Just In
Don't Miss
করোনার শ্বাসকষ্ট থেকে বাঁচার অন্যতম উপায় হল ‘প্রন পজিশন’! দেখুন বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
কথায় আছে 'সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে, আঙুল বাঁকা করতে হয়'। তেমনই কোভিড-১৯ চিকিৎসার ক্ষেত্রেও সোজাসুজি নয়, রোগীকে উল্টোলেই হতে পারে কাজ। বুঝলেন না তো? কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের 'ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট প্রোটোকল'-এ বলা হয়েছে, করোনা রোগীর রক্তে যখন অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় তখন তাকে সরাসরি CCU -তে না পাঠিয়ে তাঁদের শ্বাসকষ্ট লাঘবের জন্য 'অ্যাওয়েক প্রন পজিশন'-এ রেখে অর্থাৎ উপুড় করে শুইয়ে অক্সিজেন দিতে হবে। এতে রোগীর ফুসফুসের চাপ কমিয়ে শরীরে তুলনামূলক বেশি পরিমাণ অক্সিজেন পাঠানো সম্ভব হবে। এতে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন রোগী।
করোনা ভাইরাস রোধে সঠিক চিকিৎসা ও ভ্যাকসিনের ধন্দে যখন মরিয়া হয়ে উঠেছে সারা বিশ্বের মানুষ ও চিকিৎসকেরা। ঠিক তখনই এই পদ্ধতি করোনা রোগীর শ্বাসকষ্টের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দিশা তৈরি করেছে। যদিও শ্বাসকষ্ট উপশমের এই নিদান সাত বছর আগেই বাতলেছিলেন একদল ফরাসি গবেষক। আজ তা হাতেনাতে ফল পাচ্ছেন আমেরিকা, ব্রিটেন, ভারতসহ বিশ্বের বহু প্রান্তের চিকিৎসকেরা।
ভাইরাসের দ্বারা যখন ফুসফুস সংক্রমিত হয় তখন নিউমোনিয়া, অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস সিন্ড্রোম এবং পালমোনারি ফাইব্রোসিস দেখা দেয়। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ফুসফুস এবং অক্সিজেন স্যাচুরেশন-এর মাত্রা কম হয়, দেখা দেয় তীব্র শ্বাসকষ্ট। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে রোগীকে উপুড় করে শুইয়ে অক্সিজেন দেওয়ার মাধ্যমে চিকিৎসা করার কথা জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে 'প্রন পজিশন', আর ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীর ক্ষেত্রে 'প্রন ভেন্টিলেশন' বলা হয়। তবে শুধু করোনা রোগীর শ্বাসকষ্টেই নয়, যাদের হাঁপানির রোগ বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর।
করোনা ভাইরাস : কোভিড-১৯ থেকে বাঁচতে ফুসফুসের যত্ন নিতে এই খাবারগুলি অবশ্যই খান
'প্রন পজিশন' করোনা রোগীর চিকিৎসায় কতটা কার্যকর?
গুরুতর অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস সিনড্রোম রোগীদের ক্ষেত্রে 'প্রন পজিশন' অত্যন্ত কার্যকরী। এর ক্ষেত্রে একটি দিনে কমপক্ষে ১২ ঘন্টা এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উপুড় অবস্থায় শরীরের যেসব জায়গায় সহজেই অক্সিজেন পৌঁছতে পারে, চিত হয়ে শুলে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর লক্ষণযুক্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির সুপারিশ করা হয় না। যদিও কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এই পদ্ধতির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন - ট্রাকিয়াল টিউবের আকস্মিক অপসারণ, মুখ ফুলে যাওয়া, বুকের নল বেঁকে যাওয়া, অতিরিক্ত লালাস্রাব, স্টম্যাক রিফ্লাক্স, ইত্যাদি।
ফরাসি গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা রোগীদের দু'ভাগে ভাগ করে অর্থাৎ এক দলকে চিত করে এবং অপর দলকে উপুড় করে শোওয়ানো হলে দেখা যায়, উপুড় করে শোওয়ানো রোগীদের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা এক লাফে ৮৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৮ শতাংশ হয়ে যায়। এই গবেষণাটি সাত বছর আগে প্রকাশিত হয় 'নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন'-এ।
৫০ বছর বয়সী একজন কোভিড-১৯ শ্বাসকষ্ট যুক্ত রোগীর উপর এই পদ্ধতির পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, রোগীটি কয়েক দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। একইভাবে এই পদ্ধতি ৪১ বছর বয়সী ১০জন রোগীর ওপর প্রয়োগ করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে ৩০ শতাংশের ডায়াবেটিস-এর মতো রোগ আগে থেকেই ছিল। তাদের ক্ষেত্রেও এই 'প্রন পজিশন' পদ্ধতির প্রয়োগে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখা দিয়েছে। এই সকল রোগীদের গড়ে পাঁচ দিনের মধ্যে সুস্থ করা সম্ভব হয়েছিল এবং পরে কোনও সমস্যাও দেখা দেয়নি।
সুতরাং, এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, 'প্রন পজিশন' প্রয়োগ পদ্ধতি কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুহার কমিয়ে দেয়। ফলে 'প্রন পজিশন' যে কোভিড যুদ্ধে গেম চেঞ্জার হয়ে উঠতে পারে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিশেষজ্ঞরা।