Just In
রোগ বাঁধলেই ড. গুগল-এর কাছে? একদম ভুল সিদ্ধান্ত
এটা বোঝার সময় এসেছে ডাঃ গুগল কিন্তু সবের ডাক্তার নয়। তবে ঠিক কী কী দেখবেন ও দেখবেন গুগল থেকে?
নিজের রোগের উৎস খুঁজতে নিজের থেকে বেশি আর কারই বা আগ্ৰহ থাকতে পারে। তা বলে কি নেটদুনিয়ার বাড়তি সুবিধা আমাদের ঘরে ডঃ গুগল'কে এনে দিয়েছে? অনেকেই এমন আছেন যাঁরা শরীরের কিছুমাত্র অসুখ বা বেগতিক ভাব দেখতে পেলেই সে লক্ষণগুলো খুঁজতে থাকেন গুগলের ঘরে। কী হয়েছে জানার জন্য ফি দিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ চাওয়ার বদলে গুগলই যেন এখন ভরসা। কিছুক্ষেত্রে অনেকে প্রয়োজনীয় ওষুধটিও খুঁজে নেন গুগল থেকেই। এমনই একটি ঘটনা বলছেন একজন বিখ্যাত অঙ্কোলজিষ্ট। কিছুমাস আগে অনীশ দত্ত নামক এক রোগী আসেন তাঁর চেম্বারে, যিনি সন্দেহ করছেন তিনি থ্রোট ক্যান্সারে আক্রান্ত। ইদানিং তাঁর গলা প্রচন্ড খুসখুস করে। কাশি হয় ও একইসঙ্গে রক্তও বেরোয়, ধূমপানের অভ্যাস এককালে ছিল।
ডাক্তার জানতে চান কেন এমন মনে হচ্ছে, এতে তাঁর উত্তর, তিনি ইতিমধ্যেই গুগলের দরবারে গেছিলেন ও সেখান থেকেই তাঁর এমন ধারণা। কিন্তু অঙ্কোলজিষ্টের দেওয়া কিছু টেষ্টের পর দেখা যায়, এটি আদৌ ক্যান্সার নয়, বরং সাধারণ থ্রোট ইনফেকশন যা অনেকেরই হয়ে থাকে। এ থেকেই ধারণা করা যায়, ডাক্তারের থেকে গুগলের ইনফরমেশনের ঝুলি সাধারণের কাছে অনেক বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠছে। কিন্তু এতে বিপদ হতে পারে অনীশবাবুর মতোই। সাইকোলজিতে সাইবারকনড্রিয়া নামে একটি রোগের উল্লেখ করা হচ্ছে যার অর্থ হল নিজের রোগ সম্পর্কে অত্যাধিক খোঁজ করতে করতে অজানা আশঙ্কায় ডিপ্রেশনে ডুবে যাওয়া। তাই এটা বোঝার সময় এসেছে ডাঃ গুগল কিন্তু সবের ডাক্তার নয়। তবে ঠিক কী কী দেখবেন ও দেখবেন গুগল থেকে? নীচে রইল তর বিস্তৃত বিবরণ।
১। শুধু উপসর্গ দেখুন:
আপনি যখন কোনও কারণে অসুস্থবোধ করছেন তখন গুগল সার্চ করেই যদি নিজের রোগের খোঁজ লাগাতে চান, তবে শুধু উপসর্গগুলোই দেখুন। গুগলে উপসর্গ দেখে সেগুলোই শিরোধার্য করবেন না। হতেই পারে গুগলে যা যা দেখাচ্ছে তার কোন রোগই আপনার শরীরে , বরং যা আছে তা হয়তো দেখাচ্ছেই না গুগলে। মনে রাখবেন গুগলেরও সীমাবদ্ধতা আছে। জ্ঞানের কোনও শেষ নেই। গুগল কিন্তু এখনও সব জ্ঞান অর্জন করে উঠতে পারেনি।
২। ডাক্তার দেখান অবশ্যই:
গুগল তো আছেই আপনার উপসর্গের একরকম উত্তর দিতে, কিন্তু ডাক্তারকেই শেষ ভরসা করুন। আমাদের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে ধারণা খুবই কম, ফলে যে রোগের সঙ্গে বেশিরভাগ উপসর্গ মিলে যায়, তাকেই নিজের রোগ বলে ধরে নিই। আদৌ তো তা না হতেই পারে। একজন কোয়ালিফায়েড ডাক্তারই বলতে পারেন ঠিক কোন রোগে আপনি আক্রান্ত। তাই ডাক্তারের কাছে যান সবার আগে, পারলে গুগলের আগে।
ডাক্তারের সামনে নিজের আশঙ্কা নয়:
আপনি গুগল দেখে মনে মনে যা হয়েছে বলে ভাবছেন, ডাক্তারের সামনে বসে তা নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো। বরং ডাক্তারকে জানান নিজের সমস্যার কথা, উপসর্গগুলোর কথা। গুগল থেকে হওয়া আপনার অভিজ্ঞতার কথা জানালে একদিকে যেমন তিনি বিব্রতবোধ করতে পারবেন, তেমনই আপনার রোগ নিরীক্ষণে তাঁর মনোযোগ নষ্ট হতে পারে। ডাক্তার আনফোকাসড হয়ে পড়লে আপনার বিপদ বাড়তে পারে।
গুগল শেষ কথা নয়:
গুগল অনেককিছু বলতে পারে, কিন্তু শেষ কথা বলার ক্ষমতা এখনও তাঁর নেই। ফলে গুগলের কথাকে শিরোধার্য করে নিজের চিকিৎসা নিজে না করাই ভালো। এতে নিজের বিপদ বাড়তে পারে।
এখনও অবধি মেডিকেল সায়েন্সের সব উন্নতির কথা গুগল কিন্তু জানে না। গুগলে যে যা আপলোড করেন তাই আপনার প্রশ্ন অনুযায়ী গুগল আপনার সামনে হাজির করে। হাজারও তথ্যের সম্ভার বলেই গুগলের পক্ষে আপনার ঠিক কোন রোগটা হয়েছে তা শনাক্ত করা দুস্কর। তাই এখনও বিশ্বাস রাখুন ডাক্তারেই। তিনি কিন্তু আপনাকে সঠিক পথই দেখাবেন।