For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts

গানই বদলে দিল জীবন, ভবঘুরে রানু এখন তারকা

|

গানই তাঁর জীবনের প্রাণ। তাই কেউ শুনুক না শুনুক তিনি গেয়েই চলেছে অনবরত। রাতের অন্ধকার কেটে সূচনা হয় নতুন দিনের। কিন্তু, তাতে তাঁর কিছু এসে যায় না। তিনি নিজের মনে গান গেয়েই চলেন রাত-দিন। পাশ দিয়ে সজোরে বাঁশি বাজিয়ে চলে যায় ট্রেন, রোজকার নিত্যযাত্রীর ভিড়, হকারের চিৎকার , এতকিছুর মধ্যেও সে গুনগুন করে গেয়ে চলেছে- " এক পেয়ার কা নাগমা হ্যায়...।" ১৯৭২ সালের 'শোর' ছবিতে মুকেশ-লতার গলায় সুপারহিট এই গানের দৌলতেই প্রায় রাতারাতি 'সেলিব্রিটি'' হয়ে গেলেন রানাঘাটের রানু মণ্ডল। সোশ্যাল মিডিয়ায় গত কয়েকদিন ধরেই ভাইরাল হয়েছে এই গানের ভিডিয়ো। এই কয়েকদিনেই ছাড়িয়ে গেছে প্রায় দুই মিলিয়ন ভিউয়ার্স। অবিকল যেন লতা মঙ্গেশকর গাইছেন! তাঁকে 'লতাকন্ঠী' বলেও বলছেন অনেকে।

ranu mondal

পরনে অপরিচ্ছন্ন পোশাক, উশকো খুশকো চুল। কিন্তু তাঁর কন্ঠে মুগ্ধ বাচ্চা থেকে বয়স্ক সবাই। একেবারে সাদামাটা। মুখ দেখলে বোঝার উপায় নেই কী প্রতিভা লুকিয়ে আছে তার ভিতরে। অনেকদিন ধরেই রানাঘাট স্টেশনে বসে গুনগুন করেন পঞ্চাশ পেরোনো রানু মণ্ডল। যাতায়াতের পথে স্টেশনের অনেক নিত্যযাত্রীই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তার গান শোনেন। কেউ কোনও বিশেষ গান শোনানোর অনুরোধ করলে সেটাও গেয়ে শোনান। ঠিক সেরকমইভাবেই, এক যাত্রীর কানে ভেসে আসে তার গান। তিনি সঙ্গে সঙ্গে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মেই তাঁর গান রেকর্ড করেন। পরে, তিনি তা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করতেই মুহূর্তের মধ্যেই তা সুপারহিট হয়ে যায়। নিমেষে ভাইরাল হয়ে যায় গোটা দুনিয়ায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই একটা পোস্টই বদলে দিল রানুর জীবন।

তাঁর পুরো নাম রানু মারিয়া মণ্ডল। পরিচিতি ছড়িয়ে পড়তেই বিভিন্ন জায়গা থেকে একের পর এক গানের অনুরোধ আসছে। রানু তাদের অনুরোধে সুরেলা কণ্ঠে গেয়ে চলেছেন একের পর এক গান - এক পেয়ার কা নাগমা হ্যায়, বন্দেমাতরম, অ্যায় মেরে বতন কে লোগো, আকাশ প্রদীর জ্বলে, সোনার বাংলা, ম্যায় ভুল গিয়ারে হরবাত- কোনও গানই বাদ দিচ্ছেন না।

বর্তমানে নদিয়ার রানাঘাট থানার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বেগোপাড়ার বাড়িতে একাই বসবাস করেন রানু। জন্ম নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। ৯ বছর বয়সে মামার সঙ্গে রানাঘাটে চলে আসেন। ছোট থেকেই গানের আগ্রহ ছিল তাঁর। নিজে নিজে একাই বসে বাড়িতে গান করতেন। স্বপ্ন ছিল বড় গায়িকা হওয়ার। পরিবারের তরফ থেকে কোন উৎসাহ না পাওয়ার দিনে দিনে লুপ্ত হতে থাকে প্রতিভা। বিয়ের পর তাঁর স্বামী ছেড়ে চলে যায় মুম্বই। তখন থেকে তিনি একা হয়ে পড়েন।

এরই মধ্যে, দেখা হয়েছে তার মেয়ে স্বাতী রায়ের সঙ্গেও। প্রায় চার বছর কোনও সাক্ষাৎ ছিল না মেয়ের সাথে। এতদিন পর মেয়েকে দেখে অত্যন্ত খুশি তিনি। গানই মিলিয়ে দিল মা-মেয়েকে। মেয়ের বাড়ি বীরভূম জেলায়।

ইতিমধ্যেই, তার গান শুনে ডাক এসেছে সুদূর মুম্বই-দিল্লি থেকেও। তাই আর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঘুরে ঘুরে গান নয়, বাড়িতেই তাঁর গান শুনতে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অভাবের অনটনে যে গান এতদিন চাপা পড়েছিল, সেই গানেই এখন মাতোয়ারা দর্শক-কুল।

মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের তরফে ফোন করে রানুকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দিল্লির একটি সমাজসেবী সংস্থাও যোগাযোগ করছে রানুর সঙ্গে। প্রতিবেশী তপন দাসের ফোনে যোগাযোগ করছে সংস্থাগুলি। তাঁর গান শোনার পর তাঁরা ব্যবহার করতে চাইছেন রানুর কণ্ঠ।

১৪ অগস্ট, বুধবার রানাঘাট ২ নম্বর ব্লক অফিস চত্বরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে 'কন্যাশ্রী দিবস' পালন করা হবে। সেখান থেকেও তাঁকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে যাওয়ার জন্য।

এক সময় তিনি পথে পথে ভবঘুরের মতো ঘুরতেন। গান গাইতেন লোকাল ট্রেনে, স্টেশনে। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এখন তিনি তারকা। নেট দুনিয়ার জাদুতে আজ তিনি এতটাই বদলে গেছেন যে চেনা দায়। মাথার এলোমেলো রুক্ষ সাদা-কালো চুল রঙিন, পরিপাটি। পরনে অপরিচ্ছন্ন শাড়ির জায়গায় নতুন রঙিন শাড়ি,ঠোঁটে লিপস্টিক। লতা মঙ্গেশকরের একটি গানের কয়েক কলি এভাবেই পাল্টে দিয়েছে রাণাঘাটের রানু মণ্ডলের জীবন।

Read more about: social media
English summary

Ranu Mondal is viral after singing a song

Ranu Mondal mesmerised millions with her soulful rendition of Lata Mangeshkar classic Ek Pyar Ka Nagma Hai.
X
Desktop Bottom Promotion