Just In
- 10 hrs ago রোদে বের হলেই মাথা যন্ত্রণা কাবু করে? মাইগ্রেন নয় তো!
- 11 hrs ago শুধু ফ্যাশন নয়, প্রখর রোদ থেকে বাঁচতে পরুন সানগ্লাস!
- 13 hrs ago অসহ্য গরমে সর্দি-কাশিতে ভুগছেন? এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি ট্রাই করুন
- 17 hrs ago কর্মক্ষেত্রে সমস্যা মকরের, ব্যাবসায় আর্থিক লাভ মীনের, কেমন যাবে আজকের দিন? দেখুন রাশিফল
চন্দ্রযান টু : শেষ মুহূর্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল বিক্রম ল্যান্ডারের সঙ্গে
প্রত্যেক ভারতীয়র কাছে এটা ছিল নিদ্রাহীন রাত! স্থির দৃষ্টিতে সারা দেশের মানুষ তাকিয়ে ছিল টিভির পর্দায়। সবার মনে এটাই চলছিল, এই হয়তো চন্দ্রযান-টু-র বিক্রম ল্যান্ডারের চাঁদে সফল অবতরণের কোনও খবর আসবে, তারপর সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়বে। কিন্তু, সেটা আর হল না। শুক্রবার গভীর রাত অর্থাৎ শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর গভীর রাত ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের কথা ছিল চন্দ্রযান-টু এর। কিন্তু, রাত ২টো ১৫ মিনিট নাগাদ ইসরোর চিফ, কে শিবন নিশ্চিত করে জানিয়েছেন যে, বিক্রম ল্যান্ডারের সঙ্গে ভারতের মহাকাশ সংস্থা ইসরোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কোনও সংকেত পাওয়া যাচ্ছে না।
চন্দ্রযান-টু মহাকাশযানের তিনটি অংশ। প্রথমটি অরবিটার, দ্বিতীয়টি ল্যান্ডার বিক্রম এবং সর্বশেষ অংশ রোভার প্রজ্ঞান। ২২ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিল চন্দ্রযান-টু, ভারতের ভারী লিফট রকেট 'জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল-মার্ক-থ্রি চড়ে। বাধাহীনভাবে তিন লক্ষ ৮৪ কিলোমিটারের বেশিরভাগ পথ পেরিয়েও গিয়েছিল। অপেক্ষা ছিল শুধুমাত্র সফলভাবে চাঁদের বুকে নামার। কিন্তু, তীরে এসেই ডুবে গেল তরী। ব্যর্থতায় ভেঙে পড়লেন বিজ্ঞানীরা।
কে শিবন জানিয়েছিলেন, ল্যান্ডারের ১৫ মিনিটের সফর ইসরোর কাছে সবথেকে দুশ্চিন্তার মুহূর্ত। এটি এমন জায়গায় নামবে যেখানে কোনও বায়ুমণ্ডল নেই। শুধুমাত্র প্রোপালশন সিস্টেম কাজে লাগিয়ে গতিবেগ কমাতে হবে এবং নিরাপদে অবতরণ করতে হবে। গর্তে ভরা দক্ষিণ মেরুতে সমতলের খোঁজ চালাচ্ছিল চন্দ্রযান। যাতে অবতরণে এবং তার পর ল্যান্ডার-রোভারের নড়াচড়ায় কোনও সমস্যা না-হয়। ইতিমধ্যেই চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি তুলে পাঠাতেও শুরু করেছিল অরবাইটার, ল্যান্ডার।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করার কথা ছিল বিক্রম ল্যান্ডারের। এই অবতরণ সফল হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকা, চিনের পর বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কৃতিত্ব আসত ভারতের ঝুলিতে। তবে, দক্ষিণ মেরুতে প্রথম দেশ হিসেবে নামার কথা ছিল ভারতের। শুধু ইসরোই নয়, চন্দ্রযান-টু অভিযানের সাফল্যের দিকে তাকিয়ে ছিল চাঁদ নিয়ে গবেষণা করা সব দেশই। আশা ছিল, দক্ষিণ মেরুতে জলের অস্তিত্ব মিললে, ভবিষ্যতের অভিযান নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসবে সবাই। যেমন, পাঁচ বছরের মধ্যে আবার চাঁদে মানুষ পাঠাতে চায় আমেরিকা। ভারতের এই অভিযান সফল হলে দক্ষিণ মেরুর ওই জায়গাকেই নিজেদের অবতরণের জন্য বেছে নেবে নাসা।
ইসরো জানিয়েছিল, রাত একটা থেকে দুটোর মধ্যে চন্দ্রপৃষ্ঠের পথে নামা শুরু করবে বিক্রম। সেইমতো, বিজ্ঞানীদের নজর ছিল অবতরণের অন্তিম ১৫ মিনিটের দিকেই। ৯৭৮ কোটি টাকার প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন ইসরোর প্রাক্তন ও বর্তমান বিজ্ঞানীরা। ইসরোর সাফল্য দেখার জন্য বেঙ্গালুরুতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চন্দ্রযানের অভিযান উপলক্ষ্যে ভারতে এসেছিলেন নাসার বিজ্ঞানীরাও।
গত ২ সেপ্টেম্বর অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হয় বিক্রম। ভারতীয় সময় শনিবার ভোর রাত ১.৪০ মিনিট থেকে ১.৫৫ মিনিটের মধ্যে চাঁদের মাটিতে পা রাখার কথা ছিল ল্যান্ডারের। তার পর ভোর ৫টা থেকে ৬টা নাগাদ সেই ল্যান্ডার থেকে বেরিয়ে আসত রোভার প্রজ্ঞান। এরপর, চাঁদের মাটিতে থেকে চাঁদের জলবায়ু-সহ একাধিক তথ্য তার পাঠানোর কথা ছিল ইসরোর গবেষণাগারে। পাশাপাশি ল্যান্ডার-রোভারের চোখ চাঁদের খনিজের দিকেও থাকার কথা ছিল।
কিন্তু, সেটি আদৌ অবতরণ করতে পেরেছে কি না, সে সম্পর্কিত কোনও তথ্য ইসরোর কাছে এসে পৌঁছোয়নি। কারণ, অবতরণের আগের মুহূর্তেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গতি কমিয়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের ২.১ কিমি আগেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলে জানিয়েছে ইসরো।
বিক্রম ল্যান্ডার চাঁদের মাটি ছুঁতে না পারায় ভেঙে পড়েন ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইসরো প্রধানকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন।