Just In
- 51 min ago
দৈনিক রাশিফল : মঙ্গলবারে মঙ্গল হবে কি? জানতে পড়ুন ২০ এপ্রিলের রাশিফল
- 10 hrs ago
আজই বাড়িতে বানিয়ে ফেলুন শিল্পা শেট্টির ‘ম্যাঙ্গো মুজ’ রেসিপি! দেখে নিন তৈরির পদ্ধতি
- 12 hrs ago
মশার কামড় থেকে চুলকানি? ঘরোয়া উপায়েই মিলবে আরাম
- 17 hrs ago
Annapurna Puja 2021 : দেবী অন্নপূর্ণার পুজো করলে অভাব-অনটন ঘুচবে, রইল অন্নপূর্ণা পুজোর সময়সূচি ও নির্ঘণ্ট
Don't Miss
নেতাজির জন্মদিনে আজও বিনা পয়সায় তেলে ভাজা বিলি করে এই দোকানটি, জেনে নিন এর আসল কারণ
ভারতবর্ষ তখনও পরাধীন। স্বাধীনতার আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠেনি। এমতাবস্থায়, সারা দেশজুড়ে চলছে স্বদেশি আন্দোলন। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আন্দোলনের জন্য তৈরী হচ্ছেন নেতাজি। ভারতকে স্বাধীন করতেই হবে, এই লক্ষ্যেই নেতাজির সঙ্গে একজোট হয়ে ময়দানে নেমেছেন বহু বীর বিপ্লবী।
ইংরেজদের বিরুদ্ধে দেশবাসীর আন্দোলনের প্রস্তুতি একেবারে তুঙ্গে। শহরজুড়ে চলছে মিটিং-মিছিল। কোথাও চলছে গোপনে আন্দোলনের ডাক। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। এমনই এক স্বদেশীদের গোপন ডেরায় তেলেভাজা, চা ও মুড়ির বরাত পেয়েছিলেন খেঁদু সাউ নামে এক ভদ্রলোক। যার হাতে তৈরি তেলেভাজা খেতেন স্বয়ং নেতাজি।
শোনা যায়, খেঁদু সাউও ছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের এক শরিক। ১৯৪১ সালে নেতাজি ভারত ছেড়ে অন্তর্ধানে চলে যাওয়ার পর থেকেই তাঁকে স্বরণ করতে ১৯৪২ সাল থেকে নেতাজির জন্মদিনে তিনি বিনা পয়সায় তেলে ভাজা বিতরণ করতেন মানুষের মধ্যে। যে ট্র্যাডিশন আজও চলে আসছে।
কে এই খেঁদু সাউ? কেনই বা তিনি ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিনে বিনা পয়সায় তেলে ভাজা দান করতেন? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর জানতে বোল্ডস্কাই কথা বলেছে তাঁর নাতি কেষ্টকুমার গুপ্ত(সাউ) মহাশয়ের সঙ্গে। তবে, চলুন জেনে নেওয়া যাক এর পেছনের কাহিনী।
১৯১৮ সাল। খেঁদু সাউ বিহার থেকে চলে আসেন কলকাতায়। প্রথমে হাওড়ায়, তারপর 'রূপবাণী’ সিনেমা হলের সামনে শুরু করেন তাঁর তেলেভাজার ব্যবসা। দোকানের নাম দেন লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ এন্ড সন্স্। আলুর চপ, পিঁয়াজি, ফুলুরি থেকে নানবিধ আইটেম তাঁর হাতের যাদুতে সুস্বাদু হয়ে উঠেছিল। দোকানের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায়।
তখন চলছে দেশ স্বাধীন করার লড়াই। নেতাজির নেতৃত্বে এক জোট হচ্ছেন বাংলার বিপ্লবীরা। সন্দেহ দেখা দিলেই চলত ইংরেজদের গুলি ও অত্যাচার। এই সবকিছুকে উপেক্ষা করেই এই বাঙালি ভদ্রলোক তেলেভাজা, কেটলি ভরা চা, মুড়ি ও খবরের কাগজ নিয়ে এগিয়ে যেতেন বিপ্লবীদের গোপন ডেরায়। কখনও বাগবাজার, কখনও মানিকতলা আবার কখনও কাশীপুরে।
খেঁদু সাউ-এর নাতি, কেষ্টকুমার গুপ্তের কথা অনুযায়ী, ডেরায় পৌঁছে খেঁদু সাউ পেতে দিতেন একটি খবরের কাগজ। তারপর মুড়ি ঢেলে তার পাশে চপ, পিঁয়াজি, ফুলুরি সাজিয়ে রাখতেন তিনি। মুড়ি, তেলেভাজা ও চা-এর সাথেই চলত ইংরেজদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পরিকল্পনা। একজন সাধারণ মানুষ হয়েও বিপ্লবীদের এহেন কর্মকান্ডে উদ্বুদ্ধ হন খেঁদু সাউ। নিয়মিত এরকম চলতে চলতে তিনিও জড়িয়ে পড়েন স্বদেশী আন্দোলনের সাথে।
কেষ্টকুমার গুপ্ত আরও বলেন, "ব্যবসা চালানোর মাঝেই ইংরেজদের চোখে ধুলো দিয়ে খেঁদু সাউ নিজের দোকানকেই বানিয়ে ফেলেছিলেন 'আন্দোলনের এপিসেন্টার’। তেলেভাজা খাওয়ার ছলেই বিপ্লবীরা তাঁকে বলে যেতেন গোপন তথ্য। সেই তথ্য তিনি পৌঁছে দিতেন গোপন ডেরায়। এরকমই একদিন এক ডেরায় দেখা হয় নেতাজির সঙ্গে। তখন তিনি সুভাষচন্দ্র বসু হিসেবেই পরিচিত। সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্ব দেখে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। ভুলতে পারেননি নেতাজিকে। ইংরেজদের গুলি ও বোমার ভয়ে কলকাতা ছেড়ে পালাচ্ছেন বহু মানুষ। কিন্তু পালাননি খেঁদু সাউ। চালিয়ে যান গোপন তথ্য আদান-প্রদানের কাজ। এর বিনিময়ে বহুবার জেলেও যেতে হয় তাঁকে।"
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বিখ্যাত কিছু উক্তি, যা আজও দেশবাসীকে অনুপ্রেরণা যোগায়
'৪১ সালে নেতাজি অন্তর্ধানে চলে যাওয়ার পর নেতাজিকে স্মরণে রাখতে '৪২ সাল থেকে প্রতিবছর তিনি ২৩ জানুয়ারি বিলি করতেন তেলে ভাজা। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর দোকানের বাইরে বোর্ড ও নেতাজির ছবি লাগিয়ে চলত লোকজন খাওয়ানো। খেঁদু সাউয়ের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ ধরে রেখেছিলেন এই ঐতিহ্যকে। তবে ২০২০ সালে এসে এই রীতিটির কোনও নড়চড় হবে না এমনটাই জানান তাঁর নাতি কেষ্টকুমার গুপ্ত (সাউ) ও প্রপৌত্র সুধাংশু গুপ্ত (সাউ)।
১৫৮ বিধান সরণীর লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ এন্ড সন্স ১০২ বছর ধরে বয়ে নিয়ে চলেছে নেতাজির স্মৃতিকে। বর্তমানে এই দোকানটি 'নেতাজির চপের দোকান’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। আজও দোকানের বোর্ডে লেখা রয়েছে 'নেতাজির চরণে ভরসা’। শতবর্ষ পেরোলেও বিন্দুমাত্র স্বাদবদল হয়নি তেলেভাজার। বিগত বছরগুলির মত এবারেও চলবে বিনা পয়সায় লোকজন খাওয়ানো। শ্রদ্ধা অটুট থাকবে নেতাজির প্রতি।