Just In
অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ঠাঁই হোক এমনটা না চাইলে পাঁচ মিনিট খরচ করে এই লেখাটা পড়তে ভুলবেন না যেন!
আমাদের জন্ম কুষ্টিতে যখন যখনই গ্রহ-নক্ষত্ররা নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে, তখন তখনই আমাদের শরীর, মন এবং সার্বিক জীবনের উপরও নানা প্রভাব পরে।
শরীর কখন অসুস্থ হয়? কখন আবার, যখন নানা রোগ ঘারে চেপে বসে তখনই হয়...! একেবারে ঠিক বলেছেন। তবে কার শরীর কতটা চাঙ্গা থাকবে, তা নানাবিধ রোগ ছাড়াও আরও দুটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এক তো মানসিক ভাবে কে কতটা সুস্থ। মানে কে কতটা স্ট্রেস ফ্রি লাইফ লিড করছে, তার উপর কিন্তু অনেক কিছু নির্ভর করে। আর দ্বিতীয় যে ফ্যাক্টরটা এক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে ভূমিকা নেয়, তা হল অ্যাস্ট্রোলজি!
মানে! শরীর ভাল থাকবে, না মন্দ তার সঙ্গে অ্যাস্ট্রোলজির কী সম্পর্ক মশাই? আসলে কি জানেন আধুনিকতার দোহাই দিয়ে আমরা অবিশ্বাসের চশমা পরলেও একথা না মেনে উপায় নেই যে আমাদের জন্ম কুষ্টিতে যখন যখনই গ্রহ-নক্ষত্ররা নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে, তখন তখনই আমাদের শরীর, মন এবং সার্বিক জীবনের উপরও নানা প্রভাব পরে। আর সে প্রভাবে যেমন ভাল হতে পারে, তেমনি হতে পারে খারাপও। যেমন ধরুন, জন্ম কুষ্টির অষ্টম এবং ষষ্ঠ ঘরে অবস্থান করা কোনও গ্রহ বা নক্ষত্র দুর্বল হয়ে পরলে একাধিক রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। যেমন ধরুন...
১. সূর্যের খারাপ প্রভাব পরলে:
কারও কুষ্টির অষ্টম এবং ষষ্ঠ ঘরে সূর্যের খারাপ প্রভাব পরলে বারে বারে জ্বর-সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি হার্টের রোগ, খিদে বেড়ে যাওয়া এবং পেট খারাপের মতো রোগে ভোগের সম্ভাবনাও থাকে।
২. চাঁদ দুর্বল হয়ে পরলে:
এমনটা হলে অনিদ্রা, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, মেন্টাল ডিজিজ, কাশি এবং পেটের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে। শুধু তাই নয়, জ্যোতিষ বিশেষজ্ঞদের মতে কারও জন্ম কুষ্টিকে চাঁদের বিরূপ প্রভাব পরলে বুদ্ধির ধার কমে যাওয়া এবং অ্যাস্থেমার মতো রোগ ঘাড়ে চেপে বসার সম্ভাবনাও থাকে। তাই সাবধান বন্ধু, সাবধান...!
৩. বুধ:
আপনার উপর যদি এই গ্রহটির কুপ্রভাব পরে, তাহলে নার্ভের রোগ, হরমোনাল প্রবলেম, বারে বারে চোট-আঘাত লাগা এবং পিঠের সমস্যাতেও ভুগতে পারেন। সেই সঙ্গে লেজুড় হতে পারে চেস্ট এবং লাং-এর নানাবিধ রোগও।
৪. বৃহস্পতি গ্রহ:
বৈদিক অ্যাস্ট্রোলজিতে এই গ্রহটির গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ বৃহস্পতি সদয় হলে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি কর্মক্ষেত্রে সম্মান বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো। আর যদি একবার এই গ্রহটি দুর্বল হয়ে পরে, তাহলেই কেলো! কারণ সেক্ষেত্রে ওজন বেড়ে যাওয়া, লিভার প্রবলেম, পেটের রোগ, এমনকি ক্যান্সারের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ও থাকে।
৫. শুক্রের খারাপ প্রভাব পরলে:
এক্ষেত্রে নানাবিধ ত্বকের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যেমন বাড়ে, তেমনি কিডনি দুর্বল হয়ে পরা, টনসিল এবং নানা চোখের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ও থাকে। তবে শুক্রের খারাপ প্রভাব কেটে যেতে শুরু করলে ধীরে ধীরে শরীরও চাঙ্গা হতে উঠতে শুরু করে।
৬. শনির প্রভাব:
কারও হরস্কোপে যদি শনি গ্রহের খারাপ প্রভাব বাড়তে থাকে, তাহলে অ্যানিমিয়া, ঠান্ডা লাগা, কাশি, শ্বাস কষ্ট, ওজন কমে যাওয়া এবং জয়েন্টের সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কাও থাকে। শুধু তাই নয়, বিশেষজ্ঞদের মতো কারও উপর যদি শনির কুদৃষ্টি পরে, তাহলে নাকি অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
৭. মঙ্গল দোষ দেখা দিলে:
এমনটা হলে বারে বারে চোট লাগা, পেশির সমস্যা এবং রক্ত সম্পর্কিত নানাবিধ রোগ দেখা দিতে পারে। তাই যদি জানতে পারেন আপনার জন্মকুষ্টির অষ্টম এবং ষষ্ঠ ঘরে মঙ্গলের প্রবেশ ঘটেছে, তাহলে সময় থাকতে থাকতে সাবধান হবেন কিন্তু!
৮. রাহু:
অ্যাস্ট্রোলজিতে রাহু-কেতুকেও গ্রহদের দলে রাখা হয়। আর কারও উপর যদি রাহুর প্রভাব বাড়ে, তাহলে চোখে ছানি পরা এবং লাং-এর সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
৯. কেতু:
এক্ষেত্রে তলপেটে যন্ত্রণা, পেটের রোগ, কানের সমস্যা এবং কোনও কারণ ছাড়াই শরীর দুর্বল হয়ে পরার সম্ভাবনাও থাকে। শুধু তাই নয়, কেতুর কুপ্রভাব পরলে এমন সব রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, যাদের কারণ খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় না। ফলে চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হওয়ার কারণে শরীর আরও ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এখন প্রশ্ন হল এ সব গ্রহ দোষ দেখা দিলে তো আর চুপ করে বসে থাকা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে শরীরকে বাঁচাতে কিছু তো করতে হবে! কিন্তু সেটা কি?
১. সূর্য দেবকে বন্ধু বানাতে হলে:
যাদের জন্মকুষ্টিতে সূর্য দেব হঠাৎ করে বক্র দিশা নিয়েছে, তারা নানাবিধ বিপদ থেকে যদি বেঁচে থাকতে চান, তাহলে বেশ কতগুলি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, যার অন্যতম হল প্রতিদিন সাকল সকাল উঠে কয়েক মিনিট সূর্যের আলো গায়ে লাগাতে ভুলবেন না। সেই সঙ্গে যতক্ষণ না সূর্যাস্ত হচ্ছে, ততক্ষণ খাবার খেতে পারেন, কিন্তু একবার সূর্য অস্ত গেলে নো ফুড। সেই সঙ্গে জল খেতে হবে তামার পাত্রে। আর যতদিন না সূর্য দেবের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে, ততদিন যতটা সম্ভব কাঠের আসবাব ব্য়বহার করতে ভুলবেন না। আসলে এই নিয়মগুলি মানলে দেখবেন উপকার মিলতে একেবারেই সময় লাগবে না!
২. চাঁদের কুপ্রভাব কমাতে:
খেয়াল করে দেখা গেছে গ্রহণের পর পরই অনেকের কুষ্টিতেই চাঁদের অবস্থান বেজায় দুর্বল হয়ে পরে। ফলে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা নানা সমস্যা। তাই তো এই সময় বিপদ এড়াতে ঠান্ডা খাবার একেবারে খাবেন না। এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন প্যাকেটজাত খাবারও। পরিবর্তে রোজের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে বেশি করে ফল এবং সবজিকে। কারণ এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে এই ধরনের খাবার বেশি করে খেলে শরীর এবং মনের উপর চাঁদের খারাপ প্রভাব পরার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। প্রসঙ্গত, এই সময় আরও কতগুলি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন ধরুন- ভুলেও জলের অসম্মান করা চলবে না এবং কোনও নদীতে স্নান করতে যাওয়ার সময় প্রথমে নদীর জল অল্প করে হাতে নিয়ে মাথায় ছুঁইয়ে তারপর পায়ে লাগাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে আরও একটি বিষয় সম্পর্কে, তা হল চাঁদ দুর্বল থাকার সময় ভুলেও মায়ের হাতে খাবার খাবেন না যেন! কারণ এমনটা করলে আপনার এবং মায়ের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যাবে বেড়ে।
৩. মঙ্গল গ্রহকে শক্তিশালী করে তুলতে:
এক্ষেত্রে প্রতিদিন হনুমান চাল্লিশা পাঠ করার পাশাপাশি মাটিতে শুতে হবে এবং যতটা সম্ভব খাবারে নুন দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিবর্কে বেশি করে খেতে হবে গুড় এবং সিরিয়াল জাতীয় খাবার। প্রসঙ্গত, এই নিয়মগুলি মানলে মঙ্গলের খারাপ প্রভাব কমে যেতে দেখবেন সময় লাগবে না।
৪. বুধের দোষ কাটাতে:
এমন পরিস্থিতিতে নানাবিধ বিপদ থেকে দূরে থাকতে যে যে বিষয়গুলির দিকে নজর ফেরাতে হবে, সেগুলি হল- প্রতিদিন স্নান করে পছন্দের দেব-দেবীর আরাধনা করতে হবে, খাবারে যতটা সম্ভব সবুজ শাক-সবজির মাত্রা বাড়াতে হবে এবং নিয়ম করে হালকা মিউজিত শুনতে হবে। কারণ এমনটা করলে মন এবং মস্তিষ্ক শান্ত হবে, ফলে বুধের প্রভাবে কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা যাবে কমে।
৫. বৃহস্পতির সুপ্রভাবের সুফল পেতে:
বিশেষজ্ঞদের মতে জন্ম কুষ্টিতে বৃহস্পতি গ্রহ দুর্বল হয়ে পরলে পরিবারের অন্দরে নানাবিধ জটিলতা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার সম্ভাবনা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি অর্থনৈতিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই তো গুরু বৃহস্পতিকে সদা শান্ত রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। আর এই কাজটি করবেন কীভাবে? এক্ষেত্রে আমিষ খাবার একেবারে এড়িয়ে চলতে হবে, উল্টে বেশি করে খেতে হবে সবুজ শাক-সবজি এবং হলুদ। সেই সঙ্গে প্রতি বৃহস্পতিবার গুরু বৃহস্পতির পুজো করার পাশাপাশি ভগবান বিষ্ণুর আরাধনা করতে হবে এবং কপালে পরতে হবে ছোট্ট একটা হলুদ টিপ। তাহলেই দেখবেন উপকার মিলতে সময় লাগবে না।
৬. শুক্র গ্রহকে শক্তিশালী করে তুলতে:
এক্ষেত্রে যতটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন। এসময় ভুলেও কিন্তু অপরিষ্কার জামা-কাপড় পরা চলবে না। কারণ এমনটা করলে বিপদ ঘটার আশঙ্কা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে গ্রহের অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পরে। ফলে নানা বাঁধার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে। প্রসঙ্গত, শুক্র গ্রহকে শক্তিশালী করে তুলতে দই খাওয়া শুরু করুন। সেই সঙ্গে দাড়ি-গোঁফ কেটে ফেলুন, দেখবেন উপকার পাবেই পাবেন!
৭. শনির প্রভাব কমাতে:
প্রতি শনিবার কালো তিল, সরষের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে দেবের সামনে পরিবেশ করুন। সেই সঙ্গে শুরু করুন প্রতিদিন হানুমান চল্লিশা পাঠ করা। তাহলেই দেখবেন শনির প্রভাব কেটে যেতে শুরু করেছে। প্রসঙ্গত, এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে দান করলে শনি দেব খুব প্রসন্ন হন। তাই তো বলি বন্ধু জন্ম কুষ্টিতে যদি শনির প্রভাব কমাতে হয়, তাহলে মন খুলে দান করতে ভুলবেন না যেন!
৮. রাহু-কেতুর প্রভাব কমাতে:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় প্রতিদিন সাকল সকাল উঠে স্নান সেরে তুলসি মায়ের পুজো করার পাশাপাশি নিয়মিত দুটো করে তুলসি পাতা খেলে রাহু এবং কেতুর প্রভাব কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকার। প্রসঙ্গত, এই সময় বাড়ির বাইরে তৈরি খাবার এড়িয়ে চললেও কিন্তু দারুন উপকার পাওয়া যায়। তবে এখানেই শেষ নয়, শাস্ত্র মতে বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে দুর্গা ঠাকুরের পুজো করলেও নাকি গ্রহ দোষ কেটে যেতে সময় লাগে না। আর এমন সুফল পেতে যে যে নিয়মগুলি মেনে চলা জরুরি, সেগুলি হল...
ক. এই বিশেষ মন্ত্রটি পাঠ করা মাস্ট:
"ওম হ্রিম দাম দুর্গায়ে নমহ", এই মন্ত্রটি পাঠ করতে করতে মায়ের অরাধনা করলে যে কোনও ধরনের গ্রহ দোষ কেটে যেতে সময় লাগে না। আর যদি মন্ত্রটি নিয়মিত ৮০০০ বার পাঠ করতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই! প্রসঙ্গত, এমনটাও বিশ্বাস করা হয় যে মা দুর্গার লকেট পরলেও নানা গ্রহের নানা খারাপ প্রভাব পরার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে।
খ. দুর্গা মূর্তি:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে সোনার দুর্গা মূর্তি গঙ্গা নদীতে চুবিয়ে বাড়িতে প্রতিষ্টা করলে বৃহস্পতি এবং বুধ গ্রহের খারাপ প্রভাব কেটে যেতে সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, মায়ের আশীর্বাদে এই দুই গ্রহ এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে অর্থৈতিক উন্নতি ঘটে চোখের পলকে। সেই সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে চটজলদি পদন্নতি লাভের পথও প্রশস্ত হয়।
গ. রূপোর দুর্গা মূর্তি:
শাস্ত্র মতে নিয়মিত রূপোর তৈরি দুর্গা মূর্তির আরাধনা করলে চাঁদের খারাপ প্রভাব পরার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি বুধের কু প্রভাব কেটে যেতেও সময় লাগে না। আর যদি তামা বা মাটির তৈরি দুর্গা মূর্তির আরাধনা করতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই। কারণ সেক্ষেত্রে মঙ্গল দোষ কেটে যায়। প্রসঙ্গত, এমনটাও বিশ্বাস করা হয় যে লোহার তৈরি মায়ের মূর্তির পুজো করলে রাহু এবং কেতুর দোষ কেটে যেতে সময় লাগে না।
ঘ. লাল কাপড় সঙ্গে সিঁদুর:
তন্ত্র বিদ্যা মতে নিয়মিত লাল কাপড় এবং সিঁদুর নিবেদন করে যদি দেবীর পুজো করা যায়, তাহলে নাকি সূর্য দেব এবং মঙ্গল গ্রহের খারাপ প্রভাব পরার আশঙ্কা একেবারে থাকে না বললেই চলে। শুধু তাই নয়, মঙ্গলের প্রভাবে বৈবাহিক জীবনে নানা ধরনের সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কাও কমে।