Just In
Don't Miss
ঈদ মোবারক : কবে এবং কী ভাবে শুরু হয়েছিল ঈদ? জেনে নিন এই উৎসবের ইতিহাস ও তাৎপর্য
ঈদ-উল-ফিতরের মধ্য দিয়েই পবিত্র ইসলামী মাস রমজানের সমাপ্তি হয় এবং শুরু হয় শাওয়াল মাস। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখা বা সিয়াম সাধনার পর মুসলমানেরা এই দিনটি খুব আনন্দের সাথে পালন করে থাকে। 'ঈদ' মানে আনন্দ উৎসব, ঈদ মানে যা বারবার ফিরে আসে। 'ফিতর' মানে উপবাস ভঙ্গ করা বা রোজা ভাঙা। রমজানের রোজার শেষে এই ঈদ আসে বলে এর নাম 'ঈদ-উল-ফিতর'। এটি রোজার ঈদ হিসেবেও পরিচিত।
২০২২ সালে ভারতে ৩ মে ঈদ-উল-ফিতর পালন হচ্ছে। এটি আরবি হিজরি সনের দশম মাস তথা শাওয়াল মাসের প্রথম দিন। সবাই এই দিন নতুন পোশাক পরে। ঘরে ঘরে ভোজের আয়োজন হয়। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরাও এই আনন্দের অংশীদার হয়। মুসলমানেরা এই দিন ঈদের দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় এবং ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই সবাইকে কোলাকুলি, সালাম ও শুভেচ্ছা জানায়।
ঈদ-উল-ফিতরের ইতিহাস
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হল ঈদ। ইসলাম ধর্ম অনুশারে বছরে দু'বার ঈদ আসে। প্রথমে ঈদ-উল-ফিতর, দান করার উৎসব। তারপরে ঈদ-উল-আজহা, ত্যাগ করার উৎসব। মহানবী হজরত মহম্মদ (সা.) মদিনায় হিজরতের পরেই ঈদ-উল-ফিতর উৎসব পালন শুরু হয়।
কিছু ঐতিহাসিক কাহিনী অনুসারে, নবী মহম্মদ (সা.) মদিনায় এসে দেখলেন মদিনাবাসী বছরে দুটি দিবসে আনন্দ উল্লাস করে থাকে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এই দিবস দুটি কী? তারা জানালেন, নওরোজ ও মিহিরজান। শরতের পূর্ণিমায় পালিত হয় নওরোজ উৎসব, আর বসন্তের পূর্ণিমায় পালিত হয় মিহিরজান উৎসব। তখন নবী মহম্মদ (সা.) বললেন, আল্লাহ তোমাদের এই দিবস দুটির পরিবর্তে উত্তম দুটি দিবস দান করেছেন, তা হলো ঈদ-উল-আজহা এবং ঈদ-উল-ফিতরের দিন। এর মধ্যে রমজান মাসের শেষে সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে ও আনন্দের সহিত পালিত হয় ঈদ-উল-ফিতর।
ঈদ-উল-ফিতরের তাৎপর্য
১) ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে ঈদ-উল-ফিতরের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে।
২) রমজান মাসকে অত্যন্ত পবিত্র মাস হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। এইমাসে সৎকর্ম, মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ছড়িয়ে দেওয়া ও ধৈর্য ধরা হয় এবং সমস্ত মন্দ চিন্তা ও অভ্যাসকে দূরে সরানো হয়। আর, এই ঈদ-উল-ফিতরের মধ্য দিয়েই পবিত্র ইসলামী মাস রমজানের সমাপ্তি হয়।
৩) কিছু প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ ও ঐতিহাসিক কাহিনী অনুসারে, আরব অঞ্চলে ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বেই ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত হত।
৪) এই দিনে বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেয় এবং ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বার্তা ছড়িয়ে দেয়।
৫) তারা মসজিদে সবাই একসঙ্গে নামাজ পড়ে এবং একে অপরকে জড়িয়ে ধরে খুশির বার্তা দেয়। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঈদ মোবারক জানানোর পিছনের ধারণা হল, সমাজে সহানুভূতি ও ভালবাসা ছড়িয়ে দেওয়া।
৬) বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার এই দিনটিতে প্রস্তুত করা হয়। এর মধ্যে সেমাই সবচেয়ে প্রচলিত খাবার। এছাড়াও বিরিয়ানি, কাবাব এবং আরও অনেক কিছু তৈরি করা হয়। পরিবার ও বন্ধু সবার সঙ্গে খাওয়া হয়।
৭) একে অপরকে শুভেচ্ছা ও উপহার প্রেরণ করে মানুষ কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা প্রকাশ করে। এই দিনটিতে সবাই রাগ-হিংসা ভুলে গিয়ে একে অপরকে কাছে টেনে নেয়।
৮) যারা দরিদ্র বা অভাবী তাদের মধ্যে বস্ত্র, অর্থ এবং খাবার বিতরণ করা হয়। ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে গরীব দুঃস্থদের মাঝে বিতরণ করা দানকে যাকাতুল ফিতর বলা হয় এবং এটি ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।