Just In
Don't Miss
ভারতে কোন গাছগুলিকে পবিত্র বলে মনে করা হয়? রইল গাছের তালিকা ও তাৎপর্য
গৃহের পুজো হোক বা কোনো ধর্মীয় স্থানের পুজো সর্বক্ষেত্রে সমান ভাবে পূজিত হন হিন্দুধর্মের দেবতাগণ। আচার-অনুষ্ঠানের কোনও ত্রুটি থাকে না পূজার্চনায়। হিন্দু ধর্ম কেবলমাত্র দেবতাদের মূর্তি রূপেরই নয়, প্রকৃতির রূপেও দেবতাদের উপাসনা করে। এই ধর্ম অনুযায়ী, দেবতার উপাসনার সময় কয়েকটি বিশেষ গাছকে পূজা করাও পবিত্র বলে মনে করা হয়।
ভগবত গীতায় শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীকে বটবৃক্ষের সাথে তুলনা করেছেন, যার বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা রয়েছে। রামায়ণ ও মহাভারতের মহাকাব্যগুলিতেও এর অনুরূপ উল্লেখ পাওয়া যায়। আমাদের প্রাচীন সনাতন ধর্মে উল্লিখিত শাস্ত্র অনুযায়ী, গাছের উপাসনা সত্যিই একটি প্রাচীন ভারতীয় অনুশীলন। তবে, আধুনিক ভারতীয় ঐতিহ্যে আজও উদ্ভিদ এবং গাছের উপাসনার প্রথা বিদ্যমান। কারণ, এই ধর্ম উদ্ভিদের জীবন, উর্বরতা, বৃদ্ধি, সমৃদ্ধি ,পবিত্রতা এবং ঐশ্বরিকতার প্রতীক।
এই নিবন্ধে ৮টি গাছের কথা বলা হল যা হিন্দু ধর্ম ও ভারতীয় সংস্কৃতিতে সবচেয়ে পবিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।
ক) তুলসি গাছ
হিন্দুদের প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তুলসী পাতা ও গাছ ব্যবহার করা হয়। এই গাছ যদি বাড়ির উঠোনে জন্মায়, তবে তা শুভ বলে মনে করা হয়। কারন, হিন্দু ধর্মে বলা হয়েছে, কৃষ্ণের সেবা করার জন্য বৃন্দাবনে দেবী বিরিন্দা তুলসী পাতা হিসেবে জন্ম নেন। আবার প্রাচীন বেদে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তুলসী গাছের কাঠের স্পর্শ একজন ব্যক্তিকে শুদ্ধ করে তুলতে পারে। দেহ, মন এবং আবেগকে শুদ্ধ করার জন্য তুলসী পুঁতি দিয়ে তৈরি মালা পরিধান করা প্রয়োজন। এই গাছটি ঔষধি এবং রোগ নিরাময় বৈশিষ্ট্যের জন্যও আয়ুর্বেদে মূল্যবান বৃক্ষ।
খ) কলা গাছ
কলা গাছের ফলকে ভগবান বিষ্ণু এবং লক্ষ্মীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।আবার কলা গাছের পাতা গণেশকে অর্পণ করলে তাও শুভ বলে বিবেচিত হয়। এই গাছের পাতাগুলি বিভিন্ন ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক প্যান্ডেলগুলি সাজাতে ব্যবহৃত হয় এবং এগুলি খাবার ও প্রসাদ পরিবেশন করতে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার ধূপ-ধূনো, ফল, ফুল, হলুদ ইত্যাদি দিয়ে এই গাছের উপাসনা করলে পরিবারে সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায় বলে বিশ্বাস করা হয়।
গ) পদ্ম ফুল
হিন্দু ধর্মে প্রচলিত, প্রত্যেক মানুষের অভ্যন্তরে পদ্মের পবিত্র আত্মা বিদ্যমান। কারণ ধর্মীয় শাস্ত্র অনুযায়ী, ভগবান বিষ্ণুর নাভির ভেতর থেকে জন্ম নেয় পদ্ম, আর ব্রক্ষ্মা এই পদ্মের কেন্দ্রে বসে থাকেন। তাই হিন্দুদের কাছে এই ফুলটি জীবন, উর্বরতা আর পবিত্রতার প্রতীক। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরাও পদ্ম ফুলকে পবিত্র বলে মনে করে।
ঘ) বট গাছ
বটগাছকে বলা হয় ভক্তদের জন্যে ঈশ্বরের দেওয়া আশ্রয় স্থল। বহু প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থ ও শাস্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বটগাছ ঐশ্বরিক স্রষ্টাকে উপস্থাপন করে এবং মানব জীবনের দীর্ঘায়ু কামনার প্রতীক হিসেবে পূজিত হয়। গাছটি 'বট বৃক্ষ' নামেও পরিচিত। এই গাছ উর্বরতার প্রতীক তাই অনেকে বিশ্বাস করেন, এই গাছের পুজো করলে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে নিঃসন্তান দম্পতিদের সহায়তা হতে পারে। বট গাছ কেটে ফেলা অশুভ বলে মনে করা হয়।
ঙ) বেল গাছ
হিন্দু ধর্মে বেল গাছের সাথে শিব ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। বিশ্বাস করা হয়, এর পাতা এবং ফল দিয়ে পুজো করলে দেবাদিদেব সন্তুষ্ট হন। বেল গাছের ত্রিনেত্র বিশিষ্ট পাতা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়, কারণ তিনটি হিন্দু ভগবান - ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর বা শিব যথাক্রমে সৃষ্টি, সংরক্ষণ এবং ধ্বংসের প্রতীক। এই পাতাগুলি শিবের তিনটি চোখ হিসেবেও বিবেচিত হয়। এছাড়াও, এই গাছের সমস্ত অংশে ঔষধি গুণ রয়েছে, এটি আয়ুর্বেদিক ঔষুধ তৈরিতে বেশি ব্যবহৃত হয়।
চ) অশত্থ গাছ
হিন্দু ধর্মের আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যযুক্ত গাছ হল অশত্থ গাছ। প্রায় প্রতিটি হনুমান ও শনি মন্দিরে এই গাছ দেখা যায়। নিজের ও পরিবারের এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের মঙ্গল কামনার্থে সপ্তাহের প্রতি শনিবারে এই গাছকে পুজো করা হয়। বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগ এবং শত্রুদের হাত থেকে বাঁচতে এই গাছের উপাসনা করা হয়। একে বোধি গাছও (Bodhi Tree) বলা হয়, কারণ এই গাছের তলায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম বুদ্ধ ধ্যান করেছিলেন এবং জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। এটি হিন্দু ধর্মে গাছের রাজা হিসেবেও বিবেচিত হয়।
ছ) অশোক গাছ
একটি মাঝারি আকৃতির চিরসবুজ ছায়াদানকারী বৃক্ষ। সুন্দর, সুগন্ধযুক্ত লাল এবং হলুদ ফুল ধারণ করে এই গাছটি। এটিও হিন্দু ধর্মের একটি পবিত্র গাছ হিসেবে বিবেচিত হয়। শুধু হিন্দু ধর্ম নয়, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মেও এটি পবিত্র গাছ হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও, এই গাছের সমস্ত অংশে ঔষধি গুণ রয়েছে, যেমন - স্নায়ুগত রোগ, অর্শ, চর্ম রোগ ইত্যাদিতে খুবই উপকারি।
জ) চন্দন গাছ
হিন্দু ধর্মে সবচেয়ে পবিত্র গাছ হিসেবে বিবেচিত হয় চন্দন গাছ। ভারতবর্ষে সমস্ত পূজা অনুষ্ঠানে এটি ব্যবহৃত হয়। তবে চন্দন গাছ সেই অর্থে ব্যবহৃত না হলেও মূলত এর কাঠ ব্যবহৃত হয়, যা অত্যন্ত সুগন্ধযুক্ত। এই কাঠ পূজাতে ব্যবহৃত হয়। কাঠটিকে একটি পেস্টে পরিণত করে পুজোতে ব্যবহার করা হয় এবং ভক্তদের কপাল চিহ্নিত করতেও ব্যবহৃত হয়, যা ধর্মীয় তাৎপর্য বহন করে।