Just In
- 15 hrs ago ঠাকুরকে নিত্যভোগ দেওয়ার সময় ঘণ্টা বাজে কেন? জানেন কি এর পিছনের রহস্য
- 16 hrs ago প্রখর রোদ থেকে স্বস্তি পেতে বাড়িতেই বানিয়ে নিন এই শরবতগুলি, ঠান্ডা রাখবে শরীরও
- 19 hrs ago গরমে এই পানীয়গুলি খেলে আপনিও থাকবেন হাইড্রেটেড ও সতেজ
- 21 hrs ago কাঠফাটা রোদ থেকে বাঁচতে কী করবেন? এড়িয়ে চলুন চা-কফি
Don't Miss
ইজরায়েলের মিসাইলের সামনে দাঁড়িয়ে প্যালেস্থাইনের কিছু বই!
গাজা স্ট্রিপের ছোট্ট একটা শহর দেয়র আল বালহা। এক সময় গাছের ছায়ায় ঢেকে থাকা এই শহরে এখন কোনও মতে বেঁচে আছে গুঁটি কয়েক প্রাণ। এখানেই গড়ে উঠেছে গাজার প্রথম চিলড্রেন লাইব্রেরি।
বাড়িগুলো কেমন সব ভূতের মতো দাঁড়িয়ে। সবকটারই কঙ্কালসার অবস্থা। আর তার মাঝেই বাচ্চাগুলোকে শুয়ে রাখা হয়েছে। গায়ে ওদের চাপ চাপ রক্তের দাগ, চোখে-মুখে ধুলো। না ওরা আর কেউ বেঁচে নেই। অকালে ওদের প্রাণ কেরে নিয়েছে কিছু ইজরায়েলি বোমারু বিমান। কী দোষ ছিল ওদের? সে অর্থে কোনও দোষ করেনি ওরা। কিন্তু আজকের ডেটে প্য়ালেস্থাইনে জন্মানোই তো একটা বড় দোষ! তাই ওদের মরতে হয়েছে। বাকি সবাইকেও মরতে হবে। কারণ এটাই ধ্বংসপ্রায় গাজা স্ট্রিপের চেনা ছবি।
যে পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকা দায়, সেখানে স্বপ্ন দেখার অধিকার কি আদৌ কারও আছে? জানি কী উত্তর দেবেন! যে মানুষদের সারা দুনিয়া ভুলে গেছে। যাদের পেটে শুধুই বোমার ক্ষত, আর নাকে বারুদের গন্ধ। তারা স্বপ্ন দেখবে কীভাবে! তাদের কাছে তো বেঁচে থাকাটাই একটা স্বপ্ন। তবু এই জীবন্ত লাশেরা স্বপ্ন দেখছে! আর তাদের নতুন ভাবে বেঁচে ওঠার স্বপ্ন দেখাচ্ছে একদল ছাত্র-ছাত্রী। তাদের একটাই লক্ষ। এই মৃত্যুপুরীতেই জ্ঞানের মশাল জ্বালানো। তাই তো তারা ভাঙা স্কুল বাড়ির একটা অংশকে রং করে জন্ম দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে একটা লাইব্রেরির, যেখানে প্যালেস্থানিয় শিশুরা পড়ার সুয়োগ পাবে। জানার সুযোগ পাবে তাদের সভ্যতাকে।
গাজা স্ট্রিপের ছোট্ট একটা শহর দেয়র আল বালহা। এক সময় গাছের ছায়ায় ঢেকে থাকা এই শহরে এখন কোনও মতে বেঁচে আছে গুঁটি কয়েক প্রাণ। এখানেই গড়ে উঠেছে গাজার প্রথম চিলড্রেন লাইব্রেরি। যেখানে দেশি-বিদেশি বইয়েরা বাচ্চাদের স্বপ্ন দেখতে শেখাচ্ছে, অনুপ্রাণিত করছে ধ্বংসের মাঝেও বেঁচে ওঠার জন্য, যেমনটা সোকাইনা স্কুলের ছাত্রীদের করেছিল তাদের পছন্দের বইয়েরা। নানা বই পড়তে পড়তে তারা জানতে পেরেছিল ফিনিক্স পাখির সম্পর্কে। যে পাখি ধ্বংস থেকে বেঁচে ওঠে। তাই তো ওরা গাঁজা স্ট্রিপের প্রায় ১০ লক্ষ বাচ্চার মনে ফিনিক্স পাখির জন্ম দিতে চায়। কে বলতে পারে একদিন যেমন সাইনা, মমতাজ এবং ইনসারারা মৃত্যুর মুখে কালি ছিটিয়ে জীবনের জয়গান গাইতে শুরু করেছিল, তেমনিই একদিন হয়তো এই বাচ্চারও একই কাজ করবে এবং মরতে বসা গাঁজাকে ফিরিয়ে দেবে তার পুরনো অবস্থায়।
জন্ম হল লাইব্রেরির:
ছাত্রীদের স্বপ্নের কথা জানতে পেরে নিজেদের মতো করে ফান্ড জোগারের চেষ্টায় লেগে পরেছিলেন ইউনিসেফের কর্মীরা। এদিক সেদিক চেষ্টার পর কোচিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল ৩০০ ইউ এস ডলার। সেই অর্থকে সম্বল করেই শুরু হয়েছিল যাত্রা। যদিও শুরুটা মোটেও সহজ ছিল না। স্কুল বাড়ির রিপিয়ার করা থেকে শুরু করে রং করা এবং বইয়ের জোগার, সবই করতে হচ্ছিল ছাত্রীদের। তার উপর ইজরায়েলি সেনার গুলি এবং ক্ষেপনাস্ত্রের আক্রমণ তো ছিলই। তবু ওরা দমে যায়নি। সব বাঁধাকে অতিক্রম করে শুরু করেছিল কাজ। ধীরে ধীরে চর্মচক্ষুর সামনে জন্ম নিচ্ছিল ওদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন।
শুরুতে মাত্রা ৩০ টা বই:
যেটুকু টাকা তারা পেয়েছিল, তাতে সব খরচ মিটিয়ে কেবল ৩০ টা বই কেনাই সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু তাতে মন খারাপ হয়নি কারও। কারণ একদিন যেখানে লাইব্রেরি গড়ে তোলার কথা শুনেই সবাই ওদের উপর হেসেছিল, সেখানে নতুন ৩০টা বই হাতে পাওয়া কম বড় ঘটনা ছিল না। বই তো এল, কিন্তু কোথায় বসে পড়বে বাচ্চার? এই প্রশ্নই ঘোরা-ঘুরি করছিল ছাত্রীদের মনে। আর ঠিকই তখনই একটা আজব আইডিয়া খেলে গলে কয়েকজনের মাথায়। কাঠের বক্স আর রাস্তায় পরে থাকা টায়ার দিয়ে শুরু হল বুক শেল্ফ এবং চেয়ার বানানোর কাজ। সেই শুরু...
শুরু হয় এক অভিযান:
প্রাথমিকভাবে লাইব্রেরি শুরু করার পর ছাত্রীদের সামনে একটাই লক্ষ ছিল, কীভাবে বইয়ের সংখ্যা আরও বাড়ানো যায়। এই প্রচেষ্টায় তারা একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে চিঠি পাঠাতে শুরু করল। কিছু সংস্থার কাছ থেকে মিলল জবাবও। আর তাদের চেষ্টাতেই ৩০টি বই নিয়ে শুরু হওয়া সোকাইনা স্কুলের লাইব্রেরিতে আজ প্রায় ৫০০ বইয়ের সম্ভার।
খুশি থাকার ৬ দিন:
বই শুধু আমাদের জ্ঞান দেয় না, দেয় নানা অজানা জগৎ সম্পর্কেও নানা ধারণাও। তাই তো আজকাল বাচ্চারা নতুনের খোঁজে সারাক্ষণ বই হাতে এখানে বসে থাকে। এখন আর ওরা দিনের শেষে বারুদের গন্ধ নাকে মেখে শুতে যায় না, বরং এখন ওদের নতুন বন্ধু বইয়ের গন্ধ। সেই কারণেই তো সপ্তাহে ৬ দিনই সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত খোলা থাকে এই লাইব্রেরি।
একটা মেয়ের গল্প:
একদিন একটা চিঠি এসে পৌঁছেছিল সোকাইনা স্কুলে। একটা মেয়ে সেই চিঠিটা লিখেছিল। চিটিটার শেষে কোনও নাম ছিল না। শুধু লেখা ছিল "আই এম দা গার্ল"। কী লেখা চিল সেই চিটিতে জানেন...আমার বয়স তখন মাত্র ১৫। মাথায় ৫১ টা স্টিচ, আর সারা গায়ে ক্ষত নিয়ে প্রথম হাই স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পয়েছিলাম আমি। স্কুলটাকে দেখেই আমরা খুব ভাল লেগে গিয়েছিল। কিন্তু প্রথম দিনই আমাকে একটা প্রশ্ন করা হয়েছিল, যার উত্তর আমার কাছে ছিল না। প্রশ্নটা ছিল তোমার পড়া শেষ বইয়ের নাম কি? সেদিন আমার কাছে কোনও উত্তর ছিল না। তাই সেদিন থেকেই সকাল বিকাল বই পড়তে শুরু করেছিলান। জেনেছিলাম মার্ক্সের সম্পর্কে। পড়তে শুরু করেছিলাম আরও নানা বিষয় নিয়েও। সময় কাটছিল নিজের গতিতে। বয়স বাড়ছিল, বাড়ছিল আমার জ্ঞানও। সেই জ্ঞানকে সঙ্গী করেই একদিন চাকরি পেয়ে গেলাম ইউনিসেফে। আজ আমি একজন সফল মহিলা। আর আমার সফলতার পিছনে বইয়ের অবদানকে ভুলি কি করে বলুন!
এই হল আজকের গাঁজা, যা বাকি বিশ্বের থেকে সম্পর্ণ বিচ্ছিন্ন। এমন অন্ধকারময় জয়গায় যারা প্রাণের সন্ধান দিতে চায়, তাদের প্রয়াসকে ভুলি কি করে বলুন! তাই তো আজকের এই প্রবন্ধ লেখা সেই সব ছাত্রীকে কুর্নিশ জানানোর জন্য়, যাদের প্রচেষ্টায় আজকের গাজা কিছুটা হলেও বাঁচার স্বপ্ন দেখে।
ছবি: ইউনিসেফের সৌজন্য়ে