Just In
দুর্গাপূজা ২০১৯ : দক্ষিণ কলকাতার কয়েকটি সেরা থিম পুজো
প্রহর গুনতে না গুনতেই পুজো আজ মহাষষ্ঠীতে পড়ল। এরমধ্যেই প্যান্ডেল হপিং-এ বেরিয়ে পড়েছেন পুজো প্রেমী মানুষেরা। ভিড় জমেছে গোটা কলকাতার প্রত্যেকটা পুজো মণ্ডপে। একবিন্দু সময় নষ্ট না করে প্রথমা থেকে হয়ে আসা প্ল্যানিং সফল করতে শুরু হয়েছে পুজো পরিক্রমা।
কোথায় ঠাকুর দেখবেন? ঠিক কোন কোন ঠাকুর দেখবেন? তার তালিকা ইতিমধ্যেই তৈরী সকলের। থিমের ভাবনায় সেরার সেরা শিরোপার মুকুট কার মাথায় জুটবে সেদিকেই তাকিয়ে সকলে। তবে একবার দেখে নেওয়া যাক এবছরের দক্ষিণ কলকাতার কিছু সেরা পুজোর থিম।
সুরুচি সঙ্ঘ:
উৎসব মানে আমার আপনার সকলের। কোনো বিভেদ না রেখেই এই আনন্দ উৎসবে মাতেন সব শ্রেণীর মানুষ। তাই সুরুচির এবারের থিম 'উৎসব'। প্রায় ২০০ ফুট উঁচু মেঘের তলায় আছে নানান ধরনের ঘর। সেই ঘরে আশ্রয় সমস্ত শ্রেণির মানুষের। এই মেঘ তৈরী হয়েছে লোহার জালি দিয়ে।
চেতলা অগ্রণী:
শহর কলকাতা বহু যুগের। ব্রিটিশের দেশ শাসন থেকে বিশ্বযুদ্ধের পরের দুর্ভিক্ষ, রাখিবন্ধনের মাধ্যমে মৈত্রীর বার্তা, এহেন বহু ঘটনা ও ইতিহাসের সাক্ষী এই শহর। আজও বহু ঘটনার সাক্ষী হয়ে চলেছে কলকাতা। পুরোনো হোক কিংবা নতুন, মণ্ডপে প্রবেশ করলে বহু স্মৃতি উস্কে দেবে আপনার মনকে। এই সমস্ত কিছু নিয়ে এবারের থিম 'কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে'।
৯৫ পল্লি:
এবারের থিম 'জাগরণ'। ৭০তম বছরে পা দিলো এই পুজো। মণ্ডপ তৈরি করতে সময় লেগেছে তিন মাস। দুর্গা, কৃষ্ণ, কালির একত্রিত রূপেই তৈরী মা দুর্গার প্রতিমা। দুর্গার হাতে ত্রিশূলের পরিবর্তে রয়েছে বাঁশি।ধরা পড়েছে শিল্পের মাধুর্যতা।
যোধপুর পার্ক সর্বজনীন:
সৃষ্টিতে অপরূপ, কিন্তু তা ধ্বংসের পর মাটি বা ছাই-তে পরিণত হয়ে যায় নিমেষে।ধ্বংসের এই ছাই দিয়েই তৈরী যোধপুর পার্ক সর্বজনীনের পুজো মণ্ডপ। ছাইয়ের ইট দিয়ে তৈরী শিবের মন্দির। এবারের থিম 'স্থাপত্যের শেষ থেকে শুরু'।
শিবমন্দির:
৮৩ বছরে পড়লো এই পুজো। মানুষ সংসারের বিভিন্ন বন্ধনে নিজেকে জড়িয়ে রাখে। পরিবার, বন্ধুত্বের বন্ধন থেকে ভালোবাসার বাঁধন সবেতেই নিমজ্জিত থাকে এই জীবন। বর্তমানে কোথাও এই বন্ধনের বাঁধন আলগা হয়ে গেছে। এই ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এবারের থিম 'বন্ধনী'।
মুদিয়ালি:
৮৫ তম বছরের পা দিলো এই পুজো। মণ্ডপ সেজে উঠেছে রঙের খেলায়। তুলে ধরা হয়েছে উৎসবের আবহকে। সঙ্গে রয়েছে অভিনব আলোকসজ্জা ও বিভিন্ন কাল্পনিক মূর্তির কাজ। তবে প্রতিমা গঠন সাবেকী আদবকায়দায়।
সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্ক:
৭০ বছরে পা এই পুজোর। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও পুরনো সময়কে ফিরে দেখার চেষ্টা করেছে সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্ক-এর পুজো। থিম 'বিস্মৃতি'। কালের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া ৭০ দশকের বহু জিনিসপত্র দিয়ে সেজে উঠেছে মণ্ডপ। ঘড়ি, টাইপ রাইটার, গ্রামোফোন, রেকর্ড, রেডিয়ো,থেকে শুরুকরে হ্যারিকেন, থাকছে আরও অনেক কিছুই। খুঁজে পাবেন ফেলে আসা দিনের স্মৃতি।
নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ:
জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে? সত্যি তাই। জন্মালে তার মৃত্যু অবসম্ভাবী। কিন্তু এই জৈবিক রূপের জন্মের থেকে বড়ো বোধ ও চেতনার জন্ম। এই জন্মের পরিভাষাকে ফুটিয়ে তুলতে এবারের থিম 'জন্ম'। ৩৩ বছরে পা দিলো এই পুজো। দশ হাজার মাটির কলসি দিয়ে তৈরী মণ্ডপ।
হিন্দুস্থান পার্ক:
এবছরের থিম 'রসেবসে'। প্যান্ডেলে রয়েছে নৃত্যকলার শৈল্পীক ভাবনার উপস্থাপনা, রয়েছে এই শিল্পকলাকে ফুটিয়ে তুলতে আলোর কারুকার্য।
বেহালা অরুণোদয়:
ভারত-বাংলাদেশের ইতিহাস দুই বাংলার মানুষের কাছেই পরিচিত। যার বন্ধন, ভালোবাসা আজও অটুট। তাই এবারের থিম 'দুই বাংলার বন্ধন'। মণ্ডপে ফুটে উঠেছে উমার বাপের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির যাত্রাপথের বন্ধন। রয়েছে দুই বাংলার হস্তশিল্পীদের শিল্পকলা।
বিবেকানন্দ পার্ক অ্যাথলেটিক:
শিল্পীর তৈরী শিল্পকলাই তার প্রকৃত পরিচয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তাদের পরিচয় থেকে যায় সবার আড়ালে। কুম্ভকার বা পাল গোষ্ঠীভুক্ত শিল্পীরা মাটির মূর্তি গড়েন, পুতুল গড়েন।কোনও অর্থমূল্যেই তাদের অসাধারণ শিল্পকর্মের বিচার করা উচিত নয়। অথচ তাঁদের নাম ও পরিচয় থেকে যায় আড়ালেই। এই না বলা কথার ভাবনাকে ফুটিয়ে তুলতে এবারের থিম 'অন্তরালে'। ৪৭তম বছরের পা দিলো এই পুজো।
হাজরা পার্ক:
এবারের পুজোর থিম 'পাসওয়ার্ড'। বর্তমান দিনে এই পাসওয়ার্ড এর গুরুত্ব কারুরই অজানা নয়। আর এই অভিনব থিম কাজে লাগিয়েছে পুজো উদ্যোক্তারা। অ্যানালগ, প্যাটার্ন, পিননম্বর, ভাষা সমস্ত প্রকার পাসওয়ার্ড ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই মণ্ডপে। তবে মণ্ডপের শেষ প্রান্তে বোঝানো হয়েছে সবকিছুর পাসওয়ার্ড থাকলেও পুজোর কিন্তু কোনও পাসওয়ার্ড থাকেনা। মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যবহার করা হয়েছে আলোর কারুকার্য।