Just In
- 13 hrs ago ঠাকুরকে নিত্যভোগ দেওয়ার সময় ঘণ্টা বাজে কেন? জানেন কি এর পিছনের রহস্য
- 15 hrs ago প্রখর রোদ থেকে স্বস্তি পেতে বাড়িতেই বানিয়ে নিন এই শরবতগুলি, ঠান্ডা রাখবে শরীরও
- 17 hrs ago গরমে এই পানীয়গুলি খেলে আপনিও থাকবেন হাইড্রেটেড ও সতেজ
- 19 hrs ago কাঠফাটা রোদ থেকে বাঁচতে কী করবেন? এড়িয়ে চলুন চা-কফি
ইয়েতির পায়ের ছাপ দেখেছিল ওরা!
টিনটিনের দৌলতে প্রথম দেখা সেই অতিমানবের সঙ্গে। তারপর বয়স বেড়েছে, বেড়েছে ব্যস্ততাও। সেই ফাঁক কখনও যে উৎসাহটা হারিয়ে গিয়েছিল, খেয়ালই করিনি। সেদিন হঠাৎই একদল পর্যটক যেন সুরসুরি দিয়ে জাগিয়ে তুলল সেই জানার আগ্রহকে। তাই তো এই হিমালয় যাত্রা। আপনরাও সঙ্গী হন না, কে বলতে পারে হয়তো আপনিও দেখা পেয়ে যেতে পারেন বিশালাকায় ইয়েতির। যাদের আস্তানা বরফ ঘেরা হিমালয়ের শৃঙ্গ। যেখানে সভ্য সমাজের প্রবেশ মানা। তবু আমরা যাব। খুঁজে আনবোই আনবো সত্যকে।
সুবিশাল এই প্রাণীটির দেহের গড়ন নাকি অনেকটা মানুষে মতই। কিন্তু শক্তির দিক থেকে কয়েকটি হাতির সমান। মায়া দয়ার লেশ মাত্র নেই নাকি ইয়েতির মনে। সে ঘুরে বেরায় নির্জন পাহাড়ের কোলে। কী খায়? কোথায় থাকে? কেনই বা দেখা পাওয়া যায় না? সে খবর কয়েক শতাব্দী আগে পর্যন্তও অজানা ছিল। তবে ধীরে ধীরে অনেক কিছুই জানতে পারা সম্ভব হয়েছে। এমনকী আধুনিক জেনেটিক্সও এমন প্রাণীর অস্তিত্বের কথা অস্বীকার করেনি। তাই আশার আলো আরও জোরদার হয়েছে।
প্রথম খোঁজ মেলে নেপালে:
আজ থেকে কয়েক শতাব্দী আগে নেপালের একদল শেরপার মুখে প্রথম এই অতিমানবের কথা জানতে পারা যায়। সেই শুরু। তারপর থেকে যত সময় এগিয়েছে তত ইয়েতিকে নিয়ে মানুষের মনে আগ্রহ বৃদ্ধি পয়েছে। এদের জয়গা হয়েছে নানা দেশের, নানা ভাষার গল্প গাঁথায়। কোন কোন গল্পে এদের মনাব জাতির বিরুদ্ধে দাঁড় করা হয়েছে, তো কোথাও এদের শয়তানের অরেক রূপ হিসেবে বর্ননা করা হয়ছে। কিন্তুর সত্যের খোঁজ তখনও শুরু হয়নি।
এর মধ্যে কি আদৌ সত্যি আছে?
একদল গবেষকের মতে ইয়েতির কোনও অস্তিত্বই নেই। আসলে কোঠিন আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করার জন্য পাহাড়ি মানুষদের মন যাতে শক্ত হয়ে ওঠে, তার জন্যই এই এদের মধ্যে অনেক আগে থেকেই ইয়েতির ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। যাতে এই ভয়ের কারণে তারা ছোট থেকেই মানসিক এবং শারীরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
কিন্তু ওরা যে দেখেছিল:
একথা ঠিক যে একটা সময় পর্যন্ত ইয়েতিকে গল্পের চরিত্র হিসেবেই বেবেচিত করে এসেছিলেন পর্যটকেরা। কিন্তু যেদিন প্রথম পশ্চিমি সভ্যতার পা পড়ল হিমালয়ের দুর্গমে সেদিন থেকে গল্প যেন ধীরে ধীরে বাস্তবের রূপ নিতে শুরু করল। ১৯২১ সালে বিখ্যাত ভূপর্যটক চার্লস হাওয়ার্ডের নেতৃত্ব একদল ব্রিটিশ পর্বতারোহী মাউন্ট এবারেস্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। তাদের লক্ষ ইয়েতির সন্ধান করা। সেই যাত্রাকালীন তারা বরফের উপর বিশালাকায় একটি প্রাণীর পায়ের ছাপ দেখতে পান। এত বিশাল পায়ের আকার কোনও সাধারণ জন্তুর যে নয়, তা তারা বুঝে গিয়েছিলেন। তাই তারা আরও অনুসন্ধান শুরু করলেন। সে যাত্রায় যদিও সেই প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যায়নি ঠিকই, কিন্তু বরফের দেশে মানুষের মতোই শরীরের গঠন স্বরূপ কোনও প্রাণীর বাস যে রয়েছে সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন। সেই থেকে পাহাড়ি রাজ্যের অদেখা এই প্রাণীর নাম হয়ে যায় "মেঠা-কাংমি", যার অর্থ "বরফের দেশের অতিকায় প্রাণী"।
১৯৫০ সাল:
ইয়েতির খোঁজে সবথেকে বেশি সংখ্যক অভিযান হয়েছিল এই সময়ই। যদিও একের এক অভিযানের পরেও তাদের দেখা মেলেনি। মিলেছিল শুধু পায়ের ছাপ। যার একটি এখনও ভুটানের এক মিউজিয়ামে রাখা আছে। কিন্তু যেখানে পায়ের ছাপ মিলছে, সেখান শরীরের দেখা মিলছে না কেন? পর্যটকদের ধরণা ইয়েতিরা এতটাই দুর্গম শৃঙ্গে থাকে যে সেখানে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব। কিন্তু তারা যে আছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
মাথার খুলির সত্য-মিথ্যা:
৭০-এর দশকে এক অভিযান চলাকালীন একটা বিশালাকায় খুলির সন্ধান পান শেরপারা। তাদের মনে হয়েছিল এই দেহাংশ কোনও ইয়েতিরই হবে। যদির পরবর্তি সময় একাধিক পরীক্ষার পর বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন এই খুলিটি আসলে একটা ভাল্লুকের।
ইয়েতি বলে কিছুই নেই:
৭০ এর দশকের সেই ধরণা আরও জোরদার হয় বিখ্যাত পর্বতারোহী রেনাল্ড মেসনারের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে। তিনি বহবার ইয়েতির সন্ধানে হিনালয়ের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন। তবু তিনি কোনও বিশালাকায় প্রাণীর সন্ধান পাননি। পরবর্তী সময় তার অভিজ্ঞতা এবং বৈজ্ঞানিক অনুসন্দানের উপর ভিত্তি করে তার মনে হয়েছিল ইয়েতি বলে আসলে কিছুই নেই। যে প্রাণীটির পায়ের ছাপ সবাই এতদিন দেখে এসেছিল সেটি আসলে কোনও বিশালাকায় ভাল্লুকের। কিন্তু একদল শেরপা যে মানুষের মতো সাদা লোমে ঢাকা কোনও প্রাণীকে বরফের ঝড়ে হারিয়ে যেতে দেখেছিল? সেই অভিজ্ঞতার মধ্য়ে যে কোনও সত্য ছিল না, তা বলাই বাহুল্য। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে একাধিক জেনেটিক রিসার্চের পর মেসনারের বক্তব্যকেই মান্যতা দিয়েছেন গবেষকরা। তারা মেনে নিয়েছেন এর আগে যে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগুলি হয়েছিল তা সত্য নির্ভর ছিল না। কিন্তু এবার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ইয়েতি বলে আদতে কিছুই নেই। বরং যে প্রাণীর পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছিল সেটি আসলে এক বিশেষ প্রজাতির পোলার বিয়ারের। যাদের অস্তিত্ব নাকি ৪০,০০০ বছর আগে মুছে গিয়েছিল। অর্থাৎ ইয়েতির খোঁজ করতে গিয়ে একথা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, যে ভাল্লুকদের এক সময় বিলুপ্তি ঘেটেছিল, তাদের কেউ কেউ এখনও হিমালয়ের কোলে নিশ্চিন্তে বসবাস করছে।
ইয়েতির কবর:
তাই সব শেষে বলতেই হয় যে ইয়েতি বলে বাস্তবিকই কোনও প্রাণী আমাদের এই মানব গ্রহে নেই। তাবু একদল পর্যটক যেন এখনও গবেষণা নির্ভর এই তথ্যকে মানতেই নারাজ। তারা আজও ইয়েতি নামক মরীচিকার পিছনে ছুটে চলেছে। তাদের আশা হয়তো একদিন ঠিক দেখা মিলবে লুকিয়ে থাকা সেই অতি মানবের।