Just In
নবরাত্রি ২০২০ : জেনে নিন নবরাত্রির নয়টি রাতের তাৎপর্য
দুর্গাপুজো ও নবরাত্রি একে অপরের পরিপূরক। শরৎ কালে ভারতের একপ্রান্ত যখন শারদীয়া বা দেবী দুর্গার আরাধনায় মেতে ওঠে তখন ভারতের অন্যপ্রান্ত মেতে ওঠে নবরাত্রি পালনে। এইবছর ইংরাজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নবরাত্রি শুরু হবে ১৭ অক্টোবর থেকে। হিন্দু শাস্ত্র মতে, পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা অর্থাৎ মহালয়ার পরের দিন প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত এই নয় রাত্রি ধরে মা দুর্গার নয়টি শক্তির পূজাকেই 'নবরাত্রি' বলা হয়। মা দুর্গার এই নয়টি শক্তি 'নবদুর্গা' নামে পরিচিত। প্রত্যেকটি রুপ আলাদা আলাদা অর্থ বহন করে। সেগুলি হল-
ক) শৈলপুত্রী : নবরাত্রির প্রথম রাতে পুজো হয় নবদুর্গার প্রথম রুপ শৈলপুত্রী। শৈল মানে হল পাহাড় বা পর্বত। আর, দুর্গা হলেন হিমালয় পর্বতের কন্যা। যেহেতু, তিনি হিমালয় পর্বতের কন্যা সেহেতু, তাঁর নাম শৈলপুত্রী। এখানে দেবীর বাহন হল ষাঁড়। তাঁর এক হাতে থাকে ত্রিশূল এবং অন্যহাতে থাকে পদ্ম।
খ) ব্রহ্মচারিণী : দ্বীতিয় রাতে পুজো হয় নবদুর্গার দ্বীতিয় রুপ ব্রহ্মচারিণী। যিনি ব্রহ্মাকে স্বয়ং জ্ঞান দান করেন, ভক্তকেও ইনিই ব্রহ্মপ্রাপ্তি করান। এখানে তাঁর এক হাতে থাকে রুদ্রাক্ষের জপমালা এবং অন্যহাতে থাকে কমণ্ডলু।
গ) চন্দ্রঘণ্টা : তৃতীয় রাতে পুজো হয় নবদুর্গার তৃতীয় রুপ চন্দ্রঘণ্টা। এখানে তাঁর মাথায় থাকে চাঁদ। দেবীদুর্গার মহিষাসুর বধের জন্য দেবরাজ ইন্দ্রের প্রদত্ত ঘণ্টা যার মধ্যে গজরাজ ঐরাবতের মহাশক্তি নিহিত ছিল, চন্দ্রের চেয়েও সুন্দরী ইনি।
ঘ) কুষ্মান্ডা : নবরাত্রির চতুর্থ রাতে পুজো হয় নবদুর্গার চতুর্থ রুপ কুষ্মান্ডা। উষ্মার অর্থ তাপ । দুর্বিষহ ত্রিতাপ হল কুষ্মা, যিনি এই ত্রিতাপ নিজের উদরে বা অন্ডে ধারণ করেন। কথিত আছে, দেবী তাঁর এই রুপে মহাবিশ্বের সৃষ্টি করেছিলেন। তাই, তিনি এই পুরো মহাবিশ্বের স্রষ্টা হিসেবে পূজিত হন।
ঙ) স্কন্দমাতা : পঞ্চম রাতে পুজো হয় নবদুর্গার পঞ্চম রুপ স্কন্দমাতা। কার্তিকের আর এক নাম স্কন্দ। আর দেবী হলেন দেব সেনাপতি কার্তিকেয় বা স্কন্দের মা।
চ) কাত্যায়নী : ষষ্ঠ রাতে পুজো হয় নবদুর্গার ষষ্ঠ রুপ কাত্যায়নী। পুরাণ অনুযায়ী, কাত্যায়ন নামে এক ঋষি ছিলেন, দেবী দুর্গা তাঁর কন্যা রুপে জন্ম নেন। তাই, দুর্গার এই রুপের নাম কাত্যায়নী।
ছ) কালরাত্রি : সপ্তম রাতে পুজো হয় নবদুর্গার সপ্তম রুপ কালরাত্রি। অনন্ত মহাকাশে নৃত্যরত কালভৈরবের দেহ থেকেই আবির্ভূতা ইনি দেবী যোগনিদ্রা মহাকালিকা বা কালরাত্রি নামে পরিচিত। কালরাত্রি ভীষণদর্শনা দেবী। তাঁর গায়ের রং কৃষ্ণবর্ণা। তিনি এলোকেশী। তাঁর গলায় বজ্রের মালা দোলে। তিনি ত্রিনয়না। তাঁর নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে ভয়ংকর অগ্নিশিখা নির্গত হয়। কালরাত্রির বাহন গাধা। তিনি চতুর্ভূজা; তাঁর চার হাতে বর ও অভয়মুদ্রা এবং খড়্গ ও লোহার কাঁটা রয়েছে। কালরাত্রির রূপ ভয়ংকর হলেও তিনি শুভফলের দেবী। বিশ্বাস করা হয় যে, কালরাত্রি দুষ্টের দমন করেন, গ্রহের বাধা দূর করেন এবং ভক্তদের আগুন, জল, জন্তুজানোয়ার, শত্রু ও রাত্রির ভয় থেকে মুক্ত করেন। কালরাত্রির উপাসনা করলেই দৈত্য, দানব, রাক্ষস, ভূত, প্রেত পালিয়ে যায়।
জ) মহাগৌরি : অষ্টম রাতে পুজো হয় নবদুর্গার অষ্টম রুপ মহাগৌরি। তিনি সন্তানবত্সলা, শিবসোহাগিনী, বিদ্যুদ্বর্ণা মা দুর্গার প্রসন্ন মূর্তি। বিশ্বাস করা হয় যে, নবরাত্রির অষ্টম রাতে তাঁর পুজো করলে সব পাপ ধুয়ে যায়। মহাগৌরী সাদা রঙের পোষাকে সজ্জিত থাকে। চার হাত বিশিষ্টা এই দেবীর বাহন ষাঁড়।
ঝ) সিদ্ধিদাত্রী : নবরাত্রির শেষ তথা নবম রাতে নবদুর্গার শেষ রুপ হল সিদ্ধিদাত্রী। সিদ্ধিদাত্রী পদ্মের উপর অধিষ্ঠিত থাকেন। অপরূপ লাবণ্যময়ী চতুর্ভুজা, ত্রিনয়নী, প্রাতঃসূর্যের মত রঞ্জিতা যোগমায়া মাহেশ্বরী ইনি সকল কাজে সিদ্ধি প্রদান করেন।
মা দুর্গার নয়টি রুপ নবরাত্রিতে প্রতিটি রাতের তাৎপর্য বহন করে। শরতকালীন এই নবরাত্রি উত্সবকে বলা হয় শারদ নবরাত্রি। মূলত, এটি শক্তির আরাধনা। নবরাত্রির পরদিন বিজয়া দশমীর সাথে সাথে এই শক্তিপূজার সমাপণ হয়।