Just In
কুম্ভকর্ণ সম্পর্কে এই তথ্যগুলি কি আপনি জানেন?
বেশ জনপ্রিয় একটি পৌরাণিক চরিত্র হল 'কুম্ভকর্ণ', যিনি দীর্ঘসময় ঘুমানোর জন্য সকলের কাছে পরিচিত। আমরা সকলেই তাঁর নাম শুনেছি। এমনকি, যাকেই আমরা একটু বেশিক্ষণ ঘুমাতে দেখি আমরা অনেকেই মজা করে তাকে 'কুম্ভকর্ণ' বলে অভিহিত করি।
কুম্ভকর্ণ, ছয় মাস ধরে ঘুমাতেন এবং একদিন জাগতেন ও ঘুম থেকে উঠে হাতের কাছে যা পেতেন তাই খেয়ে ফেলতেন। তাঁর এই অদ্ভুত অভ্যাসই তাঁকে হিন্দুধর্মের পবিত্র গ্রন্থ 'রামায়ণ'-এর একটি আকর্ষণীয় চরিত্রে পরিণত করেছিল। তবে, শুধুমাত্র ঘুমানোই নয়, তাঁর সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য রয়েছে, যা হয়তো আপনি জানেন না।
যাইহোক, আমরা কুম্ভকর্ণ সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য আপনাদের বলব, যা অবশ্যই জানা উচিত। নিম্নে দেওয়া হল -
১) তাঁর আচরণ অত্যন্ত ভাল ছিল
কুম্ভকর্ণ একজন দানব হলেও, তাঁর আচরণ ছিল অত্যন্ত ভাল। তিনি তাঁর আত্মীয়দের যত্ন করতেন এবং অকারণে কাউকে আঘাত না করার ব্যাপারেও নিশ্চিত ছিলেন। তিনি অপ্রয়োজনীয় হিংসার বিরুদ্ধে ছিলেন।
২) তিনি ছিলেন দার্শনিক
কুম্ভকর্ণ সহিংসতার বিরুদ্ধে ছিলেন, তাই তিনি নারদ মুনির কাছ থেকে দার্শনিক পাঠ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। দীর্ঘসময় পর যখন তিনি ঘুম থেকে জাগতেন, তখন দার্শনিক কাজের মধ্য দিয়ে নিজের সময় কাটাতেন।
৩) তিনি ভগবান ব্রহ্মাকে মুগ্ধ করেছিলেন
রাবণ, বিভীষণ এবং কুম্ভকর্ণ, তিনজনেই ছিলেন বিশ্রবা মুনির পুত্র। বিশ্রবা মুনি চেয়েছিলেন তাঁর তিন পুত্রই যেন কুবেরের সমান সম্মানপ্রাপ্ত হয়। সেই কারণে, তিন ভাই ভগবান ব্রহ্মার তপস্যা শুরু করেন। তাঁদের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান ব্রহ্মা তাঁদের বরদান করেন।
যাইহোক, সেইসময় দেবী সরস্বতী কুম্ভকর্ণের জিহ্বায় অধিষ্ঠান করেন এবং তাঁর উচ্চারণে গোলমাল ঘটিয়ে দেন। এর ফলে, কুম্ভকর্ণ 'ইন্দ্রাসন' বলার জায়গায় উচ্চারণ করে বসেন 'নিদ্রাসন'। ভগবান ব্রহ্মাও এই শুনে 'তথাস্তু' বলেন। ব্রহ্মার বর সঙ্গে সঙ্গে ফলে যায়। মহাবলী কুম্ভকর্ণ সেই মুহূর্তেই নিদ্রাভিভূত হয়ে পড়েন।
এরপর থেকেই, কুম্ভকর্ণ ৬ মাস ধরে ঘুমান এবং একদিন জেগে থাকেন। ওইদিন খিদে মেটাতে তার চারপাশে যা পান তাই খেয়ে ফেলেন।
৪) তিনি দেবতাদের নাশ চেয়েছিলেন
কুম্ভকর্ণ দুটো বর চেয়েছিলেন। প্রথম বর ছিল, তিনি ইন্দ্রাসনের পরিবর্তে নিদ্রাসন চেয়েছিলেন। দ্বিতীয় বর চাওয়ার সময়, তিনি নির্দেবতম অর্থাৎ ঈশ্বরদের বিনাশ চাইতে গিয়ে নিদ্রাবতম অর্থাৎ ঘুমাতে চেয়েছিলেন। দেবী সরস্বতী কুম্ভকর্ণের জিহ্বায় অধিষ্ঠান করার কারণে এটি ঘটেছিল।
৫) সীতার অপহরণের জন্য তিনি রাবণের উপর ক্রুদ্ধ ছিলেন
যদিও তিনি রাবণের ছোট ভাই ছিলেন, কিন্তু, তবুও তিনি সীতা অপহরণের বিরুদ্ধে ছিলেন এবং রাবণের উপর অত্যন্ত রেগে গিয়ে সীতাকে ছেড়ে দিতে বলেন। তিনি রাবণকে এর পরিণতি সম্পর্কেও সতর্ক করেছিলেন।
৬) তিনি রাবণকে রামের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন
রামায়ণ মহাকাব্য অনুসারে, কুম্ভকর্ণ অসুর রাজ রাবণকে রামের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
৭) রামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে, তিনি রাবণকে সাহায্য করতে জাগ্রত হন
কুম্ভকর্ণ ৬ মাস গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকতেন, তার আগে কেউ তাঁকে জাগাতে সক্ষম হত না। কিন্তু, কুম্ভকর্ণ যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন তখন রাম এবং রাবণের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল এবং রাবণ তাঁর বাহিনীকে আদেশ করে কুম্ভকর্ণকে জাগ্রত করতে। তাই, অসময়ে তাঁকে জাগানো হয়েছিল।
৮) রাবণ ভুল ছিলেন জেনেও কুম্ভকর্ণ ভাইয়ের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন
তাঁর নীতিবোধের কারণে এবং নিজের দেশ ও ভাইয়ের প্রতি তাঁর কর্তব্য পালনের জন্য, কুম্ভকর্ণ ভাইয়ের পাশে দাঁড়িছিলেন। তিনি জানতেন যে, তাঁর ভাই যে পাপ করেছে তা ক্ষমাযোগ্য নয়। তবুও, তিনি কঠিন সময়ে ভাইকে একা ছাড়েননি। তিনি বীরত্বের সাথে লড়াই করেছিলেন এবং ভগবান রামের হাতে তিনি নিহত হন। পরে, তিনি মোক্ষ অর্জন করেছিলেন।
৯) তাঁর এক পুত্র ছিলেন ভীম, যিনি বিষ্ণুকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন
কুম্ভকর্ণের তিন পুত্র ছিল, কুম্ভ, নিকুম্ভ এবং ভীম। কুম্ভ ও নিকুম্ভ-ও ভগবান রামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহত হন। এরপর, ভীম ভগবান বিষ্ণুকে ধ্বংস করার শপথ নেন এবং ভগবান ব্রহ্মার দেওয়া শক্তির সাহায্যে ধ্বংস লীলা শুরু করেন। পরে, ভগবান শিব তাকে হত্যা করে।