Just In
অষ্টমীর দিন সন্ধি পুজোর সময় দেবী দূর্গার সামনে ১০৮ টি পদ্ম নিবেদন করলে কী কী উপকার মেলে জানা আছে?
অষ্টমী তিথি শেষ হওয়ার আগের ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথির শুরু হওয়ার পরের ২৪ মিনিট, অর্থাৎ এই ৪৮ মিনিটের মধ্যেই সন্ধি পুজো সম্পন্ন করতে হয়।
"সন্ধি" কথার অর্থ হল মিলন। তাই যাদের মনে প্রায়শই এমন প্রশ্ন যাগে যে অষ্টমীর বিশেষ পুজেকে "সন্ধি" পুজো কেন বলা হয়, তাহলে জেনে রাখুন বন্ধু অষ্টমী এবং নবমী তিথির মিলন মুহূর্তেকে সন্ধি মুহুর্ত বলা হয়। এই সময়ই দেবীর যে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়, তাই হিন্দু শাস্ত্র সন্ধি পুজো নামে পরিচিত। প্রসঙ্গত, পুরান মতে অষ্টমী তিথি শেষ হওয়ার আগের ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথির শুরু হওয়ার পরের ২৪ মিনিট, অর্থাৎ এই ৪৮ মিনিটের মধ্যেই সন্ধি পুজো সম্পন্ন করতে হয়। কারণ ঠিক এই সময়েই দেবী দুর্গা, চন্ডী রূপ ধারণ করে অসুর রাজকে বধ করেছিলেন। তাই তো হিন্দু শাস্ত্রে এই সময়ের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
এখন প্রশ্ন হল এই বিশেষ সময়ে ১০৮ টি পদ্ম নিবেদন করে দেবীর অরাধনা করলে কেনই বা নানা উপকার মেলে? আসলে বন্ধু প্রাচীন কালে লেখা একাধিক পুঁথি অনুসারে সন্ধি পুজোর সময় মা জাগ্রত হয়ে ওঠেন। তাই তো এই সময় যদি দেবী দুর্গাকে প্রসন্ন করা যায়, তাহলে মনের যে কোনও ইচ্ছা পূরণ হতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি খারাপ শক্তির প্রভাবে কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও কমে। শুধু তাই নয়, এমনও বিশ্বাস রয়েছে যে এই সময় মায়ের মন জয় করতে পারলে যমদূত পর্যন্ত নাকি ছুঁতে পারে না। তবে এখানেই শেষ নয়, শাস্ত্র মতে এই বিশেষ মুহূর্তে এক মনে মায়ের অরাধনা করলে আরও নানা উপকার মেলে, যে সম্পর্কে এই প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
এত দূর পরার পর নিশ্চয় জানতে ইচ্ছা করছে মার মন জয় করার উপায় সম্পর্কে, কি তাই তো? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে নজর ফেরাতে হবে রামায়ণের দিকে। লঙ্কা আক্রমণের আগে শ্রী রাম দেবী দুর্গার আরধনা করতে চেয়েছিলেন। তাই করেছিলেন দেবীর অকাল বোধন। এই সময় ১০৮ টি পদ্ম সহকারে মায়ের পুজো শুরু করতে গিয়ে রাম লক্ষ করেন তাঁর কাছে আছে মাত্রা ১০৭ টা পদ্ম। কিন্তু নিবেদন করতে হবে যে ১০৮ টা, তাহলে উপায়! অবশেষ কোনও উপায় না দেখে ময়ের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভাসাবাসায় শ্রী রাম ১০৮ তম পদ্ম হিসেবে নিজের চোখ পর্যন্ত দান করে দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। শ্রী রামের এমন শ্রদ্ধা দেখে দেবী এতটাই প্রসন্ন হয়েছিলেন যে যুদ্ধ জয়ের আশীর্বাদ করেছিলেন রামকে। সেই থেকেই এমন বিশ্বাস যে দেবী দুর্গা নাকি পদ্ম ফুল খুব ভালবাসেন। তাই তো সন্ধি পুজোর সময় ১০৮ টি পদ্ম ফুল নিবেদন করে এক মনে মায়ের নাম নিলে দেবীর ১০৮ টি রূপের আশীর্বাদ লাভ করা সম্ভব হয়। ফলে যে যে উপকারগুলি মেলে, সেগুলি হল...
১. মনের জোর বারে:
সন্ধি পুজোর সময় এক মনে যে কোনও দূর্গা মন্ত্র জপ করতে করতে মা দুর্গার নাম নিলে দেবী এতটাই খুশি হন যে তাদের আশীর্বাদে মনের জোর বাড়তে শুরু করে। ফলে যে কোনও ধরনের ভয় তো দূর হয়ই, সেই সঙ্গে স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না। আর মন যখন একবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তখন যে কোনও বিপদ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও বাড়ে। ফলে জীবন সব দিক থেকেই সুন্দর হয়ে ওঠে।
২. যে কোনও কাজে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে:
এমন বিশ্বাস রয়েছে যে সন্ধি পুজোর পর মায়ের নাম নিয়ে যদি কোনও কাজ শুরু করা হয়, তাহলে মাতৃশক্তির আশীর্বাদে সে কাজে সফলতা লাভের সম্ভাবনা যায় বেড়ে। শুধু তাই নয় সামগ্রিকভাবে কর্মক্ষেত্রে চরম উন্নতি লাভের পথও প্রশস্ত হয়।
৩. পরিবারে সুখ-শান্তির পরিবেশ বজায় থাকে:
সন্ধি পুজোর সময় ১০৮ টি পদ্ম ফুল সহকারে দেবীর অরাধনা করলে হারিয়ে যাওয়া সুখ-শান্তি ফিরে আসে। সেই সঙ্গে যে কোনও সমস্যা এবং কলহ মিটে যেতেও সময় লাগবে না। আসলে এই বিশেষ সময়ে মায়ের পুজো করা মাত্র গৃহস্তের প্রতিটি কোণায় পজেটিভ শক্তির মাত্রা এত পরিমাণে বৃদ্ধি পায় যে তার প্রভাবে সুখের ঝাঁপি পুনরায় ভরে ওঠে।
৪. শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:
এমন বিশ্বাস রয়েছে যে সন্ধি পুজোর সময় এক মনে মায়ের অরাধনা করলে শুধু দেবী দুর্গা নয়, তাঁর ছেলে-মেয়েরাও বেজায় প্রসন্ন হন। তাই তো এই বিশেষ পুজোর আয়োজন করলে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদে অনেক অনেক টাকায় মাসিক হয়ে ওঠার স্বপ্ন তো পূরণ হয়ই, সেই সঙ্গে শারীরিক সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো।
৫. বড়লোক হয়ে ওঠার স্বপ্ন পূরণ হয়:
৩০ পেরতে না পেরতেই কি অনেক অনেক টাকার মালির হয়ে ওঠার স্বপ্ন পূরণ করতে চান? তাহলে বন্ধু এই বিশেষ মুহুর্তে মায়ের নাম নিতে ভুলবেন না যেন! এমনটা করলে দেখবেন উপকার পাবেই পাবেন! আসলে এই বিশেষ পুজোটি করা মাত্র গুড লাক রোজের সঙ্গী হয়ে ওঠে, সেই সঙ্গে মা লক্ষ্মী এতটাই প্রসন্ন হন যে গৃহস্থে তাঁর প্রবেশ ঘটে। আর যে বাড়িতে মা বিরাজমান হন, সেই পরিবারের প্রতিটি সদস্যের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটতে যে সময় লাগে না, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে।
৬. মনের ছোট থেকে ছোটতর ইচ্ছা পূর হয়:
শাস্ত্রে এমনটা বলা হয়েছে যে সন্ধি পুজোর সময় মায়ের যে কোনও রূপের অরাধনা করার পাশাপাশি যদি দেবীর সামনে পদ্ম ফুল নিবেদন করা যায়, তাহলে মা এতটাই প্রসন্ন হন যে গুড লাক রোজের সঙ্গী হয়ে ওঠে। ফলে মনের অন্দরে জমতে থাকা ছোট থেকে ছোটতর ইচ্ছা পূরণ হতে সময় লাগে না। আর এমনটা যখন হয়, তখন জীবনের সামগ্রিক ছবিটাই যে বদলে যায়, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে!
৭. রোগ-ব্যাধি সব দূরে পালায়:
বাকি জীবনটা যদি সুস্থভাবে কাটাতে হয়, তাহলে এবছর সন্ধি পুজোর সময় মায়ের নাম নিতে ভুলবেন না যেন! আসলে এমনটা করলে মাতৃশক্তির প্রভাবে শরীর এবং মস্তিষ্কের অন্দরে এত মাত্রায় শক্তির বিকাশ ঘটে যে, তার প্রভাবে শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে ছোট-বড় সবহ রোগই দূরে পালায়। ফলে আয়ু বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো।
৮. গ্রহ দোষ কেটে যায়:
১০৮ টি পদ্ম ফুল নিবেদন করে এই বিশেষ মুহুর্তে মায়ের আরাধনা করলে দেবীর আশীর্বাদে যে কোনও ধরনের গ্রহ দোষ কেটে যেতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি খারাপ স্বপ্ন আসার আশঙ্কাও কমে। শুধু তাই নয়, যে কোনও ধরনের ভয় দূর হয় চোখের পলকে।
৯. যে কোনও সমস্যা মিটে যায় চোখের পলকে:
একবার মা দূর্গার আশীর্বাদ লাভ করলে ছোট-বড় সব ধরনের সমস্যা মিটে যায় চোখের পলকে। ফলে জীবন আনন্দে ভরে উঠতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে মায়ের আশীর্বাদে খারাপ শক্তিও দূরে পালায়। ফলে নেগেটিভ শক্তির প্রভাবে কোনও ধরনের বিপদ ঘটার আশঙ্কাও কমে যায়।