Just In
কোলোস্ট্রাম কী? এটি কীভাবে শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় জেনে নিন
পৃথিবীজুড়ে পালন করা হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। প্রতিবছরই ১ থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত পালিত হয় দিনটি। শিশুকে তার মায়ের বুকের দুধ পান করানোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতার জন্য ওয়ার্ল্ড এলায়েন্স ফর ব্রেস্ট ফিডিং একশন এর উদ্যোগে এবং ইউনিসেফ এর সহযোগিতায় ১৯৯২ প্রথম পালিত হয়' বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ'। সেই থেকেই প্রতিবছর আগস্ট মাসের ১-৭ তারিখ পর্যন্ত বিশ্বের ১২০ টির বেশি দেশে পালিত হয়ে আসছে সপ্তাহটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মাতৃদুগ্ধ পানে শিশু যেমন সুস্থ-সবল ভাবে বেড়ে ওঠে তেমনি উপকৃত হন প্রসূতি নিজেও। তাই নবজাতককে স্তন্যপান করানোর ব্যাপারে কোনও রকম আপস করলে চলবে না। বিশেষ করে শিশু জন্মানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই মায়ের থেকে যে হালকা হলদেটে দুধ নিঃসৃত হয় তা নবজাতককে খাওয়াতেই হবে। কারণ, বিশেষজ্ঞদের দাবী এই হলদেটে দুধ বা কোলোস্ট্রাম সদ্যোজাতর প্রথম ভ্যাকসিন, যা শিশুর ভবিষ্যতের জন্য সুরক্ষা কবজ হিসেবে কাজ করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ অনুযায়ী, শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার মায়ের থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে এই দুধ পান করালে ভবিষ্যতে নানা অসুখ-বিসুককে দূরে রাখতে, বুদ্ধির দ্রুত বিকাশে ও সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি শিশুকে তার মাতৃদুগ্ধ পান করালে মেয়েদের স্তন ক্যান্সার, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার, টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস পায়।
কোলোস্ট্রাম কী?
প্রসবের ঠিক পরেই মেয়েদের স্তন বৃন্ত থেকে এক প্রকার হলদেটে ঘন দুধ নিঃসৃত হয়, যা কোলোস্ট্রাম নামে পরিচিত। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের ভাষায় একে বলা হয় 'তরল সোনা'। প্রসবের পর মোট দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত এই দুধ নিঃসৃত হয়। এটি মায়েদের স্বাভাবিক বুকের দুধের চেয়ে অনেকটাই ঘন হয়।
তবে এই কোলোস্ট্রাম সন্তান জন্মানোর অনেক আগে থেকেই মায়েদের শরীরে তৈরি হতে শুরু করে। মূলত গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের শুরু থেকে এই দুধের উৎপাদন শুরু হয়।
সদ্যজাত-এর জন্য কেন এটি প্রয়োজনীয়?
কোলোস্ট্রাম শিশুর প্রথম প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। কারণ, এতে থাকে ইমিউনোগ্লোবুলিন A (IgA) নামক অ্যান্টিবডি, যা শিশুর দেহের প্রতিটি অঙ্গের (গলা, মুখগহ্বর, ফুসফুস ও অন্ত্র) রক্ষাকারী আবরণ মিউকাস মেমব্রেনকে সুরক্ষিত রাখে। এটি আবার শিশুর প্রথম মল অপসারণেও সহায়তা করে, যা দেহ থেকে বিলিরুবিন নির্গমনের মাধ্যমে জন্ডিস প্রতিরোধ করে। এছাড়াও ডায়ারিয়া, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য রোগ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি মায়ের শরীরে হরমোনগুলির নিঃসরণ নির্দিষ্ট ছন্দে ফিরে আসে।
কী কী উপাদান রয়েছে কোলোস্ট্রামের মধ্যে?
মায়ের বুকের দুধই হল শিশুর প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রধান উৎস, শিশুর প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টির উপাদান। ফ্যাট এবং শর্করার চেয়ে কোলোস্ট্রামে প্রোটিনের পরিমান বেশি থাকে। এছাড়াও গ্লাইকোপ্রোটিন, ইমিউনোগ্লোবিউলিন, ল্যাক্টোফেরিন, ল্যাক্টো অ্যালবুমিন, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-কে সহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধক এবং সন্তান বিকাশে সহায়ক উপাদান থাকে।
গর্ভাবস্থার অষ্টম মাসে সুস্থ থাকতে এই অবশ্যই খান খাবারগুলি
স্বাস্থ্য উপকারিতা
১) টিউমার ও ক্যান্সার রোধে
গবেষণায় দেখা গেছে যে, মায়ের দুধে থাকা ল্যাক্টো অ্যালবুমিন টিউমার ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়াও কোলোস্ট্রামে থাকা সাইটোকাইনস টিউমার গঠনে বাধা সৃষ্টি করে।
২) দেহের কোষ ও বুদ্ধির বিকাশে
কোলোস্ট্রামে রয়েছে প্রোটিন সাইটোকাইনস, যা শরীরের প্রতিটি কোষের গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। দুধে থাকা ল্যাক্টো অ্যালবুমিন মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে বাড়িয়ে দিয়ে বুদ্ধির বিকাশ ও মন ভাল রাখতে সাহায্য করে।
৩) অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিতে
কোলোস্ট্রামে থাকা গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিবডিগুলি শিশুর শরীরের বিভিন্ন রোগ ব্যাধিকে নির্মূল করতে সাহায্য করে। এছাড়াও মায়ের বুকের দুধ বিভিন্ন সংক্রমণ,অ্যালার্জির বিরুদ্ধে লড়াই করতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
৪) শিশুর সার্বিক গঠনে
কোলোস্ট্রামে থাকা প্রয়োজনীয় গ্রোথ ফ্যাক্টরগুলি শিশুর ত্বক, পেশি, হাড়, কার্টিলেজ, স্নায়ু পেশি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। দেহের সার্বিক গঠনেও সহায়তা করে কোলোস্ট্রাম।
৫) রোটা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে
গবেষণায় দেখা গেছে, কোলোস্ট্রাম রোটা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শিশুকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এই কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ এবং ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর ব্রেস্ট ফিডিং অ্যাকশন জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর কথা উল্লেখ করেছে।
৬) হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে
যেসকল শিশুরা কোলোস্ট্রাম ও টানা ৬ মাস মাতৃদুগ্ধ পান করে, তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।