Just In
- 15 hrs ago আপনার সুন্দর নখ ভেঙে গিয়েছে? ভাঙা নখ ঠিক করার কিছু ঘরোয়া টোটকা
- 17 hrs ago ধূমপান ছাড়তে চান, কিন্তু পারছেন না! মৃত্য়ুর হাত থেকে বাঁচতে মেনে চলুন এই উপায়গুলি
- 19 hrs ago উচ্চ কোলেস্টেরল দূর করতে এক কাপ লবঙ্গ চা যথেষ্ট, ভাবচ্ছেন বানাবেন কীভাবে?
- 21 hrs ago ৫০ বছর পর বিরল সূর্যগ্রহণ, কোথায়, কিভাবে দেখতে পাবেন? জানুন
Don't Miss
ক্ষুদিরামের শেষ কথাই জন্ম দিয়েছিল হাজারো বিপ্লবীর, জানুন তাঁর বৈপ্লবিক কর্মকান্ড সম্পর্কে
ক্ষুদিরাম বসু, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অমর নাম। দেশের স্বাধীনতার জন্য ফাঁসির মঞ্চে যারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে প্রথম বিপ্লবী ছিলেন তিনি। ভারতবর্ষকে স্বাধীন করতে ক্ষুদিরাম বসুর এই আত্মত্যাগ আজও অনুপ্রেরণা যোগায় এবং উৎসাহিত করে দেশপ্রেমের অগ্নিমন্ত্রে শপথ নিতে।
চলুন তবে ৭৬তম স্বাধীনতা বর্ষে দাঁড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক ভারতবর্ষের কনিষ্ঠতম শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর জীবনী সম্পর্কে।
জন্ম ও নামকরণ
১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত মেদিনীপুর শহরের হাবিবপুর গ্রামে ত্রৈলোক্যনাথ ও লক্ষ্মীদেবীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন ক্ষুদিরাম বসু। তাঁর নাম ক্ষুদিরাম হওয়ার পেছনেও একটি ঘটনা রয়েছে। ক্ষুদিরামের জন্মের ঠিক আগে তাঁর দুই দাদা শিশু অবস্থাতেই মারা যান। সেই সময় মানুষের মনে একটা অন্ধবিশ্বাস ছিল যে, শিশু জন্মানোর পর যদি কোনও আত্মীয় তাকে ‘কড়ি' অথবা ‘খুদ' দিয়ে কিনে নেন, তাহলে সেই শিশুর অকাল মৃত্যু হবে না। এই অন্ধবিশ্বাসে এসে সন্তানের প্রাণ বাঁচাতে তাঁর মা তিন মুঠো খুদের বিনিময়ে তাঁকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন মাসির কাছে। এইজন্যই তাঁর নাম হয়' ক্ষুদিরাম'। ক্ষুদিরাম শৈশব থেকেই দুরন্ত প্রকৃতির ছিলেন। আর তার সঙ্গে বিপ্লবী চেতনার ছোঁয়া পেয়ে তিনি যেন এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে উঠলেন।
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সঙ্গে সাক্ষাৎ
শৈশবেই বাবা-মাকে হারিয়েছিলেন ক্ষুদিরাম। বড় হয়ে উঠলেন দিদি অপরূপার কাছে। এদিকে তখন স্বদেশী আন্দোলনের জোয়ার বয়ে চলেছে। প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় তমলুকের হ্যামিলটন স্কুলে। তারপর ভর্তি হন মেদিনীপুরের কলেজিয়েট স্কুলে। এই কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষক হিসেবে পেলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে, যিনি 'সিক্রেট সোসাইটি বা গুপ্ত সমিতি' র নেতা ছিলেন। দেশের প্রতি ক্ষুদিরামের ভালোবাসা দেখে সত্যেন্দ্রনাথ বসু ক্ষুদিরাম-কে গুপ্ত সমিতির সদস্য করেন এবং অল্প ক'দিনের মধ্যেই লাঠি খেলা, তলোয়ার চালানো, কুস্তি করা, বন্দুক চালানো, ঘোড়ায় চড়া, সব কিছুতেই পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি। এই থেকেই শুরু হয় তাঁর বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড। দেশকে স্বাধীন করার জন্য নির্ভয়ে এগিয়ে যান তিনি।
বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড
বিপ্লবী জীবনের অভিষেক ঘটে মেদিনীপুরে। গুপ্ত সমিতির দৌলতে লাঠি চালানো থেকে শুরু করে বন্দুক চালানো সবেতেই পারদর্শী হয়ে ওঠেন ক্ষুদিরাম। দেশের কাজে নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দেন তিনি। বিলিতি কাপড়ের গাঁট লুট করে, ইংল্যান্ডে উৎপাদিত কাপড় জ্বালিয়ে দেন এবং ইংল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত লবণ বোঝাই নৌকাও ডুবিয়ে দেন। সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নির্দেশে ব্রিটিশ বিরোধী 'সোনার বাংলা' লিফলেট বিক্রি করেন, গ্রেপ্তার হন ইংরেজ সৈন্যদের হাতে। ছাড়া পেয়ে তারপরেই অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যা করার জন্য নির্বাচিত হন ক্ষুদিরাম। সঙ্গী হিসেবে ছিলেন প্রফুল্ল চাকী। অত্যাচারী শাসককে হত্যা করে ভারতকে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে তৈরি হন তিনি।
কিংসফোর্ড হত্যা
মাত্র ১৬ বছর বয়সে প্রথমবার ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হাতে বোমা তুলে নেন ক্ষুদিরাম। অত্যাচারী ব্রিটিশ প্রশাসক কিংসফোর্ডকে হত্যা করার জন্য মুজাফ্ফরপুরের মোতিঝিল এলাকায় পাঠানো হয় ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকীকে। সেখানে হরেন সরকার নাম নিয়ে এক ধর্মাশালায় থাকতে শুরু করেন ক্ষুদিরাম। নজর রাখছিলেন কিংসফোর্ডের গতিবিধির উপর। অবশেষে ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল কিংসফোর্ডের ঘোড়ার গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়েন তিনি, তাতে মৃত্যু হয় তিন জনের। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই গাড়িতে কিংসফোর্ড না থাকায় নিহত হন মুজাফ্ফরপুরের বার অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাডভোকেট প্রিঞ্জল কেনেডির পরিবারের সদস্যরা।
ফাঁসির সাজা
বোমা নিক্ষেপ করার পর রেললাইন ধরে পালিয়ে যান ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল। পরদিন ভোরবেলা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ক্ষুদিরাম। কয়েকদিন পর ধরা পড়েন প্রফুল্ল চাকী, কিন্তু তিনি নিজেকে গুলি করে আত্মঘাতী করেন। ক্ষুদিরামের বিরুদ্ধে মামলা উঠল কোর্টে। ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ফাঁসির দিন ধার্য করা হল তাঁর। হাসতে হাসতে ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিলেন তিনি।
স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিখ্যাত কিছু স্লোগান, যা শুনে ব্রিটিশদের কপালে ভাঁজ পড়েছিল
শেষ কথা
প্রস্তুত ১৫ ফুট উঁচু ফাঁসির মঞ্চ। ফাঁসি হওয়ার আগের দিন অর্থাৎ ১০ অগাস্ট মেদিনীপুরের নির্ভীক সন্তান ক্ষুদিরাম বসু আইনজীবী সতীশচন্দ্র চক্রবর্তীকে বলেছিলেন, 'রাজপুত নারীরা যেমন নির্ভয়ে আগুনে ঝাঁপ দিয়া জওহর ব্রত পালন করিত, আমিও তেমন নির্ভয়ে দেশের জন্য প্রাণ দিব। আগামীকাল আমি ফাঁসির আগে চতুর্ভুজার প্রসাদ খাইয়া বধ্যভূমিতে যাইতে চাই।' এরপর ফাঁসির মঞ্চে উপস্থিত হলে তাঁর গলায় ফাঁসির দড়ি পরানো মাত্রই জল্লাদকে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন "ফাঁসির দড়িতে মোম দেওয়া হয় কেন?" - এটাই তাঁর শেষ কথা, যা শুনে চমকে গিয়েছিল জল্লাদও। এমনকি ফাঁসির ঠিক আগে শেষ ইচ্ছা হিসেবে তিনি বলেছিলেন, ব্রিটিশ সরকারের অনুমতি পেলে তিনি তাঁর বোমা বানানোর শিক্ষা ভারতবর্ষের অন্যান্য যুবকদেরও শিখিয়ে যেতে চান।