Just In
Don't Miss
কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো: আজ এবং কাল আমলকির পাতা দিয়ে মায়ের পুজো করা উচিত কেন জানা আছে?
এমন বিশ্বাস রয়েছে যে আমলকি ফল এবং তার পাতা দিয়ে মায়ের আরাধনা করলে দেবীর আশীর্বাদে নানাবিধ সুফল মিলতে সময় লাগে না। বিশেষত...
বহু কাল আগে হিন্দু ধর্মের উপর লেখা একাধিক বই অনুসারে মা লক্ষ্মী এবং বিষ্ণু দেবের সঙ্গে আমলকি গাছের সম্পর্কটা বেজায় নিবিড়। কারণ শাস্ত্র মতে ভগবান বিষ্ণুর মুখ থেকে নাকি জন্ম হয়েছিল আমলকি গাছের। তাই তো এই ফলটির অন্দরে মা লক্ষ্মী এবং বিষ্ণু দেব সদা অবস্থান করেন। প্রসঙ্গত, আরও কিছু প্রচীন পুঁথি অনুসারে সমুদ্র মন্থনের সময় সমুদ্রগর্ভ থেকে উঠে আসা অমৃতের এক বিন্দু থেকেই জন্ম নিয়েছিল আমলকি গাছ। এই কারণেই তো এমন বিশ্বাস রয়েছে যে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর সময় আমলকি ফল এবং পাতা দিয়ে দেবীর আরধনা করলে মা তো প্রসন্ন হনই, সেই সঙ্গে ভগবান বিষ্ণুও বেজায় খুশি হন। ফলে নানাবিধ উপকার মেলার পথ প্রশস্ত হতে সময় লাগে না।
লক্ষ্মী পুজোর সঙ্গে আমলকি গাছের যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে তার আরও একটা প্রমাণ পাওয়া যায় আদি গুরু শঙ্কারাচার্যের একটি লেখনি থেকেও। আট বছর বয়সে ঘর ছেরেছিলেন শঙ্কারাচার্য। ভারতের এদিক-সেদিক ঘোরার সময় মূলত ভিক্ষা করেই তিনি ক্ষুধা মেটাতেন। একদিন বাকি সব দিনের মতো ভিক্ষা করতে করতে একটি গরীবেব বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়ান শঙ্কারাচার্য। সাধু বাবাকে দোর গোড়ায় দেখে বাড়ির মালকিন কিছু দিতে চাইলেন। কিন্তু বাড়িতে যে কিছুই নেই। তাহলে...! এদিক-সেদিক বেজায় খোঁজাখুঁজি করে খাওয়ার সামগ্রি বলতে মাত্র একটা আমলকি খুঁজে পেলেন। তাই দান করলে আদি গুরুকে। বাড়ির মালকিনের এমন বড় মনের পরিচয় পেয়ে সাধু বাবা এতটাই প্রসন্ন হয়েছিলেন যে সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই পাঠ করলেন মা লক্ষ্মীর "কণকধারা" স্তোত্র। শ্রী শঙ্করাচার্যের পুজোয় দেবী এতটাই প্রসন্ন হলেন যে বর দিলেন যে বাড়িতে আমলকি গাছ থাকবে, সেখানে স্বয়ং বিরাজ করবেন মা লক্ষ্মী এবং সে বাড়িতে কখনও অর্থের অভাব হবে না। সেই থেকেই এমন বিশ্বাস রয়েছে যে আমলকি ফল এবং তার পাতা দিয়ে মায়ের আরাধনা করলে দেবীর আশীর্বাদে নানাবিধ সুফল মিলতে সময় লাগে না। বিশেষত...
১. খারাপ শক্তির প্রকোপ কমে যায়:
আমাদের আশেপাশে কোনওভাবে যদি খারাপ শক্তির মাত্রা বাড়তে শুরু করে, তাহলে কিন্তু বেজায় বিপদ! কারণ সেক্ষেত্রে নানাবিধ খারাপ ঘটনা ঘটার আশঙ্কা যেমন বাড়ে, তেমনি হঠাৎ করে কোনও দুর্ঘটনার কবলে পরার সম্ভাবনাও থাকে। তাই তো বলি বন্ধু নিজেকে এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের নানাবিধ বিপদ থেকে বাঁচাতে আগামী কাল মা লক্ষ্মীর পুজোর আয়োজন করতে ভুলবেন না যেন! আর মায়ের পুজোর সময় অবশ্যই নিবেদন করতে হবে আমলকি পাতা। কারণ এমনটা করলে করলে মা এতটাই খুশি হন যে তাঁর আশীর্বাদে বাড়ির প্রতিটি অংশে পজেটিভ শক্তির মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে খারাপ শক্তি ঘর ছাড়া হতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে কুদৃষ্টির প্রভাবও কমে।
২. ভগবান বিষ্ণু বেজায় প্রসন্ন হবেন:
যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে আমলকি ফলের জন্ম হয়েছে ভগবান বিষ্ণুর মুখ থেকে। তাই তো দেবীর আরাধনা করার সময় এই ফলটি নিবেদন করলে মা লক্ষ্মী তো প্রসন্ন হনই, সেই সঙ্গে দেবও বেজায় খুশি হন। ফলে ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদে যে কোনও সমস্যা মিটে যেতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি কোনও ধরনের বিপদ ঘটার আশঙ্কাও কমে। ফলে বাকি জীবনটা সুখ-শান্তিতে এবং নিরাপদে কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
৩. যে কোনও পাপের হাত থেকে রক্ষা মেলে:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন আমলকি নিবেদন করে দেবীর আরাধনা করলে মা এতটাই প্রসন্ন হন যে তাঁর আশীর্বাদে ভক্তরা তাঁদের করা পাপ কর্মের শাস্তি পাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পান। ফলে এজীবনে নরক দর্শের আশঙ্কা আর থাকে না।
৪.বড় লোক হয়ে ওঠার স্বপ্ন পূরণ হয়:
মা লক্ষ্মী হলেন অর্থ এবং সমৃদ্ধির দেবী। তাই তো মাকে একবার প্রসন্ন করতে পারলে বড়লোক হয়ে ওঠার স্বপ্ন পূরণ হতে সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, এমনটাও বিশ্বাস করা হয় যে এই বিশেষ ফলটি নিবেদন করে মায়ের পুজো করলে টাকা-পয়সা সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যা মিটে যেতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে সঞ্চয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। ফলে অর্থ কষ্ট মিটে যায় চোখের পলকে।
৫. ব্যবসায় চরম উন্নতি ঘটে:
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার দিন, মানে আজ বা কাল যে কোনও লক্ষ্মী মন্ত্র পাঠ করতে করতে দেবীর আরধনা করার সময় যদি আমলকি ফল নিবেদন করতে পারেন, তাহলে তো কাথাই নেই! কারণ এমনটা করলে গৃহস্থে মায়ের প্রবেশ ঘটতে সময় লাগে না। ফলে মায়ের আশীর্বাদে ব্যবসায় একের পর এক সফলতা লাভের সম্ভাবনা যায় বেড়ে। সেই সঙ্গে ব্যবসা সংক্রান্ত নানাবিধ সমস্যা মিটে যেতেও সময় লাগে না।
৬.মনের যে কোনও ইচ্ছা পূরণ হবে:
গৃহস্থে যখন পজেটিভ শক্তির মাত্রা বাড়তে শুরু করলে গুড লাক রোজের সঙ্গী হয়ে ওঠে। আর এমনটা যখন হয়, তখন মনের ছোট থেকে ছোটতর ইচ্ছা পূরণ হতে যে সময় লাগে না, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে। এবার বুঝেছেন তো লক্ষ্মী পুজোর সময় আমলকি নিবেদন করার প্রয়োজন কতটা।
৭. কর্মক্ষেত্রে পদন্নতি লাভের পথ প্রশস্ত হয়:
একেবারেই ঠিক শুনেছেন বন্ধু! একবার যদি মা লক্ষ্মীর মন জয় করতে পারেন, তাহলে কর্মক্ষেত্রে চটজলদি উন্নতি লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়, সেই সঙ্গে প্রতিপক্ষদের নিকেশ ঘটতেও সময় লাগে না। তাই তো বলি বন্ধু, আজ নয়তো আগামী কাল দেবীর পুজো করার সময় আমলকি নিবেদন করতে ভুলবেন না যেন! আসলে যেমনটা আগেই আলোচনা করা হয়েছে যে এই ফলটির অন্দরে মা লক্ষ্মী অবস্থান করেন। তাই তো আমলকি সহযোগে দেবীর অরাধনা করলে মা এতটাই প্রসন্ন হন যে ভক্তের মনের সব ইচ্ছা পূরণ হতে সময় লাগে না।
৮. রোগ-ব্যাধি দূরে পালায়:
রোগমুক্ত শরীর পেতে কে না চায় বলুন! একই স্বপ্ন যদি আপনিও দেখে থাকেন, তাহলে আমলকি ফল এবং পাতা সহযোগে দেবীর আরাধনা করতে ভুলবেন না যেন! আসলে এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে এই নিয়ম মেনে দেবীর আরাধনা করলে গৃহস্থের প্রতিটি কোণায় পজেটিভ শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে শরীরের ক্ষমতা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে ছোট-বড় সব রোগই দূরে পালায়।
এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গেছেন বন্ধু, আমলকি এবং তার পাতা নিবেদন করে মা লক্ষ্মীর আরাধনা করার প্রয়োজন কতটা...!