Just In
মহাশিবরাত্রি : জানেন কি শিবরাত্রিতে ভগবান শিবের পুজো করলে কী কী উপকার পাওয়া যায়?
হর হর মহাদেব! সকাল থেকেই এই মন্ত্র ধ্বনিতে যেন বার বার কেঁপে উঠছে আকাশ-বাতাস। কারণ, চলে এল শিবরাত্রি। এইবছর, আগামীকাল অর্থাৎ পয়লা মার্চ পালিত হবে শিবরাত্রি। এই দিনে দেবাদিদেবের পুজো করলে যে স্বর্গের রাস্তা উন্মুক্ত হয়ে যাবে! শুধু কি তাই! মিলবে আরও নানান উপকার।
এই দিনে সকাল সকাল উঠে স্নান সেরে পৌঁছে যেতে যবে শিব মন্দির। সেখানে গঙ্গা জল দিয়ে পুজো করতে হবে মা পার্বতী এবং মহাদেবের। তারপর শিব লিঙ্গে জল ঢালার পালা। একাজ সম্পন্ন হওয়ার পর জল এবং দুধ এক সঙ্গে মিশিয়ে স্নান করাতে হবে সর্বশক্তিমানকে। এই সময় থেকেই শুরু হয়ে যাবে শিবরাত্রির বিশেষ পুজো। এরপর একে একে দুধ এবং ঘি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে শিবলিঙ্গের শরীর। আর সব শেষে মধু, আখের রস এবং বেল পাতা দিয়ে নিবেদন করতে হবে বিশেষ পুজো। প্রথম ধাপ ঠিক মতো শেষ হওয়ার পর ডান হাতের তিনটি আঙুল দিয়ে চন্দনের তিনটি লাইন এঁকে দিতে হবে শিব লিঙ্গের শরীরে। এই তিনটি লাইন কেন আঁকা হয় জানা আছে? একাধিক প্রাচীন গ্রন্থ অনুসারে এই তিনটি লাইন হল জ্ঞান, পবিত্রতা এবং ব্রত-এর প্রতীক।
যে প্রশ্নটা দিয়ে প্রবন্ধটি লেখা শুরু করেছিলাম, এবার সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পালা। আজকের দিনে দেবাদিদেবের পুজো করলে কী কী উপকার মেলে এ সম্পর্কে খোঁজ লাগাতে গিয়ে উঠে এসেছে নানা আকর্ষণীয় তথ্য। যেমন...
১. রোগমুক্ত জীবনের পথ প্রশস্ত হয়:
শাস্ত্র মতে দেবতাদের মধ্যে সবর্শক্তিমান হলেন মহাদেব। তাই তো একাগ্রতার সঙ্গে তার পুজো করলে দেহের অন্দরে এমন পজেটিভ শক্তির বিকাশ ঘটতে থাকে যে রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি মিলতে সময়ই লাগে না। শুধু তাই নয়, নিয়মিত ভগবান শিবের মন্ত্র যপ করলে ব্রেন পাওয়ার মারাত্মক বৃদ্ধি পায়। তাই তো শুধুমাত্র শিবরাত্রিরের দিনে নয়, প্রতিদিন সকালে স্নান সেরে "হর হর মহাদেব" অথব "ওম নমঃ শীবায়, ওম নম ভগবতে রুদ্রায়!", এই মন্ত্রটি দুটির কোনও একটি জপ করলে মেবলে নানা উপকার।
২. পারিবারিক জীবন সুখময় হয়:
জীবন মানেই সমস্যা। একথা নিশ্চয় মানেন? কিন্তু একথা কি জানেন যে ভগবান শিবের পুজো করলে, বিশেষত আজকের দিনে, হাজারো সমস্যার মাঝেও পরিবারে শান্তি বজায় থাকে। শুধু তাই নয়, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার সম্পর্কেরও উন্নতি ঘটে। আর একথা কেনা জানে বলুন যে পরিবারিক জীবন যদি শান্তিময় হয়, তাহলে সামাজিক জীবনে আসা নানা বাঁধা সরে যেতে একেবারেই সময় লাগে না।
৩. মন শান্ত হয়:
আমাদের মন হল এক পাগলা ঘোড়া। যাকে নিযন্ত্রণে আনতে আমরা খুব একটা চেষ্টা করি না বলেই তো দুঃখের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারি না কখনও। আর এখনেই ভগবান শিব আমাদের রাস্তা দেখায়। কীভাবে তাই জানতে চান তো? শাস্ত্র মতে শিবরাত্রির দিন থেকে শিবের পুজো করা শুরু করলে ব্রেন পাওয়ার বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে মনযোগ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মন ধীরে ধীরে শান্ত হতে শুরু করে। এক্ষেত্রে যেহেতু একমনে ভগবান শীবের নাম করতে হয়, ফলে এমনটা করার সময় প্রাণায়ামের মতো সুফল মেলে। ফলে মন নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে একেবারেই সময় লাগে না। আর একবার মন বাবাজি বাগে এসে গেলে জীবনের পথ বেজায় সরল হয়ে যায়!
৪. আয়ু বৃদ্ধি পায়:
একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে আজকের দিনে মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করলে শরীরের অন্দরের শক্তি এতটা বৃদ্ধি পায় যে জটিল সব রোগ ব্যাধি কমে যেতে সময় লাগে না। আর যদি নিয়মিত এই শক্তিশালী মন্ত্রটা পাঠ করতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই! সেক্ষেত্রে আয়ু বাড়ার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। নানাবিধ প্রাচীন পুঁথি ঘেঁটে জানতে পারা যায় হাজার হাজার বছর ধরে জীবনকে রোগমুক্ত রাখতে সাধু-সন্ন্যাসীরা মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করে থাকেন। তারা যদি এর থেকে সুফল পেতে পারেন, তো আপনি পাবেন না কেন?
৫. মনবল বৃদ্ধি পায়:
আজকের দিনে শিবের পুজো করার পর যদি রুদ্রাক্ষের মালা পড়তে পারেন, তাহলে মনের জোর বাড়তে সময় লাগে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে ঘরে-বাইরে এত মানসিক চাপ সহ্য করতে হয়, সেখানে শিবমন্ত্র পাঠ এবং রুদ্রাক্ষের মালা পড়লে যে বেজায় উপকার পাওয়া যায়, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
৬. পাপের থেকে মুক্তি মেলে:
জীবন পথে এগতে এগতে কিছু না কিছু ভুল আমরা কম-বেশি সকলেই করে থাকি। তাই তো মহা শিবরাত্রির দিন মাহদেবের পুজো করার পর কাল ভৌরবের পুজো করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ এমনটা করলে পাপের জাল থেকে মুক্তি মেলে। ফলে মৃত্যু পরবর্তি জীবনে স্বর্গলাভের সম্ভাবনা বাড়ে। প্রসঙ্গত, মৃত্যুর পর আদৌ কোনও জগত রয়েছে কিনা সে নিয়ে বিতর্কের অবসান এখনও হয়নি। তাই স্বর্গ লাভের আশায় নয়, মনশুদ্ধির উদ্দেশ্যে মহাকালের পুজো করুন আজকের দিনে। দেখবেন ফল পাবেন একেবারে হাতে-নাতে!
মহা শিবরাত্রির সম্পর্কে কিছু আজনা তথ্য:
১. ফালগুন মাসের ১৪ তম রাত্রে, কৃষ্ণ পক্ষে শিবের আরাধনা করা হয়ে থাকে। এই দিন আসুদ্র-হিমাচল কেঁপে ওঠে "হর হর মহাদেব ধ্বনিতে"।
২. মহা শিবরাত্রির দিন মাহেদের সঙ্গে বিবাব বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন মা পার্বতী।
৩. আজকের দিনে এক মনে ভগবান শিবের পুজো করলে "ইগো" নামক সবথেকে ক্ষতিকর ইমোশনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কারণ ভগবান শিব আমাদের মনের অন্দরে লুকিয়ে থাকা নানা খারাপ চিন্তাকে তার তৃতীয় চক্ষু থেকে বেরিয়ে আসা আগুনের সাহায্যে পুড়িয়ে ছাইয়ে পরিণত করে। ফলে একজন ভল, পরিণত মানুষ হিসেবে জীবন অতিবাহীত করার সুযোগ পাই আমরা।
৪. অনেক বইয়ে এমনও উল্লেখ পাওয়া যায় যে আজকের দিনে মহাদেব এমন তান্ডব নৃত্য শুরু করেছিলেন যে সারা পৃথিবী ধ্বংসের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছিল। এমন ভয়নক পরিস্থিতিতে দেবতারা মহাদেবকে শান্ত করার জন্য বিশেষ পুজো শুরু করেছিলেন। সেই থেকেই আজকের দিনে শিবের বিশেষ পুজো করার রীতি শুরু হয়।