Just In
বিশ্বের সবথেকে বড় কুমিরের ফার্মের এই ছবিগুলি দেখলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন!
কলেজ জীবনে থেকেই বাইক চালানোর খুব শখ। তাই সে সময় লেদার জ্যাকেটের প্রতি দুর্বলতাও কম ছিল না। কিন্তু এদিকে পয়সার টানও কম ছিল না। তাই তো পকেট মানিতে এঁটে যাবে এমন লেদার জ্যাকেটের খোঁজে গিয়ে পৌঁছেছিলাম এক লেদার ফ্যাক্টরিতে। সেখানেই কানে এসেছিল কুমিড়ের চামড়ার দিয়ে তৈরি জ্যাকেটের দাম নাকি সবথেকে বেশি। প্রথমটায় বিশ্বাস হয়নি কথাটা। এত বছর পর হঠাৎই সত্যিটা যখন সামনে এল তখন চমকে উঠলাম। তাই তো এই প্রবন্ধটি লেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া।
আমাদের আশেপাশে এমন অনেক আকর্ষণীয় বিষয় থাকে যেদিকে নজর ফেরানোর তেমন একটা সুযোগই হয় না আমাদের। তাই তো আপনাদের কর্মব্যস্ত জীবনে একটু টুইস্ট আনতে একটা কুমিরের ফার্মের কিছু ছবি তুলে ধরলাম, যা দেখতে দেখতে আপনি আবকা হতে বাধ্য। তবে যাদের হার্ট একটু দুর্বল গোছের তারা দয়া করে এই প্রবন্ধের বাকি অংশে নজর ফেরাবেন না। কে বলতে পারে কি হয়ে যায়!
একমাত্র নয়:
সমগ্র থাইল্যান্ডে প্রায় ১০০০ এর উপর কুমিরের ফার্ম রয়েছে যেখানে প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি কুমির পোষা হচ্ছে। এত পরিমাণ কুমির দিয়ে এরা কী করে? এই প্রশ্ন নিশ্চয় মনে জাগছে! কুমিরকে ছোট থেকে বড় করে তোলার পর এক সময় গিয়ে তাদের মেরে ফেলা হয়। তারপর চামড়া এবং মাংস বিক্রি করা হয়। শুনলে অবাক হয়ে যাবেন এই ব্যবসা এতটাই লাভজনক যে এমন ফার্ম সমগ্র এশিয়াতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে।
দা শ্রী আয়ুথিয়া ফার্ম:
বিশ্বের সবথেকে কুমির প্রতিপালন ফার্ম হল এটি। এখানে প্রায় ১৫০,০০০ বেশি কুমিরের বাস। এখানেই শেষ নয়। হয়তো শুনলে অবাক হয়ে যাবেন এই ফার্মের দৌলতে এত সংখ্যক মানুষের রুজি রুটি চলে যে তা গুনে শেষ করার নয়।
প্রযুক্তিই এখানে শেষ কথা:
এই ফার্মে কুমিরের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, এমনকী তাদের ট্রেনিং এর ক্ষেত্রেও প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে "হিউমেন ইন্টারফিয়ারেন্স" যে একেবারে হয় না, এমন নয়। তবে তা নাম মাত্র। প্রসঙ্গত, কুমিরের চামড়াকে কাজে লাগিয়ে নানা কিছু তৈরি হয়ে থাকে। তবে সারা বিশ্বে কুমিরের চামড়া দিয়ে তৈরি ব্য়াগ সবথেকে জনপ্রিয়। আর সেই ব্যাগের দাম কত জানেন? একটা আস্ত বোমের দামের সমান!
সব রকমের অনুমতি রয়েছে তবুই না...
থাইল্যান্ডে এমন যতগুলি ফার্ম রয়েছে তাদের প্রত্যেকেরই কাছে "কনভেনশন অন ইন্টাননেশনাল ট্রেড ইন এনডেনডারড স্পিসিস অব ওয়াইল্ড ইউনা অ্যান্ড ফ্লোরা" (সি আই টি ই এস)-এর অনুমতি পত্র রয়েছে। এই অনুমতি ছাড়া এই ধরনের ব্যবসা করা সম্ভব নয়।
সাধারণ মানুষেরাও আসতে পারেন এখানে:
সারা বিশ্ব থেকে প্রতি বছর প্রচুর সংখ্যক পর্যটক এই সব ফার্মে ঘুরতে আসেন। এখানে পর্যটকদের বিনোদনের জন্য কুমিরদের নিয়ে নানা সব খেলাও দেখান হয়। যেমনটা উপরের ছবিতে দেখানো হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, পর্যটকরা যদি চান তাহলে তারা কুমিরদের খাওয়াতেও পারেন। এক কথায় এক অন্যদের অভিজ্ঞতা হয় এখানে এলে।
সব কিছুই মূল্যবান:
কুমিরদের শরীরের প্রতিটি অংশ আন্তর্জাতিক মার্কেটে প্রচুর দামে বিক্রি হয়। যেমন মাংসের কথাই ধরুন না। প্রতি কেজি কুমিরের মাংসের দাম প্রায় ৩০০ ভাট, ভারতীয় মূদ্রায় যার মূল্য প্রায় ৬০০ টাকা। ভাববেন না শুধু মাংসই বিক্রি হয়। একেবারেই না। কুমিরের বাইল এবং রক্তও ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থারা কিনে নেন মেডিসিন বানানোর জন্য। আর চামড়া তো কুমিড়ের শরীরের সবথেকে মূল্যবান অংশ। এবার বুঝতে পরেছেন তো এই সব ফার্মগুলি কী পরিমাণে অর্থ উপার্জন করে থাকে!
কুমিরদের খানা-পিনা:
ভাল খাবে তবেই না ভাল মাংস পাওয়া যাবে। তাই পুষে রাখা এইসব কুমিরদের খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও খামতি রাখা হয় না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নানা কিছু খাওয়ানো হয় এদের। তবে হিসেব করে দেখা গেছে এক একটা কুমিরের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয় তার কয়েক গুণ তার শরীরের বিভিন্ন অংশ বিক্রি করে কামিয়ে নেওয়ার সুযোগ পায় এরা।
অমানবিক তো বটেই:
যখন কুমিরের বাচ্চা জন্ম নেয় তখন তাদের খুব যত্ন সহকারে প্রতিপালন করা হয়। কেন করা হবে নাই বলুন! বাচ্চা বড় হলে তো এরা লাভবান হবেন, তাই না! কেমন বৈপরিত্ব দেখুন। কুমির যখন তার শিকারকে খায়, তখন তার চোখ দিয়ে জল পরে। দুঃখে নয় যদিও। আর এইসব ফার্মে কুমির ছানার জন্মের সময় সেখানে উপস্থিত চিকিৎসকেরাও ভাবুক হয়ে পরেন। অর্থ উপার্জনের আরেকটি মাধ্যম জন্ম নিল না!
সব শেষে...
সারা বিশ্বেই কুমিরের চামড়া দিয়ে তৈরি জ্য়াকেট, ব্য়াগ এবং অন্য়ান্য় সামগ্রি খুব জনপ্রিয়। ইচ্ছা হলে আপনিও কিমনতে পারেন। আর যদি কোনও সময় থাইল্য়ানন্ডে বেরাতে যান তাহলে এই সব ফার্ম থেকেও কুমিরের চামড়া দিয়ে তৈরি নানা জিনিস কিনতে পারেন। তবে তার জন্য় আপনা পকেটটা কিন্তু বেজায় হালকা করতে হবে!