Just In
খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা বে়ড়ে যায়? কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন? দেখে নিন টিপস
আমরা সকলেই জানি যে, রক্তের অনিয়ন্ত্রিত শর্করার মাত্রা, ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে জটিলতা আরও বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে হৃদরোগের সমস্যা, ত্বকের সমস্যা, স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং পায়ের সমস্যার মতো বিভিন্ন ঝুঁকি বৃদ্ধি হতে পারে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়াকে আফটার মিল হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলা হয়। এটি বেশ কয়েকটি কারণের জন্য হয়, যেমন - খাবারের পরিমাণ, খাবারের সময়, ওষুধের সময় এবং আপনি যে খাবারগুলি খাচ্ছেন তার উপর ভিত্তি করে। তাহলে আসুন দেখে নেওয়া যাক, খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার কিছু সহজ টিপস।
১) আগে থেকেই খাওয়ার পরিকল্পনা করে রাখুন
মিষ্টি, সাদা পাউরুটি এবং অন্যান্য খাবারের পরিমাণ সীমিত করুন। খাওয়ার পর এগুলি রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। তাই, কী খাবার খাবেন তা আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখলে, এটি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করতে পারে।
২) অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন
বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারি খাবার খাওয়ার পরিবর্তে অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এটি আপনাকে হঠাৎ সুগার লেভেল ওঠানামা রোধ করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে যে, দিনে ৩টি বড় খাবার খাওয়ার পরিবর্তে, বারে বারে অল্প পরিমাণে খাবার খেলে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৩) চিনির সেবন যথাসম্ভব কম করুন
সুক্রোজ এবং হাই-ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ শরীরের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ক্ষতিকর। এগুলি খালি ক্যালোরি ছাড়া আর কিছুই নয়। শরীর এই সাধারণ শর্করাগুলিকে খুব সহজেই ভেঙে ফেলে, যার ফলে রক্তে শর্করা বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, শর্করা গ্রহণ ইনসুলিন নিঃসরণে বাধা দেয়। শরীর রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়।
৪) ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান
ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্যদ্রব্য, রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে দুর্দান্ত কার্যকর। বিশেষ করে দ্রবণীয় ফাইবার রক্তে শর্করার স্পাইক নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি জলে দ্রবীভূত হয়ে জেলের মতো পদার্থ তৈরি করে, যা অন্ত্রে কার্বোহাইড্রেট শোষণকে ধীর করতে সহায়তা করে। তাছাড়া ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পেট ভরা রাখতেও সহায়তা করে। যার ফলে বারে বারে খিদের অনুভূতি কমে। দ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্যগুলি হল - ওটমিল, বাদাম, বিভিন্ন শাকসবজি, আপেল, কমলালেবু, ব্লুবেরি, প্রভৃতি।
৫) বেশি করে জল পান করুন
পর্যাপ্ত জল পান না করলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। শরীর ডিহাইড্রেট হলে, শরীরে vasopressin নামক একটি হরমোন উৎপাদন হয়। এটি কিডনির তরল ধরে রাখতে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত চিনি বের করে দিতে বাধা দেয়। তাছাড়া, লিভারও রক্তে অতিরিক্ত শর্করা সরবরাহ করে। যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করতে ভুলবেন না যেন।
লো কার্ব গ্রহণ করুন
কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির মূল কারণ। আমরা যখন কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করি, তখন সেগুলি সাধারণ শর্করায় বিভক্ত হয়ে যায়। সেই শর্করাগুলি তখন রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে। রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে, অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন নামক একটি হরমোন নিঃসরণ করে, যা কোষকে রক্ত থেকে চিনি শোষণ করতে উত্তেজিত করে। তাছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, লো-কার্ব ডায়েট ওজন কমাতে সহায়তা করার পাশাপাশি, রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি রোধ করতেও সহায়তা করে।
কম রিফাইন্ড কার্বস গ্রহণ করুন
রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেটে উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচক রয়েছে বলে বলা হয়, কারণ এগুলি খুব সহজেই দ্রুত হজম হয়। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে। রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেটের কিছু সাধারণ উৎস হল - টেবিল সুগার, সাদা পাউরুটি, সাদা চালের ভাত, সোডা, ক্যান্ডি, ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল এবং মিষ্টি। রিফাইন্ড কার্বস-এর প্রায় পুষ্টিগুণ নেই বললেই চলে এবং এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও ওজন বাড়ার ঝুঁকি বাড়ায়।