Just In
অমৃতা প্রীতম : তাঁর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তাঁকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন গুগলের
বিংশ শতাব্দীর এক অন্যতম লেখিকা ছিলেন অমৃতা প্রীতম। ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পাঞ্জাবি মহিলা লেখিকা হিসেবে পরিচিত তিনি । তাঁর লেখার মাধ্যমে নারীবাদিতার স্পষ্টতা ও বাস্তববাদী লেখনী ফুটে উঠেছিল। যার মাধ্যমে তিনি হয়েছিলেন পাঞ্জাবি সাহিত্যে নারীদের মুখপাত্র এবং পাঞ্জাবের শীর্ষস্থানীয় সাহিত্যিকদের মধ্যে একজন। তাঁর লেখাগুলির বেশিরভাগই বাস্তবধর্মী লেখা। সেইসময় লেখিকা হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। আজ ৩১ অগাষ্ট তাঁর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি বিশেষ ডুডল তৈরি করেছে গুগল। তাঁর আত্মজীবনী 'কালা গুলাব'- কে অনুসরণ করেই অমৃতার জীবনী ডুডলে বানিয়েছে গুগুল। এই আত্মজীবনীতে রয়েছে অমৃতার জীবনের এমন অনেক না জানা অধ্যায়। এখানে তাঁর জীবনের পাশাপাশি তাঁর ভালোবাসা, বিয়ে নিয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
১৯১৯ সালের ৩১ অগাষ্ট অমৃতা প্রীতমের জন্ম ব্রিটিশ শাসিত পাঞ্জাবের গুজরানওয়ালায়। তাঁর পিতা ছিলেন ব্রজ ভাষার একজন পণ্ডিত, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিখ ধর্মের একজন প্রচারক। ছোটোবেলাতেই মা-কে হারান তিনি।। মাতার মৃত্যুর পর একাকীত্বের কারণে তিনি লিখতে শুরু করেন। তাঁকে প্রথম উল্লেখযোগ্য পাঞ্জাবি মহিলা কবি, ঔপন্যাসিক ও প্রবন্ধকার হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। বিংশ শতাব্দীর এই লেখিকা ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের উভয়দিকের মানুষের কাছেই প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। ছয় দশকের দীর্ঘ সময় ধরে তিনি কবিতা, কল্পকাহিনী, জীবনী, প্রবন্ধ, লোকসঙ্গীত প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ২০০টি গ্রন্থ রচনা করেন, যা বিভিন্ন ভারতীয় ও বিদেশী ভাষায় অনুবাদ হয়।
দেশভাগের পরে অমৃতা প্রীতম চলে যান পাকিস্তানে। পাঞ্জাবি ভাষার পাশাপাশি তিনি হিন্দি ও উর্দুতেও অনেক কবিতা-উপন্যাস লিখেছেন তিনি। অল-ইন্ডিয়া রেডিওর হয়েও কাজ করেছেন, সম্পাদনা করেছেন 'নাগমণি' সাহিত্য পত্রিকা। ১৯৮৬-তে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন অমৃতা প্রীতম।
১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ অমৃত লেহরেঁ প্রকাশিত হয়। এই বছর তিনি প্রীতম সিং নামক একজন সম্পাদককে বিবাহ করেন ও স্বামীর নামে নিজের নাম পরিবর্তন করে অমৃতা প্রীতম রাখেন। একজন রোম্যান্টিক কবি হিসেবে লেখা শুরু করলেও খুব তাড়াতাড়িই তিনি অঞ্জুমন তরক্কি পসন্দ মুসান্নাফিন-এ-হিন্দ নামক একটি প্রগতিশীল লেখক সংঘে যোগ দেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর লোক পীড় নামক বিখ্যাত গ্রন্থটি রচিত হয়, যেখানে পঞ্চাশের মন্বন্তরের পরে যুদ্ধবিধস্ত অর্থনীতিকে তুলে ধরা হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় দেশভাগের যন্ত্রণা, স্বাধীনতার আনন্দ তাঁর কবিতা "আজ আখাঁ ওয়ারিস শাহ নু"-র মধ্যে দিয়ে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। এই কবিতার অনুপ্রেরণা তিনি পেয়েছিলেন সুফি কবি ওয়ারিশ শাহ-এর 'আই কল আপ অন ওয়ারিশ শাহ টুডে' থেকে। এই কবিতায় তিনি তুলে ধরেছেন পাঞ্জাবের তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি আর তার শিকার নারীদের বিপদাপন্ন সামাজিক অবস্থা।
এই পাঞ্জাবি কবি ও লেখিকা তাঁর বিখ্যাত রচনা 'পিঞ্জরা ' সহ মোট ২৮টি জনপ্রিয় উপন্যাসের সৃষ্টিকর্তা তিনি। ঔপন্যাসিক হিসেবে তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হল পিঞ্জরা নামক একটি বিখ্যাত উপন্যাস। সেখানে তিনি নারীদের বিরুদ্ধে অত্যাচার, মানবতালঙ্ঘন এবং অস্তিত্ববাদের প্রতি সমর্পণের বিরুদ্ধে লেখেন। ২০০৩ সালে এই উপন্যাস থেকে পিঞ্জরা নামক একটি হিন্দি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়।
প্রায় ছয় দশকের সাহিত্য জীবনে অমৃতা প্রীতম ১৯৮১ সালে জ্ঞানপীঠ সাহিত্য পুরস্কারসহ অনেক সম্মান পেয়েছেন। ২০০৫ সালে তিনি পদ্মবিভূষণ সম্মানে সম্মানিত হন। এই সালেই তাঁর লেখা উপন্যাস অনুদিত হয় ফরাসি ভাষায়। অনুবাদ গ্রন্থের নাম 'দ্য স্কেলেটন'। এই উপন্যাসের জন্য তিনি ফরাসি সম্মান 'লা লা রুট দেস ইন্দেস' সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিলেন।
২০০৫ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর ৮৬ বছর বয়সে দিল্লিতে তিনি মারা যান।