Just In
ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ: শিক্ষক দিবসে জেনে নিন তাঁর সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
শেখার কোনও শেষ নেই, শেখার কোনও বয়সও নেই। জীবনভর চলতে থাকে আমাদের শিক্ষা। আমরা প্রতিদিনই শিখি। শেখা মানে শুধুমাত্র গতানুগতিক বই পড়া নয়, রাস্তা-ঘাটে, পথ চলতে আমরা সবসময়ই কিছু না কিছু শিখে থাকি। গতানুগতিক পড়াশুনা যে শেখায় শুধুমাত্র তাকেই শিক্ষক বলা হয় না, আমরা যখনই যা কিছু যার থেকে শিখি তাকেও শিক্ষক বলা হয়। তিনি থাকতে পারেন জীবনের যে কোনও ক্ষেত্রেই। তিনি জীবনে চলার পথে পরামর্শ দেবেন, ব্যর্থতায় পাশা দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেবেন, সাফল্যের দিনে নতুন লক্ষ্য স্থির করে দেবেন। তিনি শুধু সফল নয়, একজন ভাল মানুষ হতে শেখাবেন। তাই, জীবনে চলার পথে আমাদের প্রথম শিক্ষক হল মা, বাবা।
ভারতে শিক্ষক দিবস পালন করা হয় ৫ সেপ্টেম্বর। এই দিনটি একজন আদর্শ শিক্ষক ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিন। তাঁর জন্মদিন অনুসারেই পালন করা হয় 'শিক্ষক দিবস'। যিনি ছিলেন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি, এবং ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি। ভারতবর্ষের সকল বিদ্যার্থী তাঁকে সম্মান জানানোর জন্য তাঁর জন্মদিনে শিক্ষক দিবস পালন করে থাকে।
তাঁর সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য :
১) ১৮৮৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তামিলনাডুর তিরুট্টানিতে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা সচ্ছল ছিল না। তাঁর বাবা স্থানীয় জমিদার বাড়িতে স্বল্প বেতনের চাকরি করতেন। তিনি কখনই চাননি তাঁর ছেলে ইংরেজি শিখুক, বরং তিনি চেয়েছিলেন তাঁর ছেলে পূজারি হোক। যাইহোক, মেধাবী ছাত্র হওয়ার কারণে জীবনে অসংখ্য স্কলারশিপ পেয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি নিজের বৃত্তির সহায়তায় পড়াশুনা চালিয়েছিলেন।
২) তিনি মাদ্রাজ ক্রিশ্চিয়ান কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন এবং তাঁর বিষয় ছিল দর্শন। বই কেনার টাকা ছিল না। তাই, তাঁর এক দাদার কাছ থেকে দর্শনের বই নিয়ে পড়াশুনা করতেন।
৩) ২০ বছর বয়সে বেদান্ত দর্শন ওপর তাঁর গবেষণা প্রকাশিত হয়। যার জন্য তাঁর প্রফেসর ডঃ এ. জি. হগ অত্যন্ত প্রশংসা করেছিলেন ।
৪) একাধারে রাজনীতিবিদ, দার্শনিক ও অধ্যাপক এই শান্ত মানুষটি ছাত্রজীবনে অতি মেধাবী ছিলেন। জীবনে কোনও পরীক্ষায় দ্বিতীয় হননি তিনি। ১৯০৫ সালে তিনি মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
৫) ১৬ বছর বয়সে দূর সম্পর্কের আত্মীয় শিবাকামুকে বিয়ে করেন তিনি। ১৯৫৬ সালে তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়।
৬) ১৯০৯ সালে রাধাকৃষ্ণাণ মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজে তাঁর শিক্ষক জীবন শুরু করেছিলেন। এরপর তিনি মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছিলেন। এসময় তিনি বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পত্রিকায় লিখতেন। সে সময়েই তিনি লেখেন তাঁর প্রথম গ্রন্থ 'The Philosophy of Rabindranath Tagore'। দ্বিতীয় গ্রন্থ 'The Reign of Religion in Contemporary Philosophy', প্রকাশিত হয় ১৯২০ সালে।
৭) ছাত্রছাত্রীদের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অধ্যাপনার জন্য আমন্ত্রিতও হয়েছেন।
৮) ১৯৫২ সালে তিনি উপরাষ্ট্রপতি হন। কিন্তু, তার আগে ১৯৪৬ সালে ইউনেস্কোর দূত হয়েছিলেন তিনি। এর পর সোভিয়েত ইউনিয়নে ভারতের দূতও ছিলেন তিনি। ১৯৬২ সালে রাষ্ট্রপতি হন তিনি।
৯) রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তাঁর ছাত্ররা তাঁর জন্মদিন পালন করতে চাইলে তিনি বলেন "জন্মদিনের পরিবর্তে ৫ সেপ্টেম্বর যদি 'শিক্ষক দিবস' উদ্যাপিত হয় তবে আমি বিশেষরূপে অনুগ্রহ লাভ করবো।" সেই থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের শিক্ষক দিবস।
১০) বিশ্বের দরবারে তিনি অতি জনপ্রিয় দার্শনিক অধ্যাপক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৩১ সালে তাঁকে 'British knighthood' উপাধিতে সম্মানিত করা হয়। ১৯৫৪ সালে তাঁকে 'ভারতরত্ন' উপাধি-তে ভূষিত করা হয়।
১১) ১৯৭৫ সালের ১৭ এপ্রিল তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন : শিক্ষক দিবস : কী ভাবে ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে