Just In
কালী পুজো ২০১৮: প্রতি বছর প্রতিটা বাঙালিরই কালি পুজো করা উচিত! কেন জানেনে?
শাস্ত্র মতে মা হলেন সব কষ্টের নিবারক। তাই তো এক মনে দেবীর আরাধনা করলে গৃহস্থের প্রতিটি কোণায় এত মাত্রায় পজেটিভ শক্তির বিকাশ ঘটে যে, যে কোনও ধরনের পারিবারিক ঝামেলা মিটে যেতে যেমন সময় লাগে না।
আমি বাঙালি। কথা বলি বাংলায়। তাই বাংলা ভাষা এবং বাঙালির প্রতি একটু দুর্বলতা আছে বৈকি। তাই তো এমন হেডিং। আসলে শুধু বাঙালি নয়, প্রত্য়েকে হিন্দুরই কালি পুজো করা উচিত। যদি বলেন,"আইডল" পুজো পছন্দ নয়। তাহলে বলবো মূর্তি ভেবে নয়, বরং মাতৃ শক্তির আধার মেনে দেবীকে নিয়ে আসুন বাড়িতে। দেখবেন সব জ্বাল-যন্ত্রণা নিমেষে কমে যাবে। জীবনে লাগবে সুখের ছোঁয়া।
শাস্ত্র মতে কালি মা হলেন মাতৃ শক্তির রূপক। যার অন্দরে মজুত অপার শক্তি, যে শক্তি বলে যে শুধু যে আমাদের সব কষ্ট দূর হয়, তা নয়, সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকার, যে সম্পর্কে এই প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, যা পড়ার পর আমার বিশ্বাস ছোট করে হলেও আপনি এবছর থেকেই বাড়িতে শুরু করবেন কালী পুজো...!
প্রসঙ্গত, এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে কালী পুজোর দিনে বাড়ির মায়ের আসন পাতলে দেবীর আশীর্বাদে বিশেষ কিছু সুফল মেলে। যেমন ধরুন...
১. পরিবারিক ঝামেলা সব মিটে যায়:
শাস্ত্র মতে মা হলেন সব কষ্টের নিবারক। তাই তো এক মনে দেবীর আরাধনা করলে গৃহস্থের প্রতিটি কোণায় এত মাত্রায় পজেটিভ শক্তির বিকাশ ঘটে যে, যে কোনও ধরনের পারিবারিক ঝামেলা মিটে যেতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি গৃহস্থে সুখ-শান্তির পরিবেশ বজায় থাকে। ফলে হারিয়ে যাওয়া মানসিক শান্তি ফিরে আসতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, অনেকে মা কালীর নাম শুনলেই ভয় পেয়ে যান। তাদের মনে হয় ঠিক ঠিক নিয়ম মেনে দেবীর অরাধনা না করলে নাকি ক্ষতি হয়! আচ্ছা একটা কথা বলুন তো মা কখনও তাঁর ছেলে-মেয়েদের ক্ষতি করতে পারে? না পারে না তো! তাই তো বলি, শুদ্ধ মনে মা কালীকে ডাকুন, তাহেলই দেখবেন তাঁর আশীর্বাদ আপনি পাবেই পাবেন!
২. টাকা-পয়সা সংক্রান্ত সব সমস্যা মিটে যায়:
নানা কারণে কি ধার-দেনা বেজায় বেড়ে গেছে? সঙ্গে কি লেজুড় হয়েছে টাকা-পয়সা সংক্রান্ত নানা ঝামেলা? তাহলে বন্ধু এ বছর বাড়িতে মায়ের আবাহন করতে ভুলবেন না যেন! কারণ এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে কালী পুজোর দিন মায়ের পুজোর আয়োজন করলে দেবী এতটাই প্রসন্ন হন যে তাঁর আশীর্বাদে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে টাকা-পয়সা সংক্রান্ত সব ঝামেলাও মিটে যায় নিমেষে।
৩. রোগ-ব্যাধির প্রকোপ কমে:
একেবারেই ঠিক শুনেছেন বন্ধু! দেবীর পুজোর আয়োজন করলে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জীবনে পজেটিভ শক্তির ছোঁয়া লাগে। সেই সঙ্গে গৃহস্থে উপস্থিত খারাপ শক্তির প্রভাব কমতে শুরু করে। ফলে কোনও খারাপ ঘটনা ঘটার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি শরীর এতটাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে ছোট-বড় নানা রোগ-ব্যাধি দূরে পালাতে সময় লাগে না। তাই তো বলি বন্ধু মায়ের আশীর্বাদে বাকি জীবনটা যদি সুখ-শান্তিতে এবং সুস্থভাবে কাটাতে হয়, তাহলে কার্তিক অমাবস্যার দিনে মা কালীর পুজোর আয়োজন করতে ভুলবেন না যেন!
৪. প্রতিপক্ষদের নিকেশ ঘটে:
এই প্রতিযোগিতাময় দুনিয়ায় কত মানুষ যে আপনার ক্ষতি করতে চাইছে তা হয়তো গুনে শেষ করতে পারবেন না। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে বাঁচাবেন কীভাবে জানেন কি? এক্ষেত্রে মা কালীর শরণাপন্ন হন, দেখবেন কোনও ক্ষতিই হবে না! কারণ মায়ের আশীর্বাদে যারাই আপনার ক্ষতি করতে চাইছে তাদের সবারই নিকেশ ঘটবে। শুধু তাই নয়, কেউ যদি কালো যাদুর সাহায্যে আপনার ক্ষতি করতে চায়, তাহলেও চিন্তা নেই। কারণ মায়ের শক্তি বলে কালো যাদুর প্রভাব কমতে সময় লাগে না। ফলে এই কারণে কোনও ক্ষতিই হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না।
৫. বৈবাহিক জীবন সুখ-শান্তিতে কাটবে:
শাস্ত্র মতে যারা এক মনে মায়ের আরধনা করবেন তাদের বৈবাহিক জীবনে যেমন কোনও বাঁধা আসবে না, তেমনি সারা জীবন সপরিবারে সুখে-শান্তিতেই কেটে যাবে। শুধু তাই নয়, মা কালীর আরাধনা করলে দেখবেন বিবাহজনিত নানা সমস্যা মিটে যেতেও সময় লাগবে না, মিলবে মনের মতো জীবনসঙ্গীর খোঁজও।
৬. কর্মক্ষেত্রে এবং পড়াশোনায় উন্নতি ঘটবে:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যারা প্রতি বছর এক বিশেষ দিনে মায়ের আরাধনা করেন, তাদের পারিবারিক জীবনে তো বটেই, সেই সঙ্গে কর্মজীবনেও খারাপ শক্তির প্রভাব কমতে শুরু করে। ফলে প্রফেশনাল ফিল্ডে উন্নতির স্বাদ পেতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি বাড়ির ছোট ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনায় উন্নতি ঘটে চোখে পরার মতো। শুধু তাই নয়, এমনও বিশ্বাস রয়েছে যে প্রতিদিন এক মনে মায়ের নাম নিলে জীবন পথে চলতে চলতে সামনে আসা যে কোনও বাঁধা সরে যেতেও সময় লাগে না। ফলে অফুরন্ত আনন্দের ছোঁয়া লাগে জীবনে।
৭. মনের সব ইচ্ছা পূরণ হয়:
শাস্ত্রে বলে মা কালী হলেন মাতৃশক্তির সবথেকে শক্তিশালী রূপ। তাই তো মাকে একবার প্রসন্ন করতে পারলে দেবীর শক্তি বলে ভক্তের মনের সব ইচ্ছা পূরণ হতে সময় লাগে না। আসলে এক্ষেত্রে মায়ের আশীর্বাদে খারাপ সময় কেটে যায়। ফলে গুড লাক রোজের সঙ্গী হয়ে উঠতে সময লাগে না। আর ভাগ্য যখন সহায় হয়, তখন দুনিয়া যে হাতের মুঠোয় চলে আসে, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে...!
কালী পুজোর তিথি এবং দিন:
এ বছর ৬ নভেম্বর কালী পুজো। এদিন রাত ১০:২৭ মিনিট শুরু হচ্ছে পুজোর লগ্ন। আর শেষ হচ্ছে পরের দিন রাত ৯:৩১ মিনিটে। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ২৭ অক্টোবর, রবিবার কালী পুজো। ২০২০ সালে ১৪ নভেম্বর, ২০২১ সালে ৪ নভেম্বর এবং ২০২২ সালে ২৪ অক্টোবর কালী পুজোর দিন ধার্য হয়েছে।
কালী পুজোর আয়োজন করার সময় মেনে চলতে হবে যে যে নিয়মগুলি:
কালী পুজোর দিন সারা বাড়ি এবং অবশ্যই ঠাকুর ঘর ভাল করে মুছে নিয়ে স্থাপন করতে হবে মা কালীর ছবি বা মূর্তি। তবে এক্ষেত্রে একটা জিনিস মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। তা হল ঠাকুর ঘর পরিষ্কার করবেন নুন জল দিয়ে। আসলে এমনটা করলে বাড়িতে উপস্থিত খারাপ শক্তির প্রভাব কমে যেতে সময় লাগে না। ঘর-দোর পরিষ্কারের পর একটা থালায় চাল, নুন, জল এবং ফুল রাখতে হবে দেবীর সামনে। সেই সঙ্গে রাখতে পারেন লাল শাড়ি এবং আলতা-সিঁদুর। এবার মায়ের মূর্তি বা ছবিতে জবা ফুলের মালা পরিয়ে শুরু করতে হবে পুজো। পুজোর সময় মা কালী মন্ত্র জপ করতে হবে কম করে ১০৮ বার। মন্ত্র পাঠের পর দেবীকে ভোগ নিবেদন করে শেষ করতে হবে পুজো। প্রসঙ্গত, যদি মনে করেন আপনার পক্ষে মা কালীর পুজো করা একটু কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তাহলে একজন পুরোহিতকে সে দায়িত্ব দিতেই পারেন।