Just In
Don't Miss
আরশোলার দুধ! খেলেই পাবেন তিনগুণ পুষ্টি
গরু-মোষ, ছাগল, ভেড়ার দুধ খেয়েছেন নিশ্চয়ই। কিন্তু, কখনও কি শুনেছেন আরশোলার দুধের কথা? অবাক লাগলেও এটাই সত্যি, আরশোলাও দুধ দেয়। আর তাদের বাচ্চাদের দুধ খাইয়ে বড়োও করে তোলে। ইতিমধ্যেই, দুধের বাজারে কিন্তু আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এটি। ভয় হচ্ছে? ভুল করে এই দুধ খেয়ে ফেলেছেন কি না। চিন্তা করার কোনও কারণ নেই ভারতীয় দুধের বাজারে আরশোলার দুধ জায়গা করতে নাও পারে। আর হ্যাঁ, এই দুধ যদি একবার পান করেন তবে আপনিও পেতে পারেন গরুর দুধের চেয়েও চার গুণ পুষ্টি। অবাক লাগলেও এক্সসিএলআই (EXCLI) জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষা অনুযায়ী, এই সুপারফুডের পুষ্টিকর উপকারগুলি সত্য। তবে চলুন এর নেপথ্যের ঘটনাটি আসলে কী, তা জেনে নেওয়া যাক।
নাম শুনলেই গা ঘিন ঘিন করে। সুন্দরী মহিলাদের সাথে আবার এদের অহি-নকুল সম্পর্ক। তাতেও দেখুন, আরশোলার এত গুরুত্ব। তবে, ফিরে যাওয়া যাক কিছু বছর আগের ঘটনায়। 'জার্নাল অফ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ ক্রিস্টালোগ্রাফি’-তে প্রকাশিত হয় যে, স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতো আরশোলাও দুধ দেয়। এই আবিষ্কার রীতিমতো চমকে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই বিশেষ প্রজাতির আরশোলা বাচ্চা জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে ডিম পাড়ে না। স্তন্যপায়ীদের মতই তারা সরাসরি জন্ম দেয় বাচ্চাকে। আবার বাচ্চাদের স্তন্যপানও করায়। সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর দুধের চেয়ে চারগুণ বেশি পুষ্টি পাওয়া যায় এই আরশোলার দুধে। তবে, এই ধরনের আরশোলা পাওয়া যায় একমাত্র হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে।
বিজ্ঞানিরা আরও জানিয়েছিলেন, মানব শরীরে অবস্থিত ইউট্রাসের মতই আরশোলার শরীরে থাকে 'ব্রুড স্যাক’, যেখানে ডিমগুলি জমা হয়। জমা হওয়ার ২০ থেকে ২৫ দিন পর ভ্রুণগুলির মধ্যে দুধের ক্ষরণ হতে থাকে। আর জমা হওয়া ডিমগুলি তখনই সেই দুধ খেতে শুরু করে। এই প্রজাতীয় আরশোলাকে 'ডিপলোপ্টোরা পাঙ্কটেটা’ বলা হয়। তবে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সঙ্গে এদের তফাৎ একটাই, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শরীরে দুধের জন্ম হয় সন্তান ভূমিষ্ঠের পর। আর এদের শরীরে দুধের জম্ম হয় 'ব্রুড স্যাক’-এ ডিমগুলf জমা হওয়ার পর, অর্থাৎ ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে।
পরবর্তী সময়ে গবেষকরা জানিয়েছেন, দুধের সঙ্গে ডিপলোপ্টোরা পাঙ্কটেটা বা পেসিফিক বিটল প্রজাতির আরশোলা মিশিয়ে খেলে মানুষের শরীরে দারুণ উপকার হতে পারে। এদের শরীরে থাকা প্রোটিন ক্রিস্টাল দুধের সঙ্গে মিশলে হয়ে উঠবে এক পুষ্টিসমৃদ্ধ সুপারফুড। আবার এই প্রকার আরশোলার দুধে রয়েছে নয়টি প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড। আরশোলা-দুধকে ভবিষ্যতের সবচেয়ে উপযোগি সুপারফুড হিসেবে গণ্য করছেন বিজ্ঞানীরা।
আরশোলার দুধ কী?
আরশোলার দুধ হল একটি প্রোটিন ক্রিস্টাল ধরনের দুধ যা, ডিপলোপ্টোরা পাঙ্কটেটা নামক একটি আরশোলার প্রজাতি থেকে উৎপাদিত হয়। যাতে থাকে প্রচুর পরিমাণ অ্যামাইনো অ্যাসিড, প্রোটিন, ফ্যাট ও সুগার৷ এই কারণে গবেষকদের দাবি, অন্যান্য দুধের থেকে এই দুধের উপকারিতা বা খাদ্যগুণ অনেকাংশে বেশি।
পুষ্টিগত মান
এই প্রজাতীয় আরশোলার 'ব্রুড স্যাক’ থেকে সংগ্রহ করা দুধের পুষ্টিতে থাকে ৪৫ শতাংশ প্রোটিন, ২৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, ৫৫ শতাংশ অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং ১৬-২২ শতাংশ লিপিড। তাছাড়াও, এটিতে ওলিক অ্যাসিড, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড, গ্লিসারল এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে।
এটি কীভাবে সংগ্রহ করা হয়?
প্রথমে ব্রুড স্যাকে ডিমগুলি জমা হয়। এরপর, ডিমগুলি ভ্রূণে পরিণত হওয়ার সাথে সাথে ব্রুড স্যাকটি আস্তে আস্তে তাদের পুষ্টিকর খাবার প্রদানের জন্য এক প্রকার তরল জাতীয় পদার্থ উৎপাদন শুরু করে, যাকে দুধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর জমা হওয়া ভ্রুণ থলি থেকে দুধ খেতে শুরু করে, যা তাদের পেটে দুধের ঘনত্ব বাড়িয়ে তোলে। ভ্রূণের শরীরে অতিরিক্ত দুধগুলি তাদের অন্ত্রে স্ফটিকের মতো এক প্রকার তরল পদার্থ গঠন করে।
গর্ভবতী আরশোলার ব্রুড স্যাক থেকে ভ্রূণগুলিকে আলতোভাবে ছাড়িয়ে দিয়ে এই দুধ আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে, এই আরশোলার দুধ উৎপাদনের ধারণাটি অসম্ভব ব্যাপার। কারণ, এক হাজার আরশোলা থেকে মাত্র ১০০ গ্রাম দুধ পাওয়া সম্ভব।
অদূর ভবিষ্যতে আরশোলার দুধ কীভাবে উপকারি হবে?
সমীক্ষা অনুসারে, আরশোলার স্ফটিক দুধের প্রোটিনগুলি পরবর্তী প্রজন্মের সুপারফুড হতে পারে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এই দুধ ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং ইস্কেমিক হৃদরোগের মতো নির্দিষ্ট কিছু রোগের ঝুঁকি রোধেও খুব পরিচিত। এছাড়াও, যাদের দুধের প্রতি অ্যালার্জি রয়েছে তাদের জন্য এটি একটি ভাল বিকল্প হতে পারে। তবে, উপরে বর্ণিত বিষয়গুলির জন্য ব্যাপক অধ্যয়নের প্রয়োজন রয়েছে।
অন্যদিকে, এই প্রকার দুধের খারাপ দিকও রয়েছে। যেমন, গরুর দুধের চেয়ে এর ক্যালোরির মাত্রা তিনগুণ বেশি। ফলে, অত্যধিক পরিমাণ স্থূলত্ব বা ওজন সম্পর্কিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের এর ব্যবহার এড়ানো উচিত কারণ এক্ষেত্রে এর কার্যকারিতার কোনও প্রমাণ নেই।
চূড়ান্ত দ্রষ্টব্য
আরশোলার দুধ বাণিজ্যিকভাবে উপলব্ধ পানীয় নয়। যদিও বিজ্ঞানীদের মতে প্রমাণিত এটি উচ্চ পুষ্টি যুক্ত খাদ্য। হতে পারে, অদূর ভবিষ্যতে এটি সবার জন্য উপলব্ধ হবে তবে, তা গবেষণার উপর নির্ভর করছে।