Just In
অ্যালজেইমার প্রতিরোধক ভ্যাকসিন আবিষ্কার! জেনে নিন এর সম্পর্কে
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রোগগুলির মধ্যে একটি হল 'অ্যালজেইমার'। কারণ, এই রোগ কোনও মানুষের ব্যক্তিত্ব এবং স্মৃতিশক্তির বিনাস ঘটায়। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫.৮ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। এই রোগ মানুষের প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটাতে পারে, অনেক পরিবারকে ধ্বংসও করে দেয়।
যদিও, এই রোগ নিরাময়ের জন্য বহু চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু, সবগুলিই প্রায় ব্যর্থ হয়েছে। তবে, গবেষকরা এটি প্রতিরোধ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অ্যালজেইমার রোগটি মস্তিষ্কের কোষকলায় একধরনের ক্লেদ জমা হওয়ার ফলে এবং 'টাউ' নামক অপর একধরনের ক্ষয়প্রাপ্তি থেকে স্নায়ুকোষগুলোতে জট পাকানো অবস্থার সৃষ্টি হওয়ার ফলে এটি ঘটে। এর ফলে, মস্তিষ্কের কোষগুলি নষ্ট হয়ে যেতে থাকে।
যাইহোক, ডঃ চ্যাঙ ইয়ি ওয়াং, তাঁর কন্যা মেই মেই হু ও তাঁর জামাতা লুইস রেজি প্রতিষ্ঠিত একটি বায়োটেক সংস্থা, ইউনাইটেড নিউরো সায়েন্স ঘোষণা করেছে যে, IIA ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে UB -311 নামক অ্যালজেইমার প্রতিরোধক ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে। যা, শরীরে থাকা অ্যালজেইমারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হবে। মনে করা হচ্ছে, অ্যালজেইমারের প্রতিরোধক হিসেবে এটাই সর্বপ্রথম আবিষ্কার। তাঁরাই প্রথম এই রোগ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছেন।
এই সংস্থাটি বর্তমানে এই ভ্যাকসিনটির পরবর্তী ক্লিনিকাল পরীক্ষার জন্য কাজ করছে। ইতিমধ্যে, ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ হয়েছে। এই সংস্থার চূড়ান্ত লক্ষ্য হল, একটি ভ্যাকসিন তৈরি করা যা লোকজনকে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে।
অ্যালজেইমার কী ?
অ্যালজেইমার হল সাধারণত স্মৃতিভ্রংশের একটি সাধারণ রূপ। মস্তিষ্কের স্নায়বিক বৈকল্যজনিত রোগ। যাকে স্মৃতিভ্রম অসুখ-ও বলা হয়। এটি সাধারণত বয়স্ক মানুষদের বেশি হয়। তাই, একে বয়সজনিত অসুখও বলা যেতে পারে। সঠিক সময়ে এই রোগের চিকিৎসা না করালে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বয়স বাড়ার পরে হলেও কমবয়স থেকেই এর সূত্রপাত হতে পারে। এ রোগে যারা ভোগেন অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেদেরও ভুলতে বসেন। ধীরে ধীরে মস্তিষ্ক নিজের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ও আক্রান্ত ব্যক্তি পাগলও হতে পারে।
বংশগত কারণেও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অর্থাৎ আগে পরিবারের কেউ যদি আক্রান্ত হয় তাহলে সেই পরিবারের অন্য সদস্যদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। বর্তমানে বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ এই রোগে ভুগছেন। ২১ সেপ্টেম্বর 'বিশ্ব অ্যালজেইমার দিবস' পালন করা হয়। এ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্ব জুড়ে গোটা মাস ধরেই নানান প্রচার চলে।
এই রোগের লক্ষণ :
বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায় এই রোগে। এর ফলে, জীবনযাত্রার পরিবর্তনও ঘটতে পারে। এই রোগের কিছু লক্ষণ সম্পর্কে বলা হল :
১) কোনও কিছু মনে করতে না পারা, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভুলে যাওয়া এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। বহু ঘটনার কথা এমনকী সাল, তারিখও মনে করতে না পারা।
২) নানান কাজ করতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলা, নিজের মনেই দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়া এর অন্যতম প্রধান লক্ষণ।
৩) সবার থেকে নিজেকে আলাদা করে নেওয়া, সবসময় শুয়ে থাকা, আগে অন্য যেসব ব্যাপারে আগ্রহ ছিল সেসব ব্যাপারে অনাগ্রহী হয়ে ওঠা।
৪) পছন্দের খাবারও কারও কারও কাছে অপছন্দনীয় হয়ে উঠতে পারে।
৫) চেনা মানুষ অচেনা হয়ে ওঠে, এমনকি নিজের একান্ত আপনজনকেও না চিনতে পারা। এর ফলে, দূরত্ব বাড়তে থাকে।
৬) অ্যালজেইমারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সময় ভুলে যান এবং ভুলে যান তারা কোথায় রয়েছেন।
৭) কথা বলার সময়ে ভুলে যান কি নিয়ে তিনি কথা বলছেন। ফলে বেশিরভাগ সময়ই একই কথা বারবার বলতে থাকেন।
কিছু খাবার আছে যা এই রোগ হওয়া থেকে কিছুটা আটকাতে পারে, যেমন- চকোলেট, আপেল, বাধাকপি, বাদাম, চেরি ইত্যাদি।