Just In
প্লেন ক্র্যাশের পর বেঁচে থাকতে টানা ৭১ দিন মানুষের মাংস খেয়েছিলেন এই লোকটি!
১৯৭২ সাল। তুমুল তুষার ঝড়ে ঢেকে গেছে আন্দিজ পর্বতমালা। তারই মাঝ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল ৪০ সিটের ছোট প্লেনটা। গন্তব্য চিলি। বেশ কিছু সময় আগে উরুগুয়ে থেতে যথন প্ল্যানটি আকাশ ছুঁয়েছিল তখনও আবহাওয়া এতটা মন্দের দিকে যায়নি। হঠাৎই...
প্রথম তুমুল কাঁপুনি। তারপর হাওয়ার ধাক্কায় এদিক সেদিকের পাহাড়ে ধাক্কা মারতে মারতে প্লেনটা যখন শান্ত হল তখন ৪০ জনের মধ্যে অনেকই মৃত্যু দেশে চেলে গেছে। আর বাকিরা তখনও নিশ্চিত মৃত্যুর সঙ্গে জীবনের শেষ দান খেলতে ব্যস্ত। এদের মধ্যেই একজন ছিলেন পেদ্রো অ্যালগোর্টা। আজ তাঁর গল্পই শোনাবো আপনাদের।
ক্র্যাশের পরের মুহূর্ত:
চারিদিক শুধু থেতলে যাওয়া লাশের ভির। তারই মাঝে কাটা ধানের মতো পরে কতগুলি মানব শরীর। না না ওরা মরেনি তখনও। বেঁচে আছে। কিন্তু এত ঠান্ডায় কতক্ষণ বাঁচা সম্ভব হবে কেউ জানে না। পেদ্রোরও একই অবস্থা। পাশের যাত্রী ততক্ষণে মৃত। সে কোনও মতো রক্ত ভেজা লাশগুলোকে সরিয়ে প্লেনের ভাঙা দরজা ঠেলে বাইরে বেরিয়েছে। সঙ্গে আরও কয়েকজন। এখন কী হবে? হাঠাৎই একজন আশার মশাল জানালেন। বললেন, "চিন্তা নেই বন্ধুরা। এতক্ষণে ক্র্যাশের খবর নিশ্চিত চিলি পৌঁছাছে। সেখান থেকে রেসকিফ টিম এল বলে!"
এসেছিল রেসকিউ টিম?
বেশ কয়েকদিন কেটে গেল। তবু কারও দেখা নেই। এদিকে তুষার ঝড়ের দাপটে মারা গেছেন আরও কয়েকজন। তখনও বেঁচে গুঁটিকয়েক যুবক। পেদ্র তাখন লড়ছে মৃত্যুর সঙ্গে। কিন্তু এবার...কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে বেরনো যায় সেই নিয়ে চলতে থাকলে যুক্তি-তক্ক। এদিকে ঠান্ডা হাওয়ার তেজ যেন বেড়েই চলেছে। কাটা কাটা হাওয়া যেন করাতের মতো আঘাত করে চলেছে শরীরটাকে। তবু আশা ছাড়েনি কেউ। বাঁচতে হবেই। ঠান্ডাকে কে হার না মানালে যে মৃত্যু নিশ্চিত। কিন্তু এদিকে বাঁচার উপায়ও কারও মাথাতে আসছে না। এদিকে কমছে মজুত খাদ্য আর জল।কী হবে এবার? ঠান্ডা না মারুক ক্ষিদে ঠিক মারবেই মারবে।
এল সেই দিনটা:
শেষ দানাটা দ্রুত মুখে পরে দিল লোকটা। খাবার শেষ। আর কেউ বাঁচতে পারবে না। খাবার ছাড়া এই ঠান্ডায় বাঁচা অসম্ভব, যদি না কোনও মিরাকেল ঘটে। এদিকে পেদ্রো এক ঝলক ঘড়ির দিকে তকালো। ১৩ দিন কেটে গেছে। তবু কারও দেখা নেই। তাদের যেন বাকি বিশ্ব ভুলতে বসেছে। না হলে কেউ আসচে না বাঁচাতে! "আমি পেদ্রো অ্যালগোর্টা। আমি বাড়ি ফিরতে চাই। পরিবারের মুখ দেখতে চাই।" এই কথাগুলোই যেন ছেঁড়া পাতার মতো ঘুরপাক খাচ্ছিল পেদ্রোর মনে। তখনই সবাই সিদ্ধান্ত নিল বাঁচতে গেলে খেতে হবে। আর খাওয়ার যখন নেই তখন মৃত বন্ধুরাই একমাত্র ভরসা। প্রথমটায় বমি করে ফেলেছিল বেশিরভাগই। তারপর ক্ষিদের চোটে পাগলের মতো মানুষের মাংস খাওয়া শুরু করেছিল সবাই। পেদ্রোর ভাগ্যে জুটেছিল এক মৃত বন্ধুর কাটা হাত আর থাই। সেই কামড়ে কামড়ে খাচ্ছিল ও। মানুষের দাঁত কি মানুষের মাংস খেতে পারে? সেদিন পেরেছিল ওরা। বাঁচার তাগিদে সেদিন যেন ওই মানুষগুলি এক একটা হিংস্র দানবে পরিণত হয়েছিল।
Image Source
কেমন ছিল সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা?
ঘটনার প্রায় ২৫ বছর পর পেদ্রো একটি বই লিখেছিলেন, নাম দিয়েছিল "ইনটু দা মাউন্টেন"। তাতে সে সময়কার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছিলেন। লিখেছেন, "আজও যখন সেই দিনটার দিকে ফিরে তাকাই মনে হয়, যদি ওই কাজটা না করতাম সেদিন, তাহলে বোধহয় আজকের দিনটা দেখতে পেতাম না।" কী ভযঙ্কর অভিজ্ঞতা একবার ভাবুন। প্রাণ বাঁচাতে নিজের সহযাত্রীদের মাংস খাচ্ছে একদল সভ্য মানুষ। ভাবা যায়! আসলে সেদিন বাঁচার খাতিরেই মানুষের মাংস খেতে বাধ্য হয়েছিল ওরা। যারা মারা গেছে তারা তো আর নেই। কিন্তু দেখুন সেই মৃত মানুষগুলোর কারণেই আজও অনেকে বেঁছে আছে। পেদ্রো অ্যালগোর্টারও তাদের একজন।
Image Source
"দা বডি অব ক্রাইস্ট":
পেদ্রো নিজের অভজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে একবার বলেছিলেন, সেদিন কেউ এটা ভাবেনি যে তারা মানুষের মাংস খাচ্ছে। সবার মনে হয়েছিল তাদের বন্ধুরা মরে গিয়েও তাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। এর থেকে বেশি সেই মুহূর্তে আর কিছুই মনে আসছিল না তাদের। মাথার উপর কালো মেঘ। অঝোরে হতে থাকা তুষারপাত আর মাইনাস সেন্টিগ্রেডের মাঝে বেঁচে থাকাটাই সে সময় শেষ কথা ছিল। তাই তো মৃতদের শরীরকে স্বয়ং যিশুর শরীর ভেবে তারা গ্রহণ করছিল সেদিন।
Image Source
শেষে এসেছিল ওরা:
ঘটনার প্রায় ৭১ দিন বাদে উদ্ধারকারী দল এসেছিল বেঁচে থাকা ১৬ জনকে নিয়ে যেতে। ততদিনে ঠান্ডার মারে সবাই অর্ধমৃত। তবু প্রাণটা যেন নিভেও নেভেনি। কারণ মৃতরা তাদের বাঁচিয়ে দিয়ে গয়েছিল যে। আজ তারা নেই। কিন্তু তাদের শরীরের অবদানে যারা বেঁচে আছেন তারা কখনও ১৯৭২ সালের সেই দিনগুলির কথা ভোলেনি। ভোলা হয়তো সম্ভবও নয়!
Image Source