Just In
তুলসি পাতাকে ভুলেও এইসব কাজে লাগাবেন না যেন! না হলে কিন্তু...
একাদশী এবং রবিবারের পাশাপাশি সূর্য এবং চন্দ্র গ্রহণের সময় ভুলেও তুলসি পাতা ছেঁড়া উচিত নয়।
শাস্ত্র মতে বাড়িতে তুলসি গাছ এনে রাখলে নানা উপকার পাওয়া যায়। মূলত বাড়ির প্রতিটি কোনায় পজেটিভ শক্তির বিকাশ এত মাত্রায় ঘটে যে কোনও ধরনের রোগ ব্যাধি ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। শুধু তাই নয়, সে বাড়িতে যমদূতেরাও প্রবেশ করতে পারে না। ফলে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের আয়ু বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো। তবে এখানেই শেষ নয়, কথায় বলে নিয়মিত তুলসি গাছের পুজো করলে মেলে আরও অনেক উপকার।
হিন্দু শাস্ত্রের উপর লেখা একাধিক বইয়ে এমনটা উল্লেখ পাওয়া যায় যে তুলসি গাছের পুজো করার সময় "নমো নামাহ তুলসি! কৃষ্ণ প্রয়সি রাধা কৃষ্ণ সেভা পাবো ই আভিলাশি", এই মন্ত্রটি পাঠ করতে পারেন, তাহলে আরও বেশি করে উপকার পাওয়া যায়। তাই অফুরন্ত সুখ-সমৃদ্ধ এবং সুস্থ শরীরের অধিকারী হয়ে উঠতে যদি চান, তাহলে নিয়মিত মা তুলসির পুজো করতে ভুলবেন না। প্রসঙ্গেত, যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে মায়ের আরাধনায় লিপ্ত হলে মেলে আরও অনেক উপকার। যেমন ধরুন...
১. পাপের শাস্তি পাওয়া থেকে রক্ষা মেলে:
হিন্দু শাস্ত্র মতে বাড়ির বাইয়ে যাওয়ার সময় আথবা বাড়িতে আসার সময় তুলসা গাছ দেখলে সব ধরনের পাপের হাত থেকে রক্ষা মেলে। শুধু তাই নয়, ব্রাহ্মণ হত্যার মতো পাপ করলেও কোনও ধরনের শাস্তি মেলে না যদি কেউ বাড়ির বাইরে থেকে আসার সময় তুলসি গাছের সামনে দিয়ে আসে তো!
২. তুলসি গাছের পেস্ট:
শাস্ত্র মতে প্রতিদিন তুলতি গাছের ডালকে বেঁটে বানানো পেস্ট দিয়ে যদি ভগবান কৃষ্ণের পুজো করা যায়, তাহলে পার্থ এতটাই প্রসন্ন হন যে ভক্তের উপর থেকে নেক দৃষ্টি কখনও সরিয়ে নেন না। ফলে জীবনে কখনও প্রেমের ঘাটতি দেখা দেয় না। সেই সঙ্গে নানাবিধ বাঁধা যেমন সরে যায়, তেমনি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও ঘটে চোখে পরার মতো। তাই টাকা-পয়সা সংক্রান্ত কোনও ধরনের সমস্য়ার সম্মুখিন যদি হয়ে থাকেন, তাহলে তুলসি গাছকে কাজে লাগিয়ে ভগবান কৃষ্ণের পুজো করা শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন।
৩. তুলসি গাঁথা:
হিন্দু শাস্ত্রের দিকে যদি নজর ফেরালে জানতে পারবেন যারা নিয়মিত তুলসি মায়ের পুজো করেন অথবা তুলসি মায়ের ক্ষমতা সম্পর্কে সবাইকে গল্প করে থাকেন, তাদের পুনরায় জন্ম নেওয়ার কোনও সম্ভাবনা থাকে না।
৪. ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদ লাভ হয়:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে বাড়িতে নিয়মিত তুলসি গাছের পুজো করা হয়, সে বাড়িতে প্রতি মুহূর্তে ভগবান বিষ্ণুর নেক দৃষ্টি থাকে। তাই তো কখনও কোনও খারাপ ঘটনা ঘটে না। সেই সঙ্গে নানাবিধ অসুখে ভোগার আশঙ্কা যেমন হ্রাস পায়, তেমনি ছোট-বড় যে কোনও ধরনের অর্থনৈতিক বাঁধার সম্মুখিন হওয়ার সম্ভাবনাও যায় কমে।
৫. শরীর এবং মন শুদ্ধ হয়:
শাস্ত্র মতে যে বাড়িতে তুলসি গাছ রাখা হয়, সে বাড়ির প্রতিটি কোণায় বাতাসের সঙ্গে তুলসি গাছের গন্ধ ছডিয়ে পরে, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্য়মে আমাদের শরীরে প্রবেশ করার ফলে মন যেমন শুদ্ধ হয়ে ওঠে, তেমনি শরীরের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, মনের অন্দরে জায়গা পাওয়া নানা কুকথা এবং খারাপ চিন্তাও মিটে যেতে শুরু করে তুলসির সুগন্ধে।
৬. তুলসি মাটি:
১০০ দিন শ্রী কৃষ্ণের আরাধনা করলে যে উপকার পাওয়া যায়, সেই সমান উপকার পাওয়া যায় প্রতিদিন সকালবেলা অল্প পরিমাণে তুলসি মাটি গায়ে লাগিয়ে ভগবান কৃষ্ণের পুজো করলে। তাই অপার সুখের সন্ধান পেতে যদি চান, তাহলে তুলসি মায়ের হাত ধরে ভগবান কৃষ্ণের আরধনায় বিলীন হয়ে যান। দেখবেন সব ধরনের কষ্ট মিটে যাবে।
৭. পুজোর কাজে লাগে:
খেয়াল করে দেখবেন তুলসি গাছের শরীরের প্রতিটি অংশ কোনও না কোনওভাবে পুজোর কাজে লেগে থাকে। কখনও তুলসি পাতা, তো কখনও ফুল, মূল বা ডাল কাজে লাগানো হয়ে থাকে নানা পুজো সম্পন্ন করতে। তাই বাড়িতে তুলসি গাছ থাকার অর্থ হল ধর্মের জাগরণ ঘটা। আর যেখানে স্পিরিচুয়াল শক্তির বিকাশ ঘটে, সেখানে নেগেটিভ শক্তি জায়গাই করে উঠতে পারে না। ফলে নানাবিধ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।
একথা ঠিক যে তুলসা গাছের সংস্পর্শ এলে নানা উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু এমন কিছু কাজ রয়েছে, যাতে তুলসি পাতাকে কাজে লাগালে দেবী তুলসি এতটাই রুষ্ট হন যে কোনও উপকার তো পাওয়া যায়ই না, উল্টে একের পর এক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা যায় বেড়ে। এমনকী পরিবারে কারও মারাত্মক শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই সুখে-শান্তিতে যদি থাকতে হয়, তাহলে ভুলেও তুলসি পাতেকে এই সব কাজে লাগাবেন না যেন! যেমন ধরুন...
১. চুলসি পাতা কখনও চিবোবেন না:
একাধিক রোগকে দূরে রাখতে তুলসি পাতা কাজে আসে ঠিকই। কিন্তু ভুলেও তুলসি পাতা চেবানো উচিত নয়। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে এই পাতাটির অন্দরে উপস্থিত একাধিক উপাদান দাঁতের সংস্পর্শে এলে মাড়ি এবং দাঁতের মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলে। এই কারণেই তো তুলসি পাতা চিবিয়ে খেতে মানা করা হয়।
২. শিব ঠাকুরের পুজো করারা সময় ভুলেও তুলসি পাতা নিবেদন করবেন না যেন!
দেবী তুলসির স্বামী ছিলেন রাক্ষস রাজ জলন্ধর। যাঁকে অমরত্বের আশীর্বাদ দিয়েছিলেন দেবেরা। কিন্তু যখন ত্রিভুবন জয়ের নেশায় জলন্ধর, দেবতাদের উপরই আক্রমণ শুরু করেছিলেন, তখন ছলনার আশ্রয় নিয়ে দেবাদিদেব, রাক্ষস রাজকে বধ করেন। এই বিষয়ে জানার পর দেবী তুলসি এতটাই দুঃখ পান যে শিব ঠাকুরকে অভিষাপ দেন যে তার পুজোয় কখনও তুলসি পাতা ব্যবহার করা হবে না। সেই থেকে দেবের পুজোয় কখনও তুলিস পাতা নিবেদন করা হয় না।
৩. বিশেষ কিছু দিনে তুলসি পাতা ছেঁড়া উচিত নয়:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে একাদশী এবং রবিবারের পাশাপাশি সূর্য এবং চন্দ্র গ্রহণের সময় ভুলেও তুলসি পাতা ছেঁড়া উচিত নয়। কারণ এমনটা করলে দেবী তুলসি বেজায় ক্ষুন্ন হয়, ফলে তাঁর অভিষাপে জটিল কোনও রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে। শুধু তাই নয়, পরিবারে কারও মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। তাই তো বলি বন্ধু, সুখ-শান্তিতে যদি থাকতে চান, তাহলে ভুলেও এই বিশেষ দিনগুলিতে তুলসি পাতা ছিঁড়বেন না যেন!
৪. গণেশ ঠাকুরের পুজোয় তুলসি পাতা ব্যবহার করবেন না:
হিন্দু শাস্ত্রের উপর লেখা একাধিক বইয়ে এমনটা উল্লেখ পাওয়া যায় যে কোনও এক সময় শ্রী গণেশ এবং দেবী তুলসির মধ্যে এমন বিবাদ লেগেছিল যে একে অপরকে তাঁরা অভিষাপ দিয়েছিলেন। সেই থেকে গণেশ দেবের পুজোয় ভুলেও তুলসি পাতা ব্যবহার করা হয় না। তাই আপনিও যেন কখনও এই ভুল কাজটি যেন করবেন না। কারণ এমনটা করলে কোনও উপকার তো পাবেনই না, উল্টে বেজায় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে কিন্তু!
৫. বাড়ির ভিতরে কখনও তুলসি পাতা রাখবেন না:
রাক্ষস রাজ জলন্ধরের মৃত্যুর পর ভগবান বিষ্ণু, দেবী তুলসিকে আশীর্বাদ করেন যে তিনি প্রতিটি গৃহস্থে জয়গা করে নেবেন। আর যারাই বাড়িতে তুলসি গাছ নিয়ে আসবেন, তার উপর সারা জীবন ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদ থাকবে। এই কারণেই তো প্রতিটি বাড়িতে তুলসি গাছ লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু ভুলেও তুলসি গাছ বাড়ির ভিতরে রাখা চলবে না! কারণ এমনটা করলে তুলসা পাতা শুকিয়ে যেতে পারে। আর তুলসি গাছ শুকিয়ে যাওয়া একেবারেই শুভ ঘঠনা নয় কিন্তু!