Just In
গর্ভাবস্থায় নিজেকে সুস্থ রাখতে খান তরমুজ, দেখে নিন এর উপকারিতা
গর্ভাবস্থা প্রত্যেক মহিলার জীবনেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। এইসময় সকল গর্ভবতী মহিলাদেরই উচিত নিজের ডায়েটের দিকে নজর রাখা। এই সময়কালে অস্বাস্থ্যকর ডায়েট মা এবং শিশুর উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই এইসময় খুব নিয়ম মেনে চলা উচিত।
বিভিন্ন খাবারের পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় সুষম ডায়েটের মধ্যে অবশ্যই বিভিন্ন প্রকারের ফল অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। ফলের গুরুত্বের পরিমাণ বিবেচনা করতে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভাবস্থায় ফলের মধ্যে তরমু়জ খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জল সমৃদ্ধ এই তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, যেমন - ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম। এছাড়াও, এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় তরমুজ গর্ভবতী মহিলাদের জন্য একটি আদর্শ ও স্বাস্থ্যকর খাবার। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভবতী মহিলাদের জন্য তরমুজের স্বাস্থ্য উপকারিতা কী কী।
১) প্রাতঃকালীন অসুস্থতাকে নিয়ন্ত্রণ করে
গর্ভাবস্থার প্রথম কয়েকটি মাস বেশিরভাগ মহিলারাই বমিভাবযুক্ত অস্বস্তিতে ভোগেন। এটি সারাদিনে যেকোনও সময় ঘটতে পারে। যার ফলে খাবার খেতেও অরুচি দেখা দেয়। এই অস্বস্তিকে দূর করতে তরমুজ খুবই উপকারি। সকালে অল্প কিছু খাওয়ার পর তরমুজের টুকরো বা এক গ্লাস রস পান করলে শরীরে সতেজতা ফিরে আসে। শারীরিক পুষ্টির পাশাপাশি এটি বেশ শক্তিযুক্ত একটি খাবার। তাই গর্ভবতী মহিলার জন্য দিনের প্রথম খাবার হিসেবে তরমুজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২) ডিহাইড্রেশনের বিরুদ্ধে কার্যকর
গর্ভাবস্থার সঙ্গে যুক্ত অন্য একটি সাধারণ সমস্যা হল ডিহাইড্রেশন। এটি গর্ভাবস্থার সময় নানারকম জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন ক্লান্তি, অলসতা, শারীরিক শক্তির অভাব ইত্যাদি। নব্বই শতাংশ জল নিয়ে গঠিত তরমুজ ফলটি ডিহাইড্রেশন নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে কার্যকর। বিশেষ করে গরমকালে গর্ভবতী মহিলাদের রোজ তরমুজ খাওয়া প্রয়োজন।
৩) ইডিমা বা ফোলাভাব রোধ করতে
গর্ভবতী মহিলাদের প্রায়শই হাত ও পা ফুলে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়, যা ইডিমা নামে পরিচিত। যখন মূত্রের স্বল্পতা, রক্তহীনতার কারণে শরীরের কিছু নির্দিষ্ট টিস্যুতে অস্বাভাবিকভাবে তরল জমা হয়ে ফুলে ওঠে, তখন তাকে ইডিমা বলা হয়। এই ফোলাভাব বা ইডিমা গর্ভাবস্থার একটি সাধারণ সমস্যা। জলে পূর্ণ তরমুজ কার্যকরভাবে পেশী এবং শিরাগুলিতে তৈরী হওয়া বাধাগুলিকে ঠিক করে এবং ইডিমা থেকে মুক্তি দেয়।
গর্ভাবস্থা এবং করোনা ভাইরাস : গর্ভবতী মহিলা ও মায়েদের জন্য করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত কিছু নির্দেশিকা
৪) অম্বল নাশক হিসেবে কাজ করে
গর্ভাবস্থায় দেহে হরমোনিয় পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এই পরিবর্তনগুলি গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে আসে। যার ফলে খাবারে অরুচি দেখা দেয়। আর দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকা বা হজমের সমস্যার কারণে অম্বলের সৃষ্টি হয়। তাই এই সময়ে অল্পকিছু খাওয়ার পর তরমুজ কেটে খেতে পারেন। এটি হজম ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে এবং অ্যাসিডিটি বা অম্বল থেকে মুক্তি দেয়। সুতরাং, যদি কখনও পাচনতন্ত্রের সমস্যায় ভোগেন তখন সরাসরি এই সুস্বাদু তরমুজ গ্রহণ করুন।
৫) দেহকে ডিটক্সিফায়িং করা
তরমুজের মধ্যে মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্যগুলি রয়েছে যা দেহের বিষাক্ত পদার্থগুলি বের করতে এবং দেহের ইউরিক অ্যাসিড হ্রাস করতে সহায়তা করে। তরমুজের এই বৈশিষ্টগুলি গর্ভাবস্থায় লিভার এবং কিডনিকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি ত্বকের এসপিএফ বাড়াতেও সহায়তা করে।
৬) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
গর্ভাবস্থায় অসুস্থতা গর্ভবতী মায়ের পক্ষে যথেষ্ট অস্বস্তিকর হতে পারে। আর এইসময় গর্ভবতী মহিলাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাত্রা হ্রাস পায়। যার ফলে এই সময়ে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার জন্ম নেয়। তরমুজের লাল অংশে লাইকোপেন নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট রয়েছে যা অনাক্রম্যতার স্তরকে বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ থাকায় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
৭) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া আরও একটি সাধারণ ঘটনা। এই সময় গর্ভবতী মহিলাদের কোষ্ঠকাঠিন্য কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়ার পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর কিছু প্রাকৃতিক বিকল্পের কথা উল্লেখ করা হয়। তাই, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে তরমুজ খেতে পারেন। কারণ, তরমুজে থাকা ফাইবারের উপাদানগুলি মল গঠনে সহায়তা করে এবং পেটের সমস্যাকে দূর করতে সাহায্য করে। তাই রোজ তরমুজ খাওয়াটা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
৮) ভ্রূণের হাড় গঠনে সাহায্য করে
গর্ভবতী মহিলাদের তরমুজ খাওয়ার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, এটি গর্ভে থাকা শিশুর হাড় এবং দাঁত গঠনে সহায়তা করে। তরমুজে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম যা ভ্রূণের সঠিক হাড়ের বিকাশের জন্য সহায়ক।