষ্টমির দিন হলে ভাল, উপোস করে করে এক মনে মায়ের নাম নিতে হবে এবং দেবীর আরাধনা করতে বহে। এমনটা করলেই দেখবেন দুগ্গা মা এতটাই প্রসন্ন হবেন যে জীবনে সুখ ও শান্তির ছোঁয়া লাগতে সময় লাগবে না। শুধু তাই নয়, মায়ের আশীর্বাদে মনের মণিকোঠায় যত্নে সাজানো প্রতিটি ইচ্ছাও পূরণ হবে চোখের পলকে!
৮. নবমীর বিশেষ পুজো:
শাস্ত্রে মতে নবমীর দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে মায়ের সামনে সিঁদুর, চন্দনের পেস্ট, লাল কাপড়, পান পাতা, জবা ফুল এবং পাঁচ ধরনের ফল রেখে এক মনে যে কোনও একটা দুর্গা মন্ত্র জপ করুন। আর মন্ত্র পাঠের পর দেবীর সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে মনের যা ইচ্ছা তা মাকে জানান, দেখবেন দেবীর আশীর্বাদে সমস্ত স্বপ্নপূরণ হতে সময় লাগবে না।