Just In
নানা রঙে নবরাত্রি! নবরাত্রির সাথে ন'টি রঙের তাৎপর্য কী জেনে নিন
নবরাত্রি এসেই গেল, আর তাই ঘিরে সবার আনন্দ, উত্তেজনার সীমা নেই। নবরাত্রির সাথে আমাদের মনে কিছু চিত্র ফুটে ওঠে। নবরাত্রি মানেই রঙিন পোশাক, আত্মীয়, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে গর্বার নাচে পা মেলানো। সারা বছর ধরে অপেক্ষা থাকে এই উৎসবটির। নবরাত্রির প্রতিটি দিনের সাথে এক একটা রঙের সম্পর্ক মানা হয় ও তার পেছনে একটা করে কারণও থাকে। দিন ও রঙ অনুযায়ী সবাই সেজে ওঠে।
অনেকেরই হয়ত জানা আছে এই রঙের সাথে দিন মেলানোর গল্পটা। এই নয় দিনে, দেবী দুর্গার ন'টি আলাদা রুপে পুজার্চনা হয়ে থাকে। এই এক একদিনের দেবীর রুপের সাথে মানিয়ে ওনাকে সাজানো হয়ে থাকে। তবে রঙগুলো দেখে থাকলেও আমরা অনেকেই হয়ত এই রঙের তাৎপর্য সম্পর্কে ঠিকঠাক জানিনা। তাই স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের মনে কৌতূহল, এই রঙের মানেগুলো জানার। এই প্রবন্ধে তাই এই নয় রুপের সাথে ন'টি রঙের তাৎপর্য বোঝানো হল বিশদে।
১.প্রথম দিন (লাল)
নবরাত্রির প্রথম দিন হল প্রতিপদ। শৈলাপুত্রী বা পর্বত কন্যা বলে এই দিনে আরাধনা হয়ে থাকে ওনার। এই রুপেই ওনার সাধারণত মহাদেবের অর্ধাঙ্গিনী রুপে ওনার পুজো হয়ে থাকে। প্রতিপদের লাল রঙ হল শক্তি ও উদ্দমের পরিচায়ক। এই রঙটি হল উষ্ণতা ও শক্তির প্রতীক।
২.দ্বিতীয় দিন (গাঢ় নীল)
দ্বিতীয় দিন (দ্বিতীয়া) মা ব্রহ্মচারীর রুপ নেয়। ব্রহ্মচারিণীর রুপে দেবী সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের ডালি সাজিয়ে আনেন। এই দিনের রঙ হল ময়ূরকন্ঠী। নীল রঙ হল শান্তি ও পরম শক্তির প্রতীক।
৩.তৃতীয় দিন (হলুদ)
উৎসবের তৃতীয় দিনে (তৃতীয়া) দেবী দুর্গা চন্দ্রঘন্টা রুপে আবির্ভূত হন। এই রুপে দেবী দুর্গার কপালে থাকে অর্ধ চন্দ্র,যা কিনা অসীম সাহস ও সৌন্দর্য্যের প্রতীক। চন্দ্রঘন্টা হলেন দেবীর সেই শক্তির রুপ, যা অসুর বিনাশিনী। হলুদ হল এই দিনের রঙ, যা কিনা উজ্জ্বলতার প্রতীক ও সবার মনকে করে তোলে উদ্দীপ্ত।
৪.চতুর্থ দিন (সবুজ)
চতুর্থী বা উৎসবের চতুর্থ দিনে দেবী দুর্গা নেন কুষ্মাণ্ড রুপ। এই দিনের রঙ হল সবুজ। এই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা হল কুষ্মাণ্ড। মনে করা হয় যে তাঁর হাসিতেই এই পৃথিবী হয়ে উঠেছে সবুজ,শ্যামল ও সুফলা।
৫.পঞ্চম দিন (ধূসর)
নবরাত্রির পঞ্চম দিনে (পঞ্চমি) দেবী দুর্গা "স্কন্দ মাতা"-র অবতারে অবতীর্ণ হন। ওনার শক্তিশালী বাহুতে দেখা যায় শিশু কার্তিক দেবকে। এই ধূসর রঙ হল এমন এক মাতৃ রুপ, যেখানে নিজের সন্তানের কোন বিপদ বা সঙ্কটে মা ঘূর্ণিরুপে সব ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখেন। সন্তানের সুরক্ষাই সর্বোপরি।
৬.ষষ্ঠ দিন (কমলা)
ষষ্ঠীর দিন দেবী দুর্গার "কাত্যায়নী" রুপ। মনে করা হয়ে থাকে, কোনও এক কালে কাতা নামক এক অতি বিখ্যাত ঋষি ঘোর তপস্যা করেন দেবী দুর্গাকে নিজের কন্যা রুপে লাভ করার জন্য। ওনার এই প্রচেষ্টায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবী দুর্গা ওনার মনোকামনা পূর্ণ করেন। তিনি ঋষি কাতার কন্যারুপে জন্ম গ্রহণ করেন। পরণে ছিল কমলা রঙের বস্ত্র, যা কিনা অসীম সাহসের প্রতীক বলে মনে করা হয়।
৭.সপ্তম দিন (সাদা)
সপ্তমীর দিন মা দুর্গার কালরাত্রি রুপ। দেবীর এটাই সবচেয়ে উগ্র, হিংসাত্মক রুপ মনে করা হয়। চোখে ভয়ানক আগুনের রোষ নিয়ে দেবীকে এই দিনে সাদা বসনে দেখা যায় বলে মানা হয়ে থাকে। সাদার সঙ্কেত হল আক্রোশের মাঝেও উনি শান্তি ও কল্যাণ কামনাকরী। দেবী তার ভক্তদের সবরকমের বিপদ থেকে রক্ষা করবেন।
৮.অষ্টম দিন (গোলাপি)
অষ্টমি বা নবরাত্রিট অষ্টম দিনের রঙ হল গোলাপি। এই দিনেই দেবী দুর্গা সব পাপের মোচন করেন বলে মনে করা হয়। গোলাপি হল আশার প্রতীক, এক নতুন শুরুর সূচক।
৯.নবম দিন (হালকা নীল)
নবরাত্রির নবম দিনে, দেবী দুর্গা "সিদ্ধিদাত্রীর" রুপ ধারণ করেন। এই দিনে তার আভূষণ হালকা নীল। সিদ্ধিদাত্রী রুপের আছে অতিমানবীয় আরোগ্য ক্ষমতা। আকাশী নীল যেন প্রকৃতির রুপেরও প্রতি মুগ্ধ হওয়ার প্রকাশ।