Just In
টানা ১৬ টা সোমবার উপোস করে শিব ঠাকুরের পুজো করলে কী কী উপকার মেলে জানা আছে?
প্রতি সোমবার উপোস করে দেবের অরাধনা করলে শিব ঠাকুর এতটাই প্রসন্ন হন যে ভক্তের জীবনে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা যে কোনও সমস্যা মিটে যেতে সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, সব বাঁধাও সরে যায় চোখের পলকে।
সোমাবার। শাস্ত্রে এই দিনটির গুরুত্ব অনেক। কারণ এই দিনটি নাকি দেবাদিদেব শিব ঠাকুরের দিন। তাই তো প্রতি সোমবার দেবের অরাধনা করলে নাকি সর্বশক্তিমান এতটাই প্রসন্ন হন যে ভক্তের মনের সব ইচ্ছা পূরণই হতে সময় লাগে না। আর যদি উপোস করে দেবের আরাধনা করেন তাহলে তো কথাই নেই! সেক্ষেত্রে আরও অনেক উপকার পাওয়া যায়, যে সম্পর্কে এই প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে টানা ১৬ সোমবার উপোস করে শিব ঠাকুরের আরাধনা করলে কী কী উপকার মিলতে পারে, সে বিষয়ের উপরও আলোকপাত করা হবে। তাই যদি জিজ্ঞাস করেন এই লেখাটা পড়বেন কেন? তাহলে উত্তরে বলবো বন্ধু বাকি জীবনটা যদি সুখ-শান্তিতে এবং আনন্দে কাটাতে হয়, আর চান অনেক অনেক টাকার মালিক হয়ে উঠতে, তাহলে এই লেখাটি পড়তে ভুলবেন না যেন!
এখন প্রশ্ন হল টানা ১৬ সোমবার উপোস করে দেবের অরাধনা করলে যে নানাবিধ উপকার মিলতে পারে, সে সম্পর্কে জানা গেল কীভাবে? আসলে বন্ধু পুরানে একটি গল্পের সন্ধান পাওয়া যায়। সেই গল্পে তিনটি চরিত্র ছিল। একজন ব্যবসায়ী, তার স্ত্রী এবং তাদের এক ছেলে। ব্যবসায়ী নানাভাবে অনেক টাকার মালিক হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু তাই বলে তার একেবারেই নাক উঁচু ভাব ছিল না। বরং স্বামী-স্ত্রী সারাক্ষণ পুজো-অর্চনা নিয়ে থাকতেন। আসলে এই দম্পতীর কোনও সন্তান ছিল না। তাই তারা দেবাদিদেবের কাছে প্রতিদিন প্রার্থনা করতেন, যাদের তাদের বংশে দীপ জ্বলে। এইভাবে সময় এগতে থাকে। হঠাৎ একদিন আসে সেই মহেন্দ্রক্ষণ। দেবের আশীর্বাদে ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু সেই সন্তান ১২ বছরের বেশি বাঁচবে না এমন নিধান দেন দেবাদিদেব।
এমন কথা শুনে প্রথমটায় ব্যবসায়ী দম্পতি কিছুটা ভেঙে পরলেও কোনও মতে নিজেদের সামলে নিয়ে দেবে ভক্তিকে সঙ্গী করে বড় করতে থাকেন তাদের ছেলেকে। এক সময় সেই ব্যবসায়ী ছেলেকে বেনারস পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। কারণ সেখানে গিয়ে সে বেদের পাঠ নেবে, দেবের শক্তি সম্পর্কে অবগত হবে। যেই না সিদ্ধান্ত আমনি ছেলেটির মামার সঙ্গে তাকে বেনারেস পাঠিয়ে দেওয়ার তোরজোর শুরু হয়ে যায়। সেই মতো শুরু হয় যাত্রাও। এদিকে বেনারস পৌঁছানোর আগে হঠাৎ করে একটা ঘটনা ঘটে যায়। এক ধনী পরিবারের মেয়ের বিয়েতে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেই মনতো মামা-ভাগ্নে সেখানে পৌঁছেও যান। কিন্তু বিয়ে শুরুর আগে হঠাৎ জানা যায় যে মেয়েটির হবু স্বামী নাকি অন্ধ। এমন একজনের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে হবে কীভাবে! এদিকে লগ্ন ভ্রষ্ট হওয়ার ভয়ও দানা বাঁধতে শুরু করে মেয়েটির পরিবারে। অবশেষে মেয়েটিরে সামাজিক অসম্নানের হাত থেকে বাঁচাতে মামার আশীর্বাদ নিয়ে এই ব্যবসায়ীর ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় এবং নব দম্পতি বেনারসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। এদিকে ১২ বছরে পা দেওয়া মাত্র ছেলেটি মৃত্যুর মুখে ঢলে পরেন। সারা পরিবারে নেমে আসে শোখের ছাঁয়া। কিন্তু বিধাতার মনে এক অন্য কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিল। আসলে ছেলেটি এবং তার পরিবারের প্রতিটি সদস্যের ভক্তি এবং শ্রদ্ধা দেখে শিব ঠাকুর এতটাই প্রসন্ন হয়েছিলেন যে দেবাদিদেব ছেলেটিকে পুনরায় জীবন দান করেন। সেই থেকেই এমন বিশ্বাস রয়েছে যে টানা ১৬ সোমবার দেবের অরাধনা করলে যে কোনও সমস্যা দূর হতে সময় লাগে না। এমনকী মৃত্যুকেও হারানো সম্ভব হয়! শুধু তাই নয়, মেলে আরও অনেক উপকার। যেমন ধরুন...
১. মনের মতো জীবনসঙ্গী মেলে:
টানা ১৬ সোমবার এক মনে দেবের আরাধনা করলে মনের মতো জীবনসঙ্গী পওয়ার স্বপ্ন তো পূরণ হয়ই, সেই সঙ্গে বৈবাহিক জীবনে কোনও ধরনের সমস্যা বা অশান্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কাও কমে।
২. যে কোনও বাঁধা সরে যায়:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে প্রতি সোমবার উপোস করে দেবের অরাধনা করলে শিব ঠাকুর এতটাই প্রসন্ন হন যে ভক্তের জীবনে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা যে কোনও সমস্যা মিটে যেতে সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, যে কোনও ধরনের বাঁধাও সরে যায় চোখের পলকে। তাই তো বলি বন্ধু, সমস্যাময় জীবন থেকে যদি মুক্তি পেতে চান, তাহলে টানা ১৬ টি সোমবার উপোস করে দেবের অরাধনা করতে ভুলবেন না যেন!
৩. পরিবারে সুখ-শান্তি বজায় থাকে:
পারিবারিক অশান্তির কারণে কি জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে? তাহলে বন্ধু পর পর ১৬ টা সোমবার উপোস করে শিব লিঙ্গে জল এবং দুধ ঢালতে ভুলবেন না যেন! আসলে এমনটা করলে গৃহস্থের প্রতিটি কোণায় পজেটিভ শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে, যার প্রভাবে যে কোনও ধরনের অশান্তি দূরে পালাতে দেখবেন সময় লাগবে না। ফলে সুখের ঝাঁপি ভরে উঠবে চোখের পলকে।
৪. অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে চোখে পরার মতো:
এমন বিশ্বাস রয়েছে যে প্রতি সোমবার উপোস করে "ওম নম শিবায়" মন্ত্রটি জপ করতে করতে দেবাদিদেবের অরাধনা করলে দেব এতটাই প্রসন্ন হন যে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে টাকা-পয়সা সংক্রান্ত নানাবিধ ঝামেলাও মিটে যায় চোখের পলকে।
৫. মনের জোর বাড়ে:
নিয়মিত যদি দেবাদিদেবের অরাধনা করতে পারেন, তাহলে মনের জোর বৃদ্ধি পেতে দেখবেন সময় লাগবে না। আর ভয় যখন দূরে পালাবে, তখন জীবন পথে চলতে চলতে সামনে আসে যে কোনও বাঁধা পেরতেই যে সময় লাগবে না, তা তো বলাই বাহুল্য! সেই সঙ্গে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাওয়ার কারণে দেখবেন কর্মক্ষেত্রে চরম সফলতা লাভ করবেন একেবারে চোখের পলকে...!
ষোল সোমবার উপোস করে দেবের পুজো করার নানা নিয়ম:
প্রতি সোমবার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে পরিষ্কার জামা-কামড় পরে ঠাকুর ঘরে প্রবেশ করবেন। তারপর ভাল করে ঠাকুরের আসন, দেবের ছবি এবং পুরো ঠাকুর ঘর পরিষ্কার করে তারপর শুরু করতে হবে পুজোর আয়োজন। এই সময় দেবের ছবিতে ভাল করে সাদা চন্দন লাগিয়ে একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে এক মনে পাঠ করতে হবে "ওম নম শিবায়" মন্ত্রটি। সেই সঙ্গে দেবের সামনে নিবেদন করতে হবে বেল পাতা এবং তাঁর পছন্দের সব ফুল। একেবারে শেষ ধাপে কপপুর জ্বালিয়ে শেষ করতে হবে দেবের পুজো। আর উপোস ভাঙতে হবে সূর্যাস্তের পর। এইভাবেই পর পর ১৬ টি সোমবার উপোস করে দেবের অরাধনা করলেই দেখবেন কেল্লা ফতে!