Just In
প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল-বিকাল হরে কৃষ্ণ মন্ত্র জপ করা উচিত কেন জানা আছে?
হিন্দু শাস্ত্রে মহামন্ত্রের মর্যাদা পাওয়া শ্লোকগুলির অন্যতম হল এই "হরে কৃষ্ণ মন্ত্র"।
হিন্দু শাস্ত্রে মহামন্ত্রের মর্যাদা পাওয়া শ্লোকগুলির অন্যতম হল এই "হরে কৃষ্ণ মন্ত্র"। এমনকি কালী সন্তর্না উপনিষদে এমনও দাবি করা হয়েছে যে কলি যুগে নানা বিপদ থেকে বাঁচতে এবং সুখ-শান্তিতে থাকতে এই মন্ত্রটি জপ করা মাস্ট! কারণ এই স্তোত্রটির অন্দরে এমন শক্তি মজুত রয়েছে যে তা আমাদের আশেপাশে উপস্থিত খারাপ শক্তির প্রভাবকে কমিয়ে ফেলে। ফলে দুঃখের সময় কেটে যেতেও সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, এই মন্ত্রটি নিয়মিত জপ করা শুরু করলে আরও অনেক উপকার পাওয়া যায়, যে সম্পর্কে এই প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তবে একটা কথা বলতে পারি বন্ধু, মনে বিশ্বাস নিয়ে একবার যদি এই মন্ত্রটি জপ করতে পারেন, তাহলে জীবন বদলে যেতে যে একেবারেই সময় লাগবে না, তা বলাই বাহুল্য!
হরে কৃষ্ণ মন্ত্রে ১৬ টি অক্ষর রয়েছে এবং শব্দ রয়েছে মাত্র তিনটি, "হরে", "কৃষ্ণ" এবং "রাম"। অর্থাৎ এই মন্ত্রে ভগবান বিষ্ণুর দুটি রূপ, রাম এবং কৃষ্ণের শক্তিকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আর যে মন্ত্রে সর্বশক্তিমানের সবথেকে শক্তিশালী দুটি রূপ বর্তমান, সেই মন্ত্র জপ করলে যে নানাবিধ উপকার পাওয়া যাবেই যাবে, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে। প্রসঙ্গত, হরে কৃষ্ণ মন্ত্রটি হল-"হারে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে"।
মজার বিষয় হল এই মন্ত্রটি যে কোনও সময় য়ে কোনও মুহূর্তে মনে মনে জপ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে শ্রী কৃষ্ণ বা রামের ছবির সামনে বসে মন্ত্র পাঠের কোনও প্রয়োজন নেই। বরং যখনই মন চাইবে, তখনই গুনগুনিয়ে উঠুন হরে কৃষ্ণ মন্ত্র। দেখবেন উপকার পাবেনই। প্রসঙ্গত, এই মন্ত্রটি জপ করলে যে যে সুফলগুলি মেলার সম্ভাবনা যায় বেড়ে, সেগুলি হল...
১. মন এবং মস্তিষ্ক শান্ত হয়:
আজকের দিনে আমার সবাই কোনও না কোনও ঝামেলায় ফেঁসে রয়েছি। আর সেই কারণে দুশ্চিন্তাও কম নেই। আর মন যখন অশান্ত, তখন আনন্দের সন্ধান মিলবে কী করে বলুন! তাই তো বলি বন্ধু, এই কলিযুগে সুখ-শান্তিতে যদি থাকতে হয়, তাহলে মন এবং মস্তিষ্ককে ঠান্ডা রাখতে হবে। আর ঠিক এই কারণেই নিয়মিত হরে কৃষ্ণ মন্ত্র জপ করা মাস্ট! কারণ এই মন্ত্রটি জপ করা শুরু করলে স্ট্রেস লেভেল তো কমে যায়ই, সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়, যে কারণে মনোযোগ ক্ষমতার তো বিকাশ ঘটেই, তার পাশাপাশি বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটতেও সময় লাগে না। এবার বুঝেছেন তো এই মন্ত্রটি জপ করা শুরু করলে একই সঙ্গে কত ধরনের উপকার পাওয়া যায়।
২. ভয় দূর হয়:
খেয়াল করে দেখবেন আজকের দিনে অধিকাংশই টাকার পিছনে ছুটছে। তাদের মতে যত টাকা হবে, তত পার্থিব জিনিস কেনার মধ্যে দিয়ে খুশি থাকা সম্ভব হবে। কিন্তু সত্যি বলুন তো এমনভাবে কি খুশি থাকা সম্ভব? মনে তো হয় না! বরং যারা শুধু টাকার পিছনে দৌড়ান, তারা সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকেন সবকিছু হারিয়ে ফেলার। আর মনকে যখন দখল করে ভয়, তখন অনন্দের সন্ধান মিলবে কী করে! তাই তো ভয়মুক্ত জীবন কাটাতে এই মন্ত্রটি জপ করা জরুরি। আসলে হরে কৃষ্ণ মন্ত্র জপ করলে মন এতটাই শান্ত হয়ে ওঠে যে জীবনের প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে অবগত হওয়া সম্ভব হয়। ফলে যে কোনও ভয় দূর হতে সময় লাগে না। আর মন যখন ভয় মুক্ত হয়, তখন জীবন পথে সমনে আসা যে কোনও বাঁধা সরে যেতে যে সময় লাগে না, তা তো বলাই বাহুল্য!
৩. পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধির ছোঁয়া লাগে:
এমনটা বিশ্বাস কা হয় যে শক্তিশালী এই মন্ত্রটি জপ করা শুরু করলে আমাদের আশেপাশে পজেটিভ শক্তির প্রভাব এতটা বেড়ে যায় যে নেগেটিভ এনার্জির প্রভাব কমতে সময় লাগে না। ফলে পরিবারে যেমন সুখ-সমৃদ্ধির ছোঁয়া লাগে, তেমনি ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদে অফুরন্ত অনন্দেরও সন্ধান মেলে। তাই বলি বন্ধু, জীবনের বাকি সময়টা প্রিয় জনেদের সঙ্গে সুখে-শান্তিতে যদি কাটাতে চান, তাহলে হরে কৃষ্ণ মন্ত্র জপ করতে ভুলবেন না যেন!
৪. পাপের হাত থেকে মুক্তি মেলে:
নিউটনের "থার্ড ল" সম্পর্কে নিশ্চয় ধারণা আছে। সেখানে বলা হয়েছিল, "এভরি অ্যাকশন, দেয়ার ইজ অ্যান ইকুয়াল এন্ড অপোজিট রিঅ্যাকশন"। ঠিক এই নিয়ম মেনেই কিন্তু পাপ-পূর্ণের ভারসাম্য বজায় থাকে। কী বলতে চাইছি ঠিক বুঝে উঠতে পারলেন না তো? আসলে বন্ধু এই মানব জীবনে আমরা যেমন কাজ করবো, ঠিক তেমনই ফল পাবো। অর্থাৎ লোকের উপকার করলে নিজেরও উপকার হবে। আর ক্ষতি করলে হবে মারাত্মত ক্ষতি। কিন্তু শাস্ত্র বলে নিয়মিত যদি হরে কৃষ্ণ মন্ত্র জপ করা যায়, তাহলে এ জীবনে করা পাপ কাজের শাস্তির হাত থেকে মুক্তি মেলার পথ প্রশস্ত হয়। তাই তো বলি বন্ধু, আপনাদের মধ্যে যারা প্রায়দিনই লোকের ক্ষতি করে থাকেন, তারা যদি এই মন্ত্রটি জপ না করেন, তাহলে শেষ জীবনে কিন্তু বেজায় কষ্ট সইতে হবে!
৫. খারাপ চিন্তা সব দূরে পালায়:
একবার ভাবুন তো কোনও খারাপ চিন্তা যদি ধারে কাছেও ঘেঁষতে না পারতো, তাহলে কেমন হত? এমন হলে তো জীবন এতটাই স্ট্রেস ফ্রি হয়ে উঠতো যে আনন্দ রোজের সঙ্গী হয়ে উঠতে সময় লাগতো না। ঠির, একদম ঠিক বলেছেন! এবার বলুন এমন শান্তির জীবন চান নাকি? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে হরে কৃষ্ণ মন্ত্র জপ করতে ভুলবেন না যেন! আসলে এই মন্ত্রটি জপ করা শুরু করলে মনে খারাপ চিন্তার প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে ভাবনা-চিন্তা এত মাত্রায় পজেটিভ হয়ে ওঠে যে জীবনের ছবিটা বদলে যেতে সময় লাগে না।
৬. জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি মেলে:
শাস্ত্রে বলে মৃত্যুর পর আত্মা এক শরীর ছেড়ে আরেক শরীরে গিয়ে বাসা বাঁধে। যেমন আমরা পুরানো জামা-কাপড় ছেড়ে নতুন জামা-কাপড় পরি, ঠিক তেমন ভাবে। এইভাবে জন্ম থেকে মৃত্যু এবং তারপর আবার জন্ম। এই খেলা চলতেই থাকে। কিন্তু যদি চান জন্ম-মৃত্যুর এই চক্র থেকে মুক্তি পেয়ে মোক্ষলাভ করতে, তাহলে সে রাস্তা দেখাতে পারে একমাত্র এই কৃষ্ণ মন্ত্র। কারণ এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে নিয়মিত হরে কৃষ্ণ মন্ত্র জপ করলে পুনরায় জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা যায় কমে। ফলে মক্ষো লাভের পথ প্রশস্ত হতে সময় লাগে না।