Just In
- 3 hrs ago এপ্রিল মাসে ৪ গ্রহের স্থান পরিবর্তন, রাজযোগ ও সৌভাগ্যে ফুলে ফেঁপে উঠবে এই রাশির জাতকরা, দেখুন
- 4 hrs ago আপনার কি ক্রমাগত কান চুলকাচ্ছেন? অজান্তেই ডেকে আনচ্ছেন বড় বিপদ
- 8 hrs ago মসুর ডাল খেতে ভালোবাসেন? কিন্তু অতিরিক্ত খেলে হতে পারে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া!
- 9 hrs ago অনলাইন গেমে বাচ্চারা ঘরকুঁনো! জানেন কি স্বাস্থ্যের জন্য় কতটা উপকারি আউটডোর গেম?
Real Story : তালিবানের থেকে বাঁচতে ১০ বছর পুরুষ সেজে কাটিয়েছিলেন এই আফগান মহিলা...
প্রায় ২০ বছর পর তালিবানের প্রত্যাবর্তন কেবল আফগানিস্তানেই নয়, সারা বিশ্বে ভয় ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত যারা তালিবান শাসন দেখেছেন, তাদের ভেতরে আতঙ্ক আবার চেপে বসেছে। বর্তমানে গোটা বিশ্বের চোখ আফগানিস্তানের দিকে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, আফগানিস্তানে আবার গণহত্যার যুগ শুরু হবে, নারীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
এই ভীতিকর সময়ের মধ্যে, আজ আমরা আপনাদের আফগান বংশোদ্ভূত একজন মহিলার জীবন কাহিনী সম্পর্কে বলব, যিনি তালিবান শাসনকালে প্রায় ১০ বছর একজন পুরুষ হিসেবে বেঁচে ছিলেন। নারীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা ও নিপীড়ন খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। তাঁর পুরো নাম নাদিয়া গুলাম দাস্তগির। আপাতত স্পেনে শরণার্থী হিসেবে থাকেন তিনি।
কেন পুরুষ সেজে থাকতে হয়েছিল?
১৯৮৫ সালে কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন নাদিয়া গুলাম। নাদিয়ার বয়স যখন আট বছর, তখন তালিবানের ছোঁড়া বোমা বিস্ফোরণে তাঁর বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। পরিবারের অনেকেই সেই দিন প্রাণ হারিয়েছিলেন। ওই হামলায় মৃত্যু হয়েছিল নাদিয়ার ভাইয়েরও এবং গুরুতর জখম হন নাদিয়া নিজেও। প্রায় দুই বছর ধরে তাঁর চিকিৎসা চলে বিভিন্ন হাসপাতালে।
পরিবারের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, দু'বেলা দু'মুঠো খাবার জোগাড় করাও খুব কষ্টের হয়ে দাঁড়ায়। বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন, আর তালিবান আইনের কারণে তাঁর মায়ের পক্ষেও কাজ খোঁজার সম্ভব হয়নি। কারণ, তালিবান শাসনে মহিলাদের বাইরে বেরোনো, কাজ করা ছিল মানা। আফগানিস্তানে তখন গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকত। বিন্দুমাত্র অধিকার ছিল না মহিলাদের। সবসময়ই বোরখা বা হিজাব পরে থাকা বাধ্যতামূলক ছিল।
তাই পরিবারকে ও তালিবানের অত্যাচার থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য, ১১ বছর বয়সে নাদিয়া তাঁর মায়ের কথাতেই সেই প্রথম পুরুষের বেশ ধরেন। তাঁর মৃত ভাইয়ের পরিচয়ে সামনে আসেন। তালিবানি শাসনের চরম সময়েও পরিবারের হাল ধরতে পিছুপা হননি তিনি।
প্রায় ১০ বছর ধরে একজন পুরুষ হিসেবে কাটান তিনি। সেই বেশেই রোজ কাজে যেতেন নাদিয়া। সংসার চালানোর জন্য সেই সময় তিনি বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছেন। মসজিদে গিয়ে কোরান পড়তে শুরু করেন। কাবুলের এক মসজিদে কর্মচারী হিসেবেও কাজে যোগ দেন নাদিয়া। 'পুরুষ' হওয়ার জন্য একসময় স্কুলেও ভর্তি হতে পেরেছিলেন তিনি। পুরুষের বেশে থেকে থেকে, একসময় ভুলতে বসেছিলেন নিজের নারীসত্ত্বাকেই। প্রতিটা মুহূর্তে মানসিক-শারীরিক দ্বন্দ্বে জর্জরিত হতে হত নিজেকে।
তালিবান শাসনের আগের জীবন
একটি ইন্টারভিউতে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরুর আগে এবং তালিবান শাসন প্রতিষ্ঠার আগে তাঁর জীবন কেমন ছিল? এ বিষয়ে নাদিয়া বলেন, "যুদ্ধের আগে, বিশ্বের অন্যান্য শিশুর মতোই আমারও সুখী স্বাভাবিক জীবনযাপন ছিল। আমার বাবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন এবং মা একজন গৃহিণী ছিলেন। তখন আমি স্কুলেও যেতাম এবং আমার আশেপাশের প্রত্যেক মেয়ে-মহিলারাও বেশ স্বাধীন ছিল।" কিন্তু তালিবান শাসন প্রতিষ্ঠার পর, পরিস্থিতির কারণে নাদিয়া পড়াশুনা বা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হন।
স্পেনে আশ্রয় নেন
বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরুষের পরিচয় বহন করা বেশ কঠিন ছিল। ২০০৬ সালে আফগানিস্তানের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার সাহায্যে কাবুল থেকে পালিয়ে যান তিনি। স্পেনে গিয়ে আশ্রয় নেন নাদিয়া। স্পেনের একটি শরণার্থী শিবিরে থাকতে শুরু করেন। স্পেনে থেকেই উচ্চশিক্ষিত হয়েছেন নাদিয়া।
স্পেনে থাকাকালীনই তিনি তাঁর জীবন যুদ্ধের কাহিনী তুলে ধরেন 'দ্য সিক্রেট অফ মাই টারবান' নামে তাঁর লেখা বইতে। এই লেখায় তাঁকে সাহায্য করেন সাংবাদিক অ্যাগনেস রটগের। ২০১০ সালে এই বইয়ের মাধ্যমেই সারা বিশ্ব তাঁকে চিনেছিল। বর্তমানে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে জড়িত নাদিয়া।