Just In
- 13 hrs ago রোদে বের হলেই মাথা যন্ত্রণা কাবু করে? মাইগ্রেন নয় তো!
- 13 hrs ago শুধু ফ্যাশন নয়, প্রখর রোদ থেকে বাঁচতে পরুন সানগ্লাস!
- 16 hrs ago অসহ্য গরমে সর্দি-কাশিতে ভুগছেন? এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি ট্রাই করুন
- 19 hrs ago কর্মক্ষেত্রে সমস্যা মকরের, ব্যাবসায় আর্থিক লাভ মীনের, কেমন যাবে আজকের দিন? দেখুন রাশিফল
২৫ শে বৈশাখ : জেনে নিন কবিগুরুর সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য
লাল রঙের বিশাল ইমারত। ইমারতের মধ্যবর্তী অংশে রয়েছে বিশাল সবুজ রঙের চত্বর। লাল আর সবুজের সংমিশ্রণে ৬ নম্বর দ্বারকানাথ লেনের এই বাড়িতে জড়িত রয়েছে বহু ইতিহাস, বহু সাহিত্য, বহু স্মৃতি। সাহিত্য ও সংস্কৃতির নবজাগরণ ঘটেছে এই বাড়ির অন্দরমহল থেকেই। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ শে বৈশাখ অর্থাৎ এই দিনটিতে জোড়াসাঁকোর এই বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ, যা লোকমুখে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি নামে পরিচিত।
কবিগুরুর পথ চলা শুরু হয়েছিল এই বাড়ি থেকেই। শৈশবেই হারিয়েছেন মা-কে। চাকরদের শাসনের অধীনেই কেটেছে তাঁর ছেলেবেলা। ছোট থেকেই পড়াশোনাতে বিশেষ মন থাকত না তাঁর। একটি গণ্ডি চক্রের মধ্যেই থাকতেন তিনি। একা একাই থাকতে পছন্দ করতেন। আর এই একা সময়গুলো কাটতো বাড়ির চিলেকোঠায়। জানালার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে থাকতেন বাইরে, উপভোগ করতেন প্রকৃতিকে, বাইরের জগত-কে। এভাবেই বড় হয়ে ওঠা তাঁর। জন্মস্থান সম্পর্কে কবিগুরু লিখেছিলেন " আমি জন্ম নিয়েছিলুম সেকেলে কলকাতায়। শহরে শ্যাকরাগাড়ি ছুটছে তখন ছড়ছড় করে ধুলো উড়িয়ে, দড়ির চাবুক পড়ছে হাড়-বের করা ঘোড়ার পিঠে। না ছিল ট্রাম, না ছিল বাস, না ছিল মোটরগাড়ি। তখন কাজের এত বেশি হাঁসফাঁসানি ছিল না, রয়ে বসে দিন চলত। বাবুরা আপিসে যেতেন কষে তামাক টেনে নিয়ে পান চিবোতে চিবোতে, কেউ বা পালকি চড়ে কেউ বা ভাগের গাড়িতে।"
আরও পড়ুন : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেন ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত 'নাইটহুড' উপাধি ত্যাগ করেন? জেনে নিন এর নেপথ্য কাহিনী
শৈশব থেকেই শুরু হয় তাঁর সাহিত্যচর্চা। ছোট ছোট কবিতা লেখার মাধ্যমে শুরু হয় তাঁর লেখক জীবন। এরপর বড় হওয়ার সাথে সাথে একের পর এক সাহিত্য রচনা শুরু করেন কবিগুরু।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সিঁড়ি আর ছাদ ছিল কবিগুরুর নিত্যদিনের সঙ্গী। এই ছাদে বসেই লিখেছেন বহু গান, কবিতা, উপন্যাস। দিয়েছেন নাটকের মহড়া। তাঁর একের পর এক সৃষ্টি বাংলা সাহিত্যকে পৌঁছে দিয়েছে বিশ্বের দোরগোড়ায়। সাহিত্যের এমন কোনও শাখা নেই যেখানে তাঁর হাতের শৈল্পিক স্পর্শ পড়েনি। তাঁর মূল্যবান সৃষ্টিগুলি রচিত হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। বাংলা সাহিত্য ভান্ডার তাঁর দানে হয়েছে পরিপূর্ণ।
কবি বা লেখক হিসেবে বিশ্বব্যাপী খ্যাত হলেও রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। একাধারে ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ, কথা সাহিত্যিক, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী, দার্শনিক, প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক। নিজের সময়ে থেকেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধারণ করেছিলেন অনাগত কালকে। যে কারণে তাঁর অমর সৃষ্টিগুলি এখনও সমানভাবে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মধ্যযুগীয় ঔপনিবেশিক সাহিত্যের বেড়াজাল থেকে বাংলা সাহিত্যকে আধুনিকতায় মুড়ে দিয়েছিলেন তিনি।
১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে সাহিত্যে নোবেল অর্জন করেন রবীন্দ্রনাথ। এই সবকিছুর পাশাপাশি অন্যায়ের বিরুদ্ধেও চুপ থাকেননি তিনি। জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের জন্য ইংরেজদের দেওয়া নাইট উপাধি ত্যাগ করেছেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তিকে জাগ্রত করতে লিখেছেন দেশাত্মবোধক গান। গানের মাধ্যমে যুগিয়েছেন শক্তি ও সাহস। রবীন্দ্রনাথ শুধু ভারতবর্ষের জন্য নয় আরও দুটি দেশের জন্য জাতীয় সংগীত রচনা করেছিলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা।
শ্রীলঙ্কার বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ আনন্দ সামারাকুন ১৯৩০ সালে চারুকলা ও সঙ্গীত বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে বিশ্বভারতীতে এসেছিলেন। সেখানে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্য পান। রবীন্দ্রনাথ সামারাকুনের জন্য বাংলা ভাষায় 'নমো নমো শ্রীলঙ্কা মাতা' গানটি রচনা করেন এবং এর সুর দেন। সামারাকুন শ্রীলঙ্কায় ফিরে যাওয়ার পর সিংহলি ভাষায় গানটি অনুবাদ করেন। যার প্রথম লাইন হচ্ছে 'নমো নমো মাতা আপা শ্রীলঙ্কা নমো নমো মাতা, সুন্দর শ্রী বরণী'। পরবর্তীতে ১৯৫১ সালে এই গানটি শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মর্যাদা পায়।
আধুনিক যুগে মানুষ অনেক বেশি যান্ত্রিক হলেও, আবেগ অনুভূতি প্রকাশে এখনও ফিরে আসতে হয় রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিসম্ভারে। ৫২টি কবিতার বই, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ বই এবং অন্যান্য গদ্য সংকলন লিখে গেছেন তিনি। তাঁর লেখা ছোট গল্পের মোট সংখ্যা ৯৫টি এবং তিনি প্রায় ২০০০ গান লিখেছেন, যা যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতানে সংকলিত করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত বই এবং অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খন্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে।