Just In
Don't Miss
একাকি পড়ে আছে ৭৫ বছর
এক বিষাক্ত দ্বীপের গল্প।
একাকি পড়ে আছে ৭৫ বছর
ভুতের আস্তানা ছাড়াও এই পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে যেতে মানুষের ভয় হয়। তারই অন্য়তম হল একটি দ্বীপ। হ্যাঁ ঠিক শুনেছেন একটা দ্বীপের কথাই বলছি। এই দ্বীপটিতে যেতে মানুষের ভয় হয়। কেন? সেই ইতিহাসই তো আজ শোনাতে চলেছি আপনাদের।
এক সময়ের সবুজে ভরা এই দ্বীপটিতে গত ৭৫ বছরে কেউ পা দেয়নি। মানচিত্রে খুঁজে পাওয়া গেলেও জনমানসের প্রবেশ নিষেধ এখানে। যদিও এমনটা হয়েছে ক্ষমতালোভি কিছু মানুষেরই জন্য়ই। তাই দোষটা যে কার তা বুঝে উঠতে কষ্ট হয় বৈকি!
পরিত্যক্ত দ্বীপের তালিকায় একেবারে প্রথমেই নাম রয়েছে এই ভুখন্ডের। কারণ এখানে এক মুহূর্তও বাঁচতে পারে না কোনও জীব। কী কারণে এক সময়ের সবুজ মোড়া দ্বীপ রাজ্য় বদলে গেল এমন নরক পুরিতে! চলুন চোখ ফেরানো যাক সেই অন্ধকার ইতিহাসের দিকে।
ভয়ঙ্কর এই জায়গাটির নাম গ্রইনার্ড দ্বীপ:
উত্তর-পশ্চিম স্কটল্য়ান্ড থেকে ০.৬ কিলোমিটার দূরে, গ্রইনার্ড প্রণালীতে এই দ্বীপটির অবস্থান। আকারে ছোট, ডিম্বাকৃতি গ্রইনার্ড আইল্য়ান্ড এক সময়ে ছিল প্রকৃতিক স্বর্গরাজ্য়, যা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর থেকে ধীরে ধীরে বদলে হয়ে গেল মৃত্য়ুপুরি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব:
হিটলারের জার্মানিকে ধ্বংস করতে মিত্র শক্তি যখন মরিয়া, তখন এই দ্বীপেই একের পর এক জৈব অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে গেছিল ইংল্য়ান্ড। সে সময় ব্রিটিশ মিলিটারির বিজ্ঞানিরা অ্যানথ্রেক্সকে অস্ত্রে রূপান্তরিত করতে চেয়েছিল। আর যার প্রভাব পড়েছিল গ্রইনার্ড দ্বীপের পরিবেশের উপর।
ব্য়াকটেরিয়ার দাপট:
১৯৪২ সালে এই দ্বীপে অ্যানথ্রক্স ব্য়াকটেরিয়ার স্ট্রেন থেকে পাওয়া একটি যৌগের পরীক্ষা চালানো হয়। ভলিউম ১৪৫৭৮ নামে পরিচিত এই স্ট্রনটি মারাত্মক ভয়ানক ছিল।
ছাগলের উপর পরীক্ষা চালানো হয়েছিল:
ব্য়াকটেরিয়ার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানতে ৮০ টি ছাগলের উপর ফেলা হয়েছিল অ্যানথ্রক্সের বোমা। তারপর যা ঘটেছিল তা সত্য়িই ভয়ানক! ব্য়াকটেরিয়ার প্রভাবে একে একে মারা যেতে শুরু করেছিল ছাগলগুলি। আর এই পুরো পরীক্ষাটি রেকর্ড করা হয়েছিল ১৬ এম এম কালার মুভি ফিল্মে। এমন কেন করা হয়েছিল জানেন? যাতে পরবর্তি সময় এই বিষাক্ত বোমের ফলাফল আরও ভালোভাবে পরীক্ষা করা যায়, তার জন্য়।
পরীক্ষার ফল ছিল একেবারে বিপরীত:
রেকর্ড করা ফিল্মগুলি পরীক্ষা করে জানা যায় টেস্টর সময় যে অ্যানথ্রক্স ব্য়াটেরিয়াটা বাতাসে ছাড়া হয়েছিল তার প্রভাবে কোনও মানুষের মৃত্য়ু হয়নি, তবে ওই দ্বীপের পরিবেশ একেবারে বিষিয়ে গেছিল। অর্থাৎ এই ভাইরাস সরাসরি মানুষকে মারতে না পারবে না কিন্তু পরিবেশকে বিষাক্ত করে দিয়ে পরক্ষোভাবে শেষ করে দেবে সমগ্র জীবকূলকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে:
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এই দ্বীপটির প্রকৃত মালিক পুনরায় আইল্য়ান্ডটি নিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার অনুমতি দেয়নি। কারণ কী জানেন? দ্বীপটির পরিবেশ এতটাই বিষাক্ত হয়ে গেছে যে কোনও মানুষের পক্ষেই আর সেখানে বাস করা সম্ভব নয়। তাই তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে গ্রইনার্ড দ্বীপে আর কোনও দিন মানুষের পা পরেনি।