For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts

সিজোফ্রেনিয়া : কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা

|

সিজোফ্রেনিয়া হল একপ্রকার জটিল এবং দীর্ঘস্থায়ী মানসিক ব্যাধি। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর চিন্তাধারা এবং অনুভূতির প্রকাশের মধ্যে সঙ্গতি থাকে না ৷ রোগী বাস্তবতার বোধ বা উপলব্ধি হারিয়ে ফেলে, প্রায়ই হ্যালুসিনেশনে ভোগে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সামাজিক বা কর্মক্ষেত্রে অক্ষমতাজনিত অসুবিধার সম্মুখীন হন ৷

Schizophrenia Causes

সিজোফ্রেনিয়ার প্রকারভেদ :

সিজোফ্রেনিয়া বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে, যথা - প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়া, হেবিফ্রেনিক সিজোফ্রেনিয়া, ক্যাটাটনিক সিজোফ্রেনিয়া, সিম্পল সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি।

১) প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়া : এক্ষেত্রে, কোনও ব্যক্তির নির্দিষ্ট কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস বা ধারণা, বিভ্রান্তি থাকতে পারে, হ্যালুসিনেশন হয়, যার সাথে বাস্তবতার কোনও সম্পর্ক নেই। যেমন- এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বিশ্বাস করতে পারে যে, কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর লোকেরা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, কেউ তাকে বিরক্ত করছে।

২) হেবিফ্রেনিক সিজোফ্রেনিয়া : এর মূল বৈশিষ্ট্য হল, এতে আক্রান্ত রোগীরা অগোছালো চিন্তাভাবনা এবং বিশৃঙ্খল আচরণ করে। এক্ষেত্রে রোগীর সাধারণত অসংলগ্ন এবং অযৌক্তিক চিন্তাভাবনা থাকে। এটি দৈনিক ক্রিয়াকলাপ যেমন রান্না করা, খাওয়া, নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া ইত্যাদিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

৩) ক্যাটাটনিক সিজোফ্রেনিয়া : এই ধরনের সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগী শারীরিকভাবে অদ্ভুত আচরণ করতে পারে, হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর পেশি চালনার ভঙ্গি অস্বাভাবিক হ​য়, যেমন- হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ থেমে যাওয়া, নিশ্চুপ হয়ে অদ্ভুত ভাবে বসে থাকা,অকারণে মারামারি, অন্যরা যা বলছে তা বারবার বলা, ইত্যাদি।

৪) সিম্পল সিজোফ্রেনিয়া : এক্ষেত্রে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণগুলি হালকা হয় এবং উগ্রতা প্রদর্শন করে না। যেমন- দুর্বল স্বাস্থ্যবিধি এবং অন্যান্য ছোটখাটো শারীরিক ও মানসিক সমস্যা।

সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ :

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণগুলি হল হ্যালুসিনেশন, ভুল ধারণা, অবাস্তব চিন্তাভাবনা, অকারণ সন্দেহ, বিভ্রান্তি, বিড়ম্বনা ইত্যাদি।

সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত সব রোগীর লক্ষণ এক হয় না। লক্ষণগুলি রোগীর ওপর নির্ভর করে। কোনও কোনও রোগীর ক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণগুলি কয়েক মাস বা বছর ধরে ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করতে পারে বা হঠাৎ করে দেখা দিতে পারে। এই রোগের কিছু লক্ষণ হল-

ক) রোগী এমন কিছু শুনতে পায় বা দেখতে পায় যেটা বাস্তবে থাকে না

খ) কথা বলা বা লেখায় অদ্ভুত বা অযৌক্তিক ধরন, আচরণ

গ) গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে উদাসীন বোধ করা

ঘ) পড়াশুনায় বা বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে অদ্ভুত পরিবর্তন

ঙ) ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি এবং চেহারায় পরিবর্তন

চ) অযৌক্তিক, রাগ বা প্রিয়জনদের প্রতি ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া

ছ) ঘুমে ব্যাঘাত ঘটা

জ) অনুপযুক্ত বা অদ্ভুত আচরণ

এই রোগীরা সকলেই প্রায় বাস্তবজগত থেকে বিচ্ছিন্ন। কারও কারও কথাবার্তায় প্রথম থেকেই স্বাভাবিকতা ও বাস্তববিমুখীনতার পরিচয় পাওয়া যায়। হ্যালুসিনেশন এবং ডিলিউশন যাদের থাকে তাদের সাধারণ মানুষই অস্বাভাবিক এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে উন্মাদ বলে বুঝতে পারে। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগীর অসাধারণ জ্ঞান বাড়ির লোকেদের বিস্মিত করে, তাঁরা রোগীকে নিয়ে গর্বিত রোধ করেন। সিজোফ্রেনিয়ার পজিটিভ উপসর্গগুলি হল-

ডিলিউশন : এতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত ভুল ধারণা বা বিশ্বাস বহন করে, যার সাথে বাস্তবের কোনও মিল থাকে না। যেমন- কেউ তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে।

হ্যালুসিনেশন: এমন কিছু দেখা, অনুভব করা, স্বাদ গ্রহণ, শ্রবণ বা গন্ধ পাওয়া যার আসলেই বাস্তবে কোনও অস্তিত্ব নেই। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অবাস্তব জিনিস অনুভব করে।

বিশৃঙ্খল চিন্তাভাবনা এবং কথাবার্তা: এক্ষেত্রে রোগী খুব আকস্মিকভাবে একটি বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে যায়। রোগীরা বারবার কোনও কথা, শব্দ বা ছড়া পুনরাবৃত্তি করতে পারে।

বিশৃঙ্খল আচরণ: এক্ষেত্রে রোগীর মধ্যে স্বাস্থ্যকর আচরণে সমস্যা হয়। যেমন- খুব দ্রুত চিন্তাধারা বদলানো, ভুলে যাওয়া, কোনও সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির পুনরাবৃত্তি, শব্দ বা অনুভূতি ঠিক মতো বুঝতে না পারা ইত্যাদি।

সিজোফ্রেনিয়ার কারণ :

এই রোগের সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে, যে যে কারণগুলিকে এই রোগের জন্য দায়ী করা হয়, সেগুলি হল-

ক) জেনেটিক বা বংশগত এই রোগ থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও দেখা যায়। বাবা, মা-এর মধ্যে কারুর এই রোগ থাকলে সন্তানেরও হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

খ) ভাইরাস সংক্রমণ, মানসিকভাবে অত্যন্ত চাপগ্রস্থ পরিস্থিতি, ইত্যাদির কারণে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

গ) মস্তিষ্কে রাসায়নিক উপাদানের ত্রুটি এবং নিউরোকেমিক্যাল উপাদানে কোনও ঘাটতি হলে এই রোগ হয়।

ঘ) জন্মকালীন কোনও জটিলতা থাকলেও এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ঙ) গর্ভাবস্থায় কোনও মা যদি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন এই রোগ হতে পারে।

চ) কিছু উত্তেজক মাদকদ্রব্য এবং ওষুধ এই রোগের কারণ।

এই রোগের চিকিৎসা :

এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই চিকিৎসার প্রধান মাধ্যম হল অ্যান্টিসাইকোটিক ঔষুধ। এটি বিভিন্ন উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি, বিভিন্ন থেরাপি ও মনোচিকিৎসাও গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন মানসিক চিকিৎসা দ্বারা এর বিভিন্ন উপসর্গকে ভালো করা যায় এবং রোগীর সামাজিক সহায়তাও প্রয়োজন হয়।

এছাড়া, রোগীকে অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে তার মাথায় ইলেকট্রোড লাগানো হয় এবং ছোটো কারেন্টের শক দেওয়া হয়। এতেও রোগীর মানসিক অবস্থা এবং চিন্তার উন্নতি হয়।

Read more about: schizophrenia health disorder
English summary

Schizophrenia: Causes, Symptoms And Treatment

Schizophrenia is a complex and chronic mental health condition characterised by several symptoms such as delusions, hallucinations, disorganised speech or behaviour and impaired cognitive ability.
Story first published: Wednesday, October 9, 2019, 15:01 [IST]
X
Desktop Bottom Promotion