Just In
ভাইফোঁটা ২০১৯ : দিন এবং তাৎপর্য
আজ, ২৯ অক্টোবর ভাইফোঁটা। উৎসবের মরশুম প্রায় শেষের দিকে। ভারতীয়দের পালনীয় উৎসবের মধ্যে ভাইফোঁটাও কিন্তু এক অন্যতম উৎসব। সারাবছর ধরে এই দিনটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে ভাই-বোনেরা। পুরো বছরে হয়ে আসা রাগ-অভিমান, দুঃখ-কষ্ট, ঝগড়া, খুনসুটি, সেই ভাইয়ের মঙ্গল কামনার জন্য কপালে সিঁদুর ও চন্দনের ফোঁটা দেওয়ার অপেক্ষায় থাকে বোনেরা। সারা দেশ জুড়েই পালিত হয় এই উৎসব। দেশের বিভিন্ন অংশে এই উৎসব বিভিন্ন নামে পরিচিত। হিন্দিভাষীদের কাছে 'ভাইদুজ', বাঙ্গালীদের 'ভাইফোঁটা', মহারাষ্ট্রে 'ভৌ বিজ' , দক্ষিণ ভারতে 'যমদ্বিতীয়া' আবার নেপাল ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে এই উৎসব 'ভাইটিকা' নামে পরিচিত।
"ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দিল যমকে ফোঁটা, আমি দিয়ে আমার ভাইকে ফোঁটা।"
প্রত্যেক বছর এই শ্লোক বাক্যের মাধ্যমে বোনেরা তার ভাইদের কপালে ফোঁটা দিয়ে তাদের দীর্ঘায়ু কামনা করেন। ভাইকে ভালবেসে একটিমাত্র ফোঁটার জন্যই সারাদিন উপোস করে অপেক্ষায় থাকে বোনেরা। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে ফোঁটা দেওয়ার সাথে এই শ্লোক বাক্যের কি গুরুত্ব?
প্রাচীনতম উৎসবের মধ্যে এই দেশের আর এক অন্যতম উৎসব হল এই ভাইফোঁটা। এই উৎসবকে ঘিরে নানান লোককথা গল্প জড়িয়ে রয়েছে। প্রাচীন মতে, নরকাসুরকে হত্যা করার পর শ্রীকৃষ্ণ তার বোনের কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন। মিষ্টি ও ফুল, চন্দন দিয়ে সম্মানের সহিত অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন বোন সুভদ্রা । ভাইয়ের প্রতি বোনের এই বিশেষ অভ্যর্থনায় খুশি হন কৃষ্ণ এবং বোনকে আশীর্বাদ করেন। আবার বাঙালির গড়গড় করে বলে যাওয়া এই শ্লোকের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যম অর্থাৎ ধর্মরাজ। এই ধর্মরাজকে ফোঁটা দেন তাঁর বোন যমুনা। আশীর্বাদ স্বরূপ ধর্মরাজ তার বোনকে বরদান করে বলেছিলেন, বোনের কাছ থেকে যারাই ফোঁটা নেবে তাদের নরক যাত্রা থেকে মুক্তি লাভ হবে। সেই থেকেই এই ভাইফোঁটার প্রচলন।
এই দিনটি ভাই বোনের মিলনের দিন হিসেবেও পরিচিত। বোনেরা তাদের ভাইদের এবং দাদাদের মাথায় ফুল,চন্দনের টিকা, দূর্বা ঘাস দিয়ে বরণ করে তাদের অমরত্ব, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে।
আচার-অনুষ্ঠাণ ও তাৎপর্য
ভাই ফোঁটার সাথে জড়িয়ে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আচার-অনুষ্ঠাণ। যা অনুসরণ করা সকলেরই দরকার। আসুন তবে আমরা একবার দেখে নিই।
১. ভাই ও বোনেরা উভয়েই ভাইফোঁটার দিন সকালে তাড়াতাড়ি উঠে স্নান করতে হবে। তার পরে ভাইকে অবশ্যই তার বোনের সাথে দেখা করতে হবে।
২. বোন বা দিদি তার ভাই বা দাদার কপালে মন্ত্রচ্চারণের মাধ্যমে তিলক বা টিকা লাগিয়ে দেবে। সাথে ভাই বা দাদার হাতে একটা নারিকেল দিতে হবে।
৩. এর পরে বোনকে তার ভাইয়ের জন্য আরতি করতে হবে এবং তার দীর্ঘায়ু কামনার জন্য প্রার্থনা করতে হবে।
৪. যদি তার দাদা বা ভাই বিবাহিত হয়, তবে বোনকে তার শ্যালকের কপালেও তিলক লাগাতে হবে এবং শুকনো নারকেল দিতে হবে।
৫.যদি তার দাদা বা ভাইয়ের বাচ্চা থাকে তবে তিলকটি তাদের কপালেও দিতে হবে।
৬. যদি কারও ভাই না থাকে তবে সে চন্দ্র দেবতার জন্য একটি পূজা করতে পারে এবং অনুষ্ঠানগুলি অনুসরণ করতে পারে।